আপনজন ডেস্ক: লোকসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধী ব্লক ইন্ডিয়ার মতবিরোধের মধ্যেই রবিবার কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী দেশে বিদ্যমান অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য বাংলা ও বাঙালিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। রবিবার বিকেলে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলা থেকে শুরু হওয়া ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রার অঙ্গ হিসাবে রবিবার সন্ধ্যায় শিলিগুড়ির এয়ারভিউ জংশনে একটি সংক্ষিপ্ত জনসভায় কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধি বলেন, ‘বাংলা দেশকে পথ দেখাবে। বাংলায় যে ভালোবাসা পেয়েছি, তা আর কোথাও পাইনি।পশ্চিমবঙ্গে উষ্ণ অভ্যর্থনার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে গান্ধী মন্তব্য করেছিলেন, বাংলার একটি বিশেষ স্থান রয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রামে মতাদর্শগত লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিল বাংলা। বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই, ঐক্য গড়ে তোলা এবং ঘৃণা দমনের জন্য সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া বাংলা ও বাঙালির কর্তব্য। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আপনি যদি এই সুযোগে উঠে না দাঁড়ান তবে জনগণ আপনাকে কখনই ক্ষমা করবে না। এটা কোনো একক ব্যক্তির বিষয় নয়; এই লড়াইয়ে বাংলা পথ দেখাচ্ছে এবং নেতৃত্ব দিচ্ছে।
রাহুল গান্ধি আরও বলেন, যুবকরা কাজ চায়, কিন্তু তাদের স্বপ্ন পূরণ হয় না। তিনি বলেন, ভালো কাজ করলে আপনারা উপেক্ষিত হবেন। তবে দালাল হয়ে যান, তাহলেই সম্মান পাবেন। এ কারণে দেশের যুব সমাজের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এর আগে রাহুলকে এয়ারভিউ মোড়ে (জংশন) একটি জনসভায় ভাষণ দেওয়ার অনুমতি দেয়নি স্থানীয় প্রশাসন, কারণ রবিবার পুলিশি পরীক্ষা নির্ধারিত ছিল এবং তাই নিরাপত্তার সমস্যা হতে পারে। একই কারণে দুপুর ২টোর আগে শিলিগুড়িতে ঢুকতে নিষেধ করা হয় তাঁকে। যেহেতু জংশনে জমায়েতের কোনও অনুমতি দেওয়া হয়নি, তাই কংগ্রেস নেতা খোলা গাড়ি থেকে জনতার উদ্দেশে ভাষণ দেন। জাপানে একটি গাড়ি কারখানার মালিক হয়েছেন এক মেকানিক। কিন্তু ভারতে সেই পরিবেশ নেই। ভারতে একজন মেকানিক যিনি গাড়ি কারখানার মালিক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তাকে উপহাস করা হয়। যেদিন একজন কৃষক বা গ্যারেজ কর্মীকেও সম্মান করা হবে, সেদিন দেশের সবাই চাকরি পাবে।ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা আজ বিকেলে জলপাইগুড়ি থেকে থানা মোড়, উড়ালপুল এবং এয়ারভিউ জংশন হয়ে শিলিগুড়িতে প্রবেশ করে। কংগ্রেস সাংসদকে ঘনিষ্ঠভাবে দেখার জন্য বিশাল জনতা জড়ো হয়েছিল কারণ সমর্থকদের দলীয় পতাকা নাড়াতে এবং স্লোগান দিতে দেখা গেছে। আবার কেউ কেউ নেতার হাতে উপহার তুলে দেন, যা তিনি গ্রহণ করেন।শিলিগুড়ির জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে রাহুল কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, গরিব ও যুবকদের চেয়ে কর্পোরেট স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে ঘৃণা ও হিংসা ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার সশস্ত্র বাহিনীর জন্য স্বল্পমেয়াদী নিয়োগ প্রকল্প অগ্নিবীর (অগ্নিপথ) প্রকল্প চালু করে যে যুবকদের সশস্ত্র বাহিনীতে যোগ দিতে চেয়েছিল তাদের উপহাস করেছে। দেশজুড়ে ঘৃণা ও হিংসা ছড়ানো হচ্ছে। এতে কোনো লাভ হবে না। ঘৃণা ছড়ানোর পরিবর্তে, আমাদের যুবকদের জন্য ভালবাসা এবং ন্যায়বিচার ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকার শুধুমাত্র বড় কর্পোরেশনের জন্য কাজ করছে, গরিব ও যুবকদের জন্য নয়।বিজেপি ও আরএসএসের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও হিংসা ছড়ানোর অভিযোগ তুলে রাহুল বলেন, “যাত্রার সঙ্গে ‘ন্যায়’ শব্দটি যুক্ত করা হয়েছে, কারণ দেশজুড়ে অবিচার চলছে। আমরা এমন এক ভারত চাই, যেখানে দরিদ্রতম ব্যক্তিও বড় স্বপ্ন দেখতে পারবেন এবং তাঁদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারবেন। আমরা এমন একটি ভারত চাই যেখানে কঠোর পরিশ্রমকে সম্মান জানানো হবে। কিন্তু আজ ভারতীয় যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।২০ বা ২১ মার্চ মুম্বইয়ে শেষ হওয়ার আগে এই যাত্রা ৬৭ দিনে ৬,৭১৩ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে ১৫টি রাজ্যের ১১০টি জেলা অতিক্রম করবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct