আপনজন ডেস্ক: কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ কিছুদিন আগে জঙ্গি সংগঠন আল কায়দার সঙ্গে সংপৃক্ত থাকার অবিযোগে মুর্শিদাবাদ ও কেরল থেকে মুর্শিদাবাদেরই ৬জন বাসিন্দাকে গ্রেফতার করে। এরা এখন এনআইয়ের হেফাজতে রয়েছে।
এনআইএ-র গ্রেফতার করার খবর শুধু বাংলা সংবাদমাধ্যম নয, সর্বভারতীয় বিভিন্ন মিডিয়াতেও ফলাও করে ছাপা হয়েছে। যদিও গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের তরফে দাবি করা হয়, তারা নির্দোষ। তবে, তাদেরকে গ্রেফতারের পর যেসব খবর সামনে উঠে এসেছে তাতে বেশ কিছু চমকপ্রদ বিষয় রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল গ্রেফতারকৃত এক ব্যক্তির বাড়িতে থাকা ‘সুড়ঙ্গ’।
বাড়ির মধ্যে ‘সুড়ঙ্গ’ থাকা নিয়ে মিডিয়া তা ব্যাপকভাবে প্রচার করে। জঙ্গি সন্দেহে গ্রামের ৬জন ব্যক্তিকে গ্রেফতারের পর রাজ্যের মানবাধিকার সংগঠনগুলি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি বা এপিডিআর তাদের একটি অনুসন্ধিৎসু দল বা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম পাঠায় মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন গ্রামে যেখান থেকে গ্রেফতার করে এনআইএ।
সম্প্রতি এপিডিঅর-এর সেই ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমের রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বলে জানা গেছে। এপিডিআর-এর সেই ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্টের কথা উল্লেখ করে দিল্লির ‘ন্যাশনাল হেরাল্ড’-এর নিউজ পোর্টাল ন্যাশনাল হেরাল্ড ইন্ডিয়া ডট ইন ওয়েবসাইটে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ন্যাশনাল হেরাল্ডের সাংবাদিক রোসামা টমাস এপিডিআর-এর ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্ট উল্লেখ করে সংবাদ প্রতিবেদনের শিরোনাম করেছেন ‘Tunnel’ NIA discovered in Murshidabad was an under-construction toilet: APDR fact-finding team.
ওই প্রতিবেদনে রোসামা টমাস লিখেছেন, এপিডিআর-এর ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্ট বলছে, মুর্শিদাবাদে এনআইয়ের হাতে দৃত ব্যক্তির বাড়ির মধ্যে কোনও সুড়ঙ্গ ছিল না, সেটি ছিল নিছক একটি নির্মীয়মাণ শৌচাগার। টমাসা আরও লিখেছেন, ’২৪ সেপ্টেম্বর অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য প্রটেকশন অফ ডেমোক্রেটিক রাইটস বা এপিডিঅঅর-এর একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং দল পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ থেকে দৃত ৬ ব্যক্তির বাড়ি পরিদর্শন করে। তাদেরকে কিছুদিন আগে এনআইএ জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগ থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার করার সময় তাদের কাছে কোনও সাধারণ গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল না। এমনকি তাদের পোশাকেও কোনও নাম লেখা ছিল না যা থেকে তাদের চিহ্বিত করা যা। তারা এখন কোথায় আছে তা অজানা।’
সাংবাদিক টমাস আরও লিখেছেন, ‘মিডিয়ায় রিপোর্ট বেরিয়েছিল একজন ধৃতের বাড়িতে ‘গোপন সুড়ঙ্গ’ ছিল। কিন্তু ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং দল দেখেছে, যাকে ধরা হয়েছে সে কোনও প্লাম্বার ছিল না, কিন্তু বাড়িতে টয়লেট করার জন্য নির্মাণ কাজ চালাচ্ছিল। ‘সুড়ঙ্গ’টা ছিল চেম্বার যা টয়লেটের বর্জ্য ফেলার জন্য খোঁড়া হয়েছিল।’
সাংবাদিক টমাস জানিয়েছেন, “এপিডিআর-এর ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং দলের ছাত্র সংগঠনের নেতারা চাড়াও বিণ্নি বাম দলের নেতা ও একজন সাংবাদিক ছিলেন্। যদিও মেইন স্ট্রিম মিডিয়ায় এদের গ্রেফতার নিয়ে মিথ্যা রিপোর্ট করা হয় যারা সবাই মুসলিম। এদের অনেকেই খুবই দরিদ্র। এদের মধ্যে একজন আবু সুফিয়ান যে পেশায় দর্জি। তার বাবা শিক্ষকতা করেন। এনআইএ দল দাবি করে তার বাড়িতে ‘সুড়ঙ্গ’ ছিল। কিন্তু ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং দল দেখেছে সুফিয়ান টয়লেট নির্মাণ করছিল, তার জন্য গর্ত খুঁড়ছিল। এরজন্য কোনও প্লাম্বারকে সে ধরেনি, নিজেই টয়লে নির্মাণের কাজ করছিল।”
ফ্যাক্ট ফাইন্ডং দলের রিপোর্টের কথা উল্লেখ করে সাংবাদিক টমাস আরও লেখেন, ‘গ্রেফতার করা ব্যক্তিদের বা তার পরিবারের কাইকে সময় দেওয়া হয়নি কজাগে সই করার করানোর আগে। এমনকি গ্রেফতারের এক সপ্তাহ পরও তাদের পরিবার জানতে পারেনি কোথায় ধৃতদের রাখা হয়েছে। স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলিও চুপ হয়ে রয়েছে।’
টমাস লিখেছেন, ‘এপিডিআর-এর ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং দল গ্রেফতারকৃতদের সম্বন্ধে এমন কিছু তথ্য পায়নি যাতে ইঙ্গিত মেলে যে তারা কোনও জঙ্গি সংগঠন বা ধ্বংসাত্মক কাজের সঙ্গে যুক্ত।’
ন্যাশনাল হেরাল্ড-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মূল রিপোর্ট দেখতে লিঙ্কে ক্লিক করুন
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct