সুলেখা নাজনীন: রাজ্য রাজনীতিতে চমক এনে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে আপতত ২৫টিরও বেশি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাম কংগ্রেস জোট সঙ্গী আইএসএফ। ফুরফুরার তরুণ পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী যখন নতুন দল গড়ার কথা ঘোষণা করেন তখন নানা সমালোচনা হয়। এক শ্রেণির মানুষ ও কিছু রাজনৈতিক দলের নেতারা আব্বাস সিদ্দিকীর দলকে মুসলিম তকমা দিয়ে কোণঠাসা করার চেষ্টা করে। কিন্তু সেসবের উত্তরে আব্বাস সিদ্দিকী সাফ জানিয়ে দেন তাদের দল মুসলিম ভিত্তিক নয়। দলিত, আদিবাসী, মুসলিম মূলত পিছিয়ে পড়া জনজাতিদের নিয়েই গঠিত। তাদের সেই ধর্মনিরপেক্ষ মনোভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বিধানসভা নির্বাচনে আইএসএফের প্রার্থী তালিকাকে কেন্দ্র করে। অনেক জায়গায় দেখা গেছে শাসক দল কিংবা বিজেপি যেখানে মুসলিম প্রার্থী দিয়েছে যেসখানে ধর্ম বিচার না করে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রার্থী দিয়েছে আইএসএফ। ফলে, আইএসএফকে এখন আর মুসলিমদের দল বলাটা মুশকিল হয়ে পড়বে। আর আপাতত যা প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে আইএসএফ তার মধ্যে অনেক উচ্চ শিক্ষিত রয়েছেন। চিকিৎসক থেকে পিএইচডি কেউই বাদ যাননি। এর মধ্যে একজন প্রার্থীকে নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। তিনি হলেন নদিয়ার চাপড়া বিধানসভা কেন্দ্রে আইএসএফ প্রার্থী কাঞ্চন মৈত্র। এই কাঞ্চন মৈত্র ২০০৬ সালে শান্তিপুর কেন্দ্র থেকে বিজেপির হয়ে ভোটে লড়েছিলেন। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। কারণ, কাঞ্চন মৈত্র কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৬ সালে এমএ পাশ করেন।
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৯ সালে বি.টি পাশ করেন। রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৪ সালে পিএইচডি পাশ করেন। আইএসএফ অবশ্য কোনও ধর্ম বিচার না করে তাকে প্রার্থী করেছে। চাপড়ায় গত দুবারের বিধায়ক তৃণমূলের রুকবানুর রহমান। তার বিরুদ্ধে সিপিএম গতবার এক মুসলিম প্রার্থী শামসুল ইসলাম মোল্লাকে প্রার্থী করেছিল। এবার এই আসনটি আইএসএফকে ছেড়ে দেওয়ায় কাঞ্চন মৈত্র স্থান পেয়েছেন তাদের প্রার্থী তালিকায়।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য সূত্র জানাচ্ছে, ২০০৬ সালে নদিয়ার শান্তিপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপির হয়ে লড়েছিলেন। ওই নির্বাচনে কংগ্রেসের অজয় দে জয়ী হয়েছিলেন। ভোট পেয়েছিলেন প্রায় ৯০ হাজার ভোট। তবে, বিজেপির হয়ে লড়ে মাত্র ৪০৩৮টি ভোট পেয়েছিলেন কাঞ্চন মৈত্র। তবে, রাজনীতির খেলায় তিনি এখন ‘মুসলিম নেতৃত্বাধীন’ আইএসএফ-এর প্রার্থী। এ প্রসঙ্গে কাঞ্চন মৈত্রর প্রশংসা করতে হয় এ কারণে যে, যখন বিজেপি পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীর দল আইএসএফকে মুসলিমদের দল বরছে, তখন প্রাক্তন বিজেপির বিধানসভা পদপ্রার্থী উদার মানসিকতার পরিচয় দিয়ে আইএসএফ-এর প্রার্থী হতে কুণ্ঠাবোধ করেননি। এই প্রার্থী নির্বাচন বিষয়ে আইএসএফ-এর চেয়ারম্যান পীরজাদা নওশাদ সিদ্দিকীকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন না ধরায় তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এমনকী কাঞ্চন মৈত্রর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে, যাই হোক বর্মান দলবদলের খেলায় বিভিন্ন দল থেকে যখন বিজেপিতে যাওয়ার ‘হিড়িক’ তখন বিজেপির প্রাক্তন বিধানসভা প্রার্থীকে আইএএসএফ-এর প্রার্থী করাটা নিঃসন্দেহে আব্বাস সিদ্দিকীদের বিশেষ ক্যারিসমা তাতে সন্দেহ নেই।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct