ফারুক আহমেদ, কলকাতা: অবিভক্ত বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা ফজলুল হকের ১৫০ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এক মনোজ্ঞ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হল বৃহস্পতিবার। কলকাতার কলেজ স্ট্রিটস্থিত মহাবোধি সোসাইটি হলে আয়োজিত ওই সেমিনারটির আয়োজন করেছিল স্বেচ্ছাসেবী ও সাংস্কৃতিক সংস্থা ভূমিপুত্র উন্নয়ন মোর্চা অফ ইন্ডিয়া বা ‘ভূমি’। বক্তা হিসেবে বিশিষ্টদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইতিহাসবেত্তা খাজিম আহমেদ, বর্তমান সাংসদ ও প্রাক্তন আইএএস এবং প্রসার ভারতীর প্রাক্তন অধিকর্তা জহর সরকার, রাজ্যসভার প্রাক্তন সদস্য তথা পুবের কলম পত্রিকার সম্পাদক আহমেদ হাসান ইমরান, সিটি কলেজের অধ্যাপক তথা পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস সংসদের সুগ্ম সম্পাদক মহিতোষ গায়েন, সমাজসেবী মুন্সি আবুল কাশেম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে ২৪ খানা মননশীল প্রবন্ধের সংকলন রূপে একটি ‘শেরে বাংলা স্মরণিকা’ প্রকাশিত হয়। শেরে বাংলা সম্মাননা প্রদান করা হয় সাংসদ জহর সরকার ও শিক্ষাবিদ-আইনজীবী মুন্সী আবুল কাশেমকে। অনুষ্ঠানে শেরে বাংলাকে নিয়ে মুজিবর রহমান নির্মিত একটি তথ্যচিত্রও প্রদর্শিত হয়। এদিনের সেমিনারের প্রারম্ভিক ভাষণে ইতিহাস বেত্তা খাজিম আহমেদ অবিভক্ত বাংলায় জাতি ধর্ম নির্বিশেষে কৃষক আন্দোলনের পথিকৃৎ হিসেবে শের-এ বাংলা এ কে ফজলুল হকের জীবনের উপর আলোকপাত করেন। খাজিম আহমেদ বলেন, জমির উপর কৃষকদের অধিকার সম্পর্কে বাংলার মানুষের কাছে এ কে ফজলুল হক যে বার্তা তুলে ধরেছিলেন, আজকের কৃষকদের প্রজাসত্ত্ব তারই ফলশ্রুতি। তিনি বলেন, এক ফজলুল হন কোনওবাবেই জিন্নার প্রতি অনুরক্ত ছিলেন না। নিজে ্তউচ্চ শিক্ষিতই শুধু নয়, কলকাতা পুরসভার মেয়রও ছিলেন। কিন্তু তার নজর ছিল কৃষকদের অধিকার আদায়ের দিকে। সেই সঙ্গে কৃষকদের কৃষিকাজ করতে গিয়ে যে ঋণের জালে পড়তে হত তার জন্য একে ফজলুল হক প্রথম কৃষকদের ঋণ মকুবের দাবি েতালেন। রাজ্যের বাম শাসনে কৃষকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন থেকে শুরু করে বর্তমান রাজ্য সরকারে কৃষকদের ঋণ মকুবের যে আয়োজন তার পথ দেখিয়েছেন একে ফজলুল হক। এ প্রসঙ্গে খাজিম আহমেদ বলেন, পূর্ব বাঙলা থেকে ফিরে কলকাতায় এসে মূলত বাঙালি সমাজের অন্যতম নির্ভর কৃষিকে বাঁচাতে একে ফজলুল হক কৃষকদের স্বার্থে আণ্দোরনে নামায় তার পদের খেসারত দিতে হযেছিল। পাক প্রধানমন্ত্রী আইয়ুব খান ঢাকায় পৌঁছে তার পদ কেড়ে নিয়েছিলেন। তাতে তাকে দমানো যায়নি। তার কৃষক প্রজা কমিটি তৎকালীন বাঙলার মধ্যবিত্ত সমাজকে উত্তরণের পথ দেখিয়েছে। শের এ বাংলার ভূমিকার এই ভূখণ্ডের ইতিহাসকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় সেই বিশেষ জাতির ও অবদানের স্বীকৃতি।
পুবের কলম পত্রিকার সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান বলেন, ঋণ সালিশি বোর্ডের মাধ্যমে কৃষকদের ঋণ মকুবের যে পথ দেখিয়েছেন একে ফজলুল হক তার চিরস্মরণীয়। শের এ বাংলা প্রথম অওয়াজ তুলেছিলেন লাঙল যার জমি তার। তারই ফসল আজ তুলছে বাংলা কৃষক সমাজ। এছাড়া কৃষক সমাজের জন্য একে ফজলুল হকের অবদান নিয়ে জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য রাখেন সাংসদ জহর সরকার, সমাজসেবী ও শিক্ষাবিদ আবুল কাশেম মুন্সী, অধ্যাপক মহিতোষ গায়েন। ভূমির পক্ষে ড. রামিজ রাজা বলেন, শেরে বাংলা ফজলুল হক ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালিদের জন্য আজীবন কাজ করে গেছেন। কিন্তু বাঙালি জাতি তার সঠিক মূল্যায়ন করে নি। ওনাকে বিস্মৃতির আড়াল থেকে টেনে এনে শেরে বাংলা চর্চা এখন সময়ের দাবি। জ্য সরকারের কাছে একটি স্মৃতিফলক নির্মাণের দাবি জানানো হয় উদ্যোক্তাদের পক্ষে।
আলোচনা সভাটি সুচারুভাবে সঞ্চালনা করে রুহুল আমিন। এদিন আলোচনা কক্ষে বিশিষ্টদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক সাইফুল্লা, আপনজন পত্রিকার সম্পাদক জাইদুল হক, সাংবাদিক মোশারফ হোসেন, আলিমুজ্জামান, দীপক সাহা, একরামূল এইচ সেখ, সাদিকুল ইসলাম, মির্জা মোসারফ হোসেন, প্রবন্ধিক একরামূল হক শেখ, মুরাদ শেখ, ওয়াহেদ মির্জা, মধুমিতা দাস, আবু সাইদ আহমেদ, মফেজুল হক, গোলাম রাশেদ, নুর মোহাম্মদ প্রমুখ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct