আপনজন ডেস্ক: মাঠে দর্শক টানতে ও টেস্ট ম্যাচগুলোকে আরও অর্থবহ করে তুলতে আইসিসি গত কয়েক বছরে যেসব উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ নিয়েছে, সেসবের একটি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। মহামারি করোনা বিশাল এক ধাক্কা হয়ে এলেও ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে হওয়া টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম দুটি চক্র সফলভাবেই আয়োজন করেছে আইসিসি। ২০২৩ থেকে ২০২৫ চক্রের তৃতীয় আসরও ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে।আইসিসির এই সর্বশেষ সংযোজন কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, সেটা প্রথম দুটি চক্রের ফাইনালে জায়গা করে নেওয়ার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখলেই বোঝা যায়। এবারও টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জমে ওঠার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রথম দুই চক্রের রানার্সআপ ভারত আজ নিউজিল্যান্ডকে টপকে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠে গেছে।
নাথান লায়নের ঘূর্ণিতে আজ ওয়েলিংটন টেস্টের চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনেই গুটিয়ে গেছে নিউজিল্যান্ড, হেরেছে ১৭২ রানে। দারুণ জয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আওতাধীন এ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়া। তাতেই ভারত উঠে গেছে পয়েন্ট তালিকার চূড়ায়। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, অস্ট্রেলিয়ার জয়ে ভারত কীভাবে শীর্ষে উঠল? ২০১৯ সাল থেকেই যারা বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ অনুসরণ করছেন, তাদের এত দিনে নিশ্চয় দলগুলোর অবস্থান নির্ণয়ের পদ্ধতি জেনে যাওয়ার কথা। তারপরও মনে করিয়ে দিতেই হচ্ছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে দলগুলোর অবস্থান পয়েন্ট দিয়ে নয়; পয়েন্টের শতকরা হার দিয়ে নির্ধারিত হয়। কারণ, ৯ দলের এই প্রতিযোগিতায় সবাই সমান ম্যাচ খেলার সুযোগ পায় না। যে দল বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পায়, সেই দলেরই বেশি জয়ের সম্ভাবনা থাকে। আর বেশি ম্যাচ জিতলে স্বাভাবিকভাবে পয়েন্টও বাড়বে। বিপরীতে যে দল কম ম্যাচ খেলার সুযোগ পায়, সেই দল সব ম্যাচ জিতলেও বেশি ম্যাচ খেলা দলের পয়েন্ট টপকানোর সম্ভাবনা কম থাকে। তাই দলগুলোর অবস্থান নির্ধারিত হয় পয়েন্টের শতকরা হার দিয়ে। এই হিসাবেই নিউজিল্যান্ডকে টপকে শীর্ষে উঠে গেছে ভারত। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নিয়ম অনুযায়ী, একেকটি দল প্রতিটি জয়ের জন্য ১২ পয়েন্ট, টাই করলে ৬ পয়েন্ট ও ড্র করলে ৪ পয়েন্ট করে পায়। হারলে কোনো পয়েন্ট যোগ হয় না। আর মন্থর ওভার রেটের শাস্তি হিসেবে পয়েন্ট কেটে নেওয়া হয়। সেই হিসাবে নিউজিল্যান্ড আজ হেরে যাওয়ায় তাদের পয়েন্টের শতকরা হার কমে ৬০.০০ হয়েছে। ঘরের মাঠে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জিতে নেওয়া ভারতের শতকরা পয়েন্ট আগের সেই ৬৪.৫৮-ই আছে। আজকের জয়ে অস্ট্রেলিয়ার শতকরা পয়েন্ট বেড়ে হয়েছে ৫৯.০৯। নিউজিল্যান্ডের চেয়ে ভগ্নাংশের ব্যবধানে পিছিয়ে থাকা প্যাট কামিন্সের দল তিনেই রয়ে গেছে। শতকরা ৫০.০০ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশ আছে চার নম্বরে। ২০২৩-২৫ চক্রের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ভারত এখন পর্যন্ত ৮ ম্যাচ খেলে ৫টিতে জিতেছে, হেরেছে ২টি, ড্র করেছে ১টি। রোহিত শর্মার দল ৫ জয়ে পেয়েছে ৬০ পয়েন্ট, ১ ড্রয়ে ৪ পয়েন্ট। মোট অর্জন ৬৪ পয়েন্ট। কিন্তু গত ডিসেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেঞ্চুরিয়ন টেস্টে মন্থর ওভার রেটের কারণে তাদের ২ পয়েন্ট কেটে নিয়েছে আইসিসি। তাই সামগ্রিকভাবে ভারতের পয়েন্ট ৬২। দলটি ৮ ম্যাচের সব কটি জিতলে পয়েন্ট হতো ৯৬। অর্থাৎ, ৯৬ এখানে পরীক্ষার পূর্ণমানের মতো। সম্ভাব্য ৯৬ পয়েন্টের মধ্যে রোহিত-কোহলিরা পেয়েছেন ৬২ পয়েন্ট। এটারই শতকরা হার ৬৪.৫৮। একইভাবে আজ ওয়েলিংটন টেস্ট শেষে নিউজিল্যান্ড ৫ ম্যাচে ৩ জয়ে ৩৬ পয়েন্টেই আটকে আছে। কিউইরা ৫ ম্যাচের সব কটি জিতলে ৬০ পয়েন্ট হতো। সম্ভাব্য ৬০ পয়েন্টের মধ্যে অর্জিত ৩৬ পয়েন্টের শতকরা হার ৬০.০০ হওয়ায় টিম সাউদির দল ভারতের পেছনে পড়ে গেছে। আজকের ম্যাচের আগে ৪ টেস্টের ৩টি জেতায় তাদের শতকরা পয়েন্ট ছিল ৭৫। এবারের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে মন্থর ওভার রেটের কারণে এখন পর্যন্ত ৪ দলের পয়েন্ট কেটে নিয়েছে আইসিসি। সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী ইংল্যান্ড। বাজবল দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা দলটি গত বছর অ্যাশেজ সিরিজের ৫ ম্যাচের ৪টিতেই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট ওভার শেষ করতে ব্যর্থ হয়েছে। শাস্তিস্বরূপ ইংলিশদের ১৯ পয়েন্ট কেটে নিয়েছে আইসিসি। তাই বেন স্টোকসের দল পড়ে আছে পয়েন্ট তালিকার আট নম্বরে। ২ ম্যাচের দুটিতেই হেরে এখনো কোনো পয়েন্ট না পাওয়া শ্রীলঙ্কা আছে তলানিতে। প্রথম দুই চক্রের মতো এবারের ফাইনালও হবে ইংল্যান্ডে। পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ দুই দল ২০২৫ সালের জুনে লর্ডসে টেস্টের রাজদণ্ড পেতে লড়বে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct