নাজিম আক্তার, চাঁচল: প্রার্থীদের ভিত শক্ত করতে শনিবার মালদহের চাঁচল বিধানসভার কলমবাগানে নির্বাচনী জনসভায় আসে রাজ্যের পুর নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। উপস্থিত ছিলেন চাঁচল মহকুমার চারজন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী তাজমুল হোসেন, নিহার রঞ্জন ঘোষ, আব্দুর রহিম বক্সি ও সমর মুখোপাধ্যায়। এছাড়াও ছিলেন রাজ্য সভার সাংসদ তথা মালদা জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী মৌসম নূর, মালদা জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর বাবলা সরকার, জেলা তৃণমূল সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি সহ জেলা ও ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব।
মূলত চাঁচল বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন ইংলিশ বাজারের বিদায়ী বিধায়ক নিহার রঞ্জন ঘোষ। তিনি ইংলিশ বাজারের পৌরসভা দীর্ঘদিন চালিয়েছেন। চাঁচলে পৌরসভা গঠন করতে পূর্ণ সহযোগিতায় থাকবেন, আবেগঘনিয়ে বলেন পুর নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। এমনকি তার কাছে একাধিক বার চাঁচলকে পুরসভা গঠনের জন্য আবেদন জানিয়েছেন নিহার। রাজ্যসভার সাংসদ মৌসম নূরও একথা জানিয়েছেন ফিরহাদকে। তবে এদিন চাঁচল কলমবাগানে নির্বাচনী জনসভায় চাঁচলবাসীকে জানিয়ে দিলেন,একুশের নির্বাচন ঘোষনার আগেই চাঁচলকে পৌরসভা গঠনের জন্য রাজ্যপালের অনুমোদন মিলে গেছে। নিহার রঞ্জনই এখানে পৌরসভা গঠনে সহায়তা করবেন। ভোটের দোড়গোড়ায় এমন আশ্বাসকে মানতে নারাজ বিরোধীরা। বিরোধীদের বক্তব্য, ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে ঠিক চাঁচলের কলম বাগানেই আশ্বাস দিয়ে গেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী চাঁচলকে পৌরসভা গঠন করা হবে।
চাঁচলের বিজেপি প্রার্থী দীপঙ্কর রাম কটাক্ষের সূরে বলেন, ‘আশায় বাঁচে চাষা’।
চাঁচল বিধানসভার বিদায়ী বিধায়ক তথা বর্তমান এই বিধানসভার সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত কংগ্রেসের প্রার্থী আসিফ মেহবুব কটাক্ষের ঢিল ছুড়ে দিলেন তৃণমূলকে। তিনি বলেন, চাঁচলবাসীকে আজও শুনতে হল চাঁচলে পৌরসভা হবে। যদি এখানে এসে নগর উন্নয়ন মন্ত্রী বলতেন চাঁচলকে পৌরসভা করা হয়ে গেছে তবে আরোও খুশি হতাম। বারবার ভোট আসে আর প্রতিশ্রুতি ঢিল ছুড়ে যায় চাঁচলে। এসব ভাঁওতাবাজি চাঁচলের মানুষ মানবে না। রাজ্যপালের কাছে এই কাজ আটকে ছিল না! রাজ্য সরকারের সদিচ্ছায় এই কাজ আটকে ছিল বলে দাবি করেন আসিফ মেহবুব। ২০১৬ মুখ্যমন্ত্রীও চাঁচল কলম বাগানে নির্বাচনী প্রচারে এসে বলে গেছিলেন চাঁচলকে পৌরসভা করা হবে।তবে তারা পাঁচবছরেও কেন ব্যর্থ থাকলো?সেটা সাফ বোঝা যাচ্ছে চাঁচলের মানূষকে নিয়ে খেলা করা হচ্ছে বলে দাবি আসিফের।এক দশক ধরে দাবি জানালেও পুরসভা হয়নি চাঁচল।পশ্চিমবঙ্গের মহকুমা চাঁচল এখনও গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনেই রয়েছে।এটা রাজ্যের কোনো জায়গাই নেই বলে দাবি সংযুক্ত মোর্চা প্রার্থী আসিফ মেহবুবের।
উল্লেখ্য,২০০১ সালের ১ এপ্রিল চাঁচল মহকুমা গঠনের পর থেকেই চাঁচলে পুরসভার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। প্রশাসনিক সূত্রে খবর,পুরসভা করতে হলে ওই এলাকায় কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষের বসবাস থাকা দরকার।সেখানে ১০টি মৌজা নিয়ে প্রস্তাবিত চাঁচল পুরসভায় সেই সংখ্যা এখন কয়েক গুণ বেড়েছে।স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালের ১৬ জুলাই রাজ্যে ১৩টি পুরসভা গঠনের কথা ঘোষণা করেছিল তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার। তার মধ্যে চাঁচলও ছিল। রাজ্যে পালাবদলের পরে ২০১৪ সালের ১১ জুন তৃণমূল সরকারের তরফেও চাঁচলকে পুরসভা বলে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এখনও তা চালু হয়নি।বিরোধী পক্ষের অভিযোগ,চাঁচল,মালতীপুর,হরিশ্চন্দ্রপুর বিধানসভায় তৃণমূলের কেউ জয়ী হতে পারছেনা।তাই রাজনৈতিক কারণেই শাসকদল চাঁচল পুরসভা গঠনে পদক্ষেপ গ্রহন করছে না।আর ভোট আসলেই একের পর এক প্রতিশ্রুতি ঢিল ছুড়ে যাচ্ছে চাঁচলের মাটিতে। একুশের বিধানসভা ভোটের আগে শনিবার চাঁচলের মাটিতে পা রেখে পৌর নগরোন্নয়ন মন্ত্রী বলে গেলেশ চাঁচলকে পৌরসভা গঠনের জন্য রাজ্যপালের অনুমোদন মিলেছে।তবে কি এবার চাঁচল পুরসভা পাচ্ছে এখন সেটাই দেখার অপেক্ষায় গোটা চাঁচল বাসী।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct