আপনজন ডেস্ক: সংসদের দুই কক্ষ থেকে গণহারে বিরোধীদের বহিষ্কারের ধারা মঙ্গলবারও অব্যাহত ছিল। গত সপ্তাহে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিল ১৪ বিরোধী সদস্যকে। গতকাল সোমবার সংখ্যাটা রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৭৮–এ। মঙ্গলবার লোকসভা ও রাজ্যসভা থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে আরও ৪৯ সদস্যকে। সব মিলিয়ে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে ১৪১ বিরোধী সদস্যকে দুই কক্ষ থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হলো।বিরোধীদের অভিযোগ, সরকার সংসদকে এভাবে বিরোধীমুক্ত করে তুলতে চাইছে, যাতে বিতর্কিত সব বিল বিনা বাধায় ও বিনা আলোচনায় পাস করানো যায়।
স্বাধীন ভারতের সংসদীয় ইতিহাসে অতীতে কখনো এত বিপুল সংখ্যক বিরোধী সদস্যদের বহিষ্কার করা হয়নি। ১৯৮৯ সালের ১৫ মার্চ লোকসভায় ঠক্কর কমিশনের প্রতিবেদন পেশ করার দাবিতে বিরোধীরা সরব হলে লোকসভা থেকে ৬৩ সদস্যকে তিন দিনের জন্য সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিল। সেই সময় রাজীব গান্ধী ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ঠক্কর কমিশন গঠিত হয়েছিল ইন্দিরা গান্ধীর হত্যা তদন্তের জন্য। বিরোধীদের ধারণা ছিল, কমিশনের প্রতিবেদনে ইন্দিরার সহকারী রাজেন্দ্র কুমার ধাওয়ানের যোগসাজশের উল্লেখ আছে। তাঁরা দাবি জানাচ্ছিলেন, সভায় সেই প্রতিবেদন পেশ করা হোক। এযাবৎ সেটাই ছিল সবচেয়ে বড় নিদর্শন। কিন্তু ১৩ ডিসেম্বর সংসদে হামলাকে কেন্দ্র করে এবার যা ঘটছে তা অভূতপূর্ব ও অদৃশ্যপূর্ব। সেই হামলা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কিংবা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আজ পর্যন্ত সংসদের কোনো কক্ষে বিবৃতি দেননি। বিরোধীরা দাবি জানিয়ে আসছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সভায় আসুন। বিবৃতি দিন। হামলার দায় গ্রহণ করুন। অথচ লোকসভার স্পিকার কিংবা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান কেউই সেই দাবিকে আমল দিচ্ছেন না। বিরোধীদের আরও ক্ষোভ এই কারণে, সংসদ চলা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওই ঘটনা নিয়ে সংবাদপত্রে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন। কিন্তু সংসদে কিছু বলছেন না। এর মধ্য দিয়ে তাঁরা সংসদের গরিমায় আঘাত করছেন। সম্মানহানি করছেন। সংসদ সদস্যদের অধিকারও হরণ করছেন। ক্ষুব্ধ সংসদ সদস্যদের প্রশমিত করে সভা চালাতে ব্যর্থ দুই সভাধ্যক্ষ দফায় দফায় বিরোধীদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেন। বহিষ্কারের প্রতিবাদে বিরোধী দলের সাংসদরা সংসদের বাইরে বিক্ষোভ দেখান এদিনও।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct