আপনজন ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার বিজেপিকে দেশের সবচেয়ে বড় পকেটমার এবং নির্বাচনের আগে ভোটারদের ধোঁকা দেওয়ার জন্য সমালোচনা করেছেন। উত্তরবঙ্গের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মমতা বলেন, কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি বিজেপির জন্য ‘রাজনৈতিক খাবার’ পেতে বারবার রাজ্যে আসে। তিনি বলেন, “তারা (বিজেপি) দেশের সবচেয়ে বড় পকেটমার এবং এর কারণে জনগণ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা ট্রান্সফার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাঁরা, তারপর নোট বাতিল, তারপর মহামারী চলাকালীন বিনামূল্যে রেশন দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া। তারা নির্বাচনের আগে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষকে ধোঁকা দেয়। তিনি বলেন, আমরা (তৃণমূল) তাদের থেকে আলাদা।
বিপুল সংখ্যক ভুয়ো জব কার্ড মুছে ফেলার পরেও উত্তরপ্রদেশ তহবিল পাচ্ছে উল্লেখ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিস্ময় প্রকাশ করেন, কেন্দ্র কেন পশ্চিমবঙ্গকে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের বকেয়া অর্থ বিতরণ করছে না।
পশ্চিমবঙ্গের পাওনা আদায়ের জন্য নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করার জন্য গিরিরাজ সিংয়ের পরামর্শের বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি ইতিমধ্যে তিনবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন এবং আরেকটি সাক্ষাতের জন্য সময় চেয়েছেন। অন্যদিকে, সংসদের বাইরে গিরিরাজ সিংকে ইন্ডিয়া জোটের বৈঠক নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী উৎসব করছেন, ঠুমকা লাগাচ্ছেন, এটা উচিত নয়।। ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের অংশ হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাচছেন বলে উল্লেখ করা হলে তিনি আরও বলেন, ফিল্ম উৎসবে নাচের কি প্রয়োজন আছে?
কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের (কেআইএফএফ) ২৯তম আসরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাচ নিয়ে মন্তব্য করায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিংয়ের তীব্র নিন্দা করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতারা। কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের অনুষ্ঠানে সালমান খান, সোনাক্ষী সিনহা, মহেশ ভাট, অনিল কাপুর, শত্রুঘ্ন সিনহা সহ আরও অনেকে মঞ্চে নেচেছিলেন। তাতে সঙ্গত দিয়েছিলেন মমতাও।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করে তৃণমূল কংগ্রেস বলেছে, “এটা স্পষ্ট যে বিজেপি নেতাদের পক্ষে ক্ষমতায় থাকা কোনও মহিলাকে তাদের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করা অবিশ্বাস্যভাবে কঠিন। লিঙ্গ বৈষম্যে ডুবে থাকা তাদের প্রাচীন মানসিকতা স্পষ্টভাবে প্রদর্শিত হচ্ছে।
গিরিরাজ সিংয়ের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র বলেন, ‘মিস্টার সিং, আমি কি শুধু আপনাকে বলতে পারি, বাংলায় আমাদের উৎসব পালনের কারণ হল, আপনি এবং বিজেপি প্রতিদিন যে নারীবিদ্বেষ ও পিতৃতন্ত্র চর্চা করেন তা আমাদের সহ্য করতে হয় না। গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েতি রাজ মন্ত্রীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, এমজিএনআরইজিএ প্রকল্প এবং প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার আওতায় তাঁর মন্ত্রক যে অর্থ বকেয়া রয়েছে, তা আটকে রাখাই আসলে ‘ঠুমকা’। আপনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শেখাবেন, কী উচিত আর কী উচিত নয়?
তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় মুখপাত্র সুস্মিতা দেব বলেন, গিরিরাজ সিংয়ের মন্তব্য বিজেপির লজ্জাজনক ও নারীবিদ্বেষী মানসিকতার প্রতিফলন।
তিরাজ্যের মন্ত্রী ও তৃণমূল নেতা শশী পাঁজা বলেছেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মন্তব্যে দলের নেতারা ‘ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন’। ডা. শশী পাঁজা বলেন, আমরা এমন নির্বাচিত বিজেপি সাংসদদের চিনি, যীদের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে। সেই অভিযোগ তুলেছেন দেশের অলিম্পিয়ানরা। তাঁরা কি বিচার পেলেন? ২০২২ সালের ১৫ অগাস্ট সকালে তারা নারীর ক্ষমতায়নের জয়গান গাইছিল। আর সেই একই দিন সন্ধ্যায় বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্ত করে তারা নারীর ক্ষমতা কেড়ে নিল।
তিনি বলেন, ‘আমরা বিজেপিকে জিজ্ঞেস করব, একজন নারীকে অসম্মান করার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে? গিরিরাজ সিং একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যিনি দায়িত্বের পদে অধিষ্ঠিত। তিনি যেভাবে এই ধরনের ঠুমকার কথা বলেছেন, এমনকি যদি তিনি ক্ষমাও চান, তবে এটি খুব কম।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার ফিল্ম উৎসবের মঞ্চে, অরিজিৎ সিংয়ের কণ্ঠে উৎসবের থিম সঙ্গীত বেজে উঠতেই সলমন খান, মহেশ ভাট, সোনাক্ষী সিনহারা নাচতে শুরু করেছিলেন। তাদের সঙ্গে পা মেলান খোদ মুখ্যমন্ত্রীও। সেলিব্রিটিদের সঙ্গে নাচের বিষয়ে এদিন উত্তরবঙ্গে যাওয়ার আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তিনি নাচতে জানেন না। অনুষ্ঠানের সময় একটু পা মিলিয়েছি মাত্র। তিনি বলেন, আমি নাচতে জানি না, আমি আদিবাসীদের সমর্থন করার জন্য তাদের সঙ্গে নাচি। তারা (বলিউড সেলিব্রিটিরা) আমার হাত টেনে আমাকে তাদের সঙ্গে যোগ দিতে বলেছিলেন। তাই আমি নাচতে বাধ্য হয়েছিলাম। আমরা বলিউডকে সম্মান করি বলেই পা মিলিয়েছিলাম। অন্য কিছু নয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct