সম্প্রীতি মোল্লা,কলকাতা,আপনজন: বৃহস্পতিবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থার এর এজলাসে হাওড়ার আমতায় নিহত আনিস মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে মামলার শুনানি চলে। এদিন রাজ্যের তদন্তকারী সংস্থা সিটের দাখিল রিপোর্ট নিয়ে বিস্তর প্রশ্নচিহ্ন তুললো আদালত। হাওড়ার ছাত্রনেতা আনিস খানের অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্ত করছে সিট। সিটের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে একটি রিপোর্ট জমা করা হয়েছে। যদিও সিটের তদন্তে আস্থা নেই আনিস খানের পরিবারের। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার সিবিআই তদন্তের দাবি করা হয়েছে। এদিন এই মামলার শুনানিতে একের পর এক প্রশ্নের মুখে পড়তে হলো সিটকে।এদিন আদালত প্রশ্ন তোলে- ‘ পুলিশ কর্মীরা সিঁড়ি দিয়ে উঠে কি দেখেছিলেন? রিপোর্টে তার উল্লেখ নেই কেন? যদি পালাতে গিয়ে পড়ে যান আনিস খান, তাহলে কিভাবে ৩০৪ এ ধারা প্রযোজ্য হবে? পালাতে গিয়ে যদি তিনি পড়ে যান, তাহলে পুলিশ কেন দায়ী হবে? আনিস খানের বিরুদ্ধে যদি কোন অভিযোগ থাকে, তাহলে তাঁকে ৪১এ ধারায় নোটিশ পাঠানোর প্রয়োজন ছিল, সেটা কি করা হয়েছে? আনিস খানের বাড়িতে কোন সমস্যা ছিল কিনা? তার তদন্ত কী হয়েছে?’ এই বিধ নানান প্রশ্নচিহ্ন তুলে আদালত। নিহত আনিস খানের মৃত্যুর তদন্তে ৮২ পাতার যে রিপোর্ট জমা করেছে সিট। তাকে চ্যালেঞ্জ করে এদিন সওয়াল করলেন মামলাকারীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, -’ পুলিশি অভিযানে এভাবে যদি কারোর মৃত্যু হয়, তাহলে সুপ্রিম কোর্ট তাকে খুন আখ্যা দিয়ে থাকে। আঘাতের চিহ্ন রয়েছে, অর্থাত্ আঘাতে মৃত্যু ঘটেছে। পুলিশ তাঁকে খুঁজছিল কেন? কেন তাঁকে ফেলে দেওয়া হলো? সেটা পুলিশ ভালো করে বলতে পারবে। সিটের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সানসেট থেকে ইলেকট্রিক তারের দূরত্ব এক মিটারের বেশি ছিল না। তাই লাফ দিলে ইলেকক্ট্রিক তারে পড়তে পারতেন, তিনতলা থেকে পড়লে হাত-পা ভাঙার সম্ভাবনা থাকতো। কিন্তু তা হয়নি। রিপোর্টে বলা হয় সিমেন্টের উপরে পড়ে গিয়েছিলেন আনিস খান। কিন্তু বাড়ির পাশে মাঠ ছিল’।রাজ্য পুলিশের সিট যে তদন্ত করেছে তাতে পুরোপুরিভাবে স্থানীয় থানার পুলিশকে আড়াল করার চেষ্টা করা হয়েছে বলে হাইকোর্টে দাবি করলেন আনিশ খানের পরিবারের তরফে সওয়ালকারী আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য।সিটের তদন্ত রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থার সিঙ্গল বেঞ্চে শুরু হয় শুনানি । এদিন মামলাকারীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন,- “সিট যে তদন্ত করেছে তাতে পুলিশদেরকে আড়াল করা হয়েছে । ময়নাতদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে । তাহলে যদি সে নিজে লাফ দিত ছাদ থেকে তবে পাশে ইলেকট্রিক তার রয়েছে সেখানে আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল । বা সেখানে আঘাত লাগতে পারত । কিন্তু ময়নাতদন্তের রিপোর্টে আনিশের হাতে পায়ে কোনও আঘাত ছিল না । রিপোর্টে অনুমান করা হয়েছে, হয় কেউ তাঁকে ঠেলে ফেলে দিয়েছে অথবা বেতালে পড়ে যেতে পারে । পুলিশি অভিযানের পর তাঁর মৃত্যু হয় । এর থেকে অনুমান করা যায় এটা খুন’ । পাশাপাশি পলিগ্রাফ টেস্ট নিয়ে বিকাশ বাবু বলেন, “পলিগ্রাফ টেস্টে যে ধরনের প্রশ্ন করা হয়েছে তা অযৌক্তিক। একেবারে সাজানো মনে হচ্ছে’। প্রতুত্তরে রাজ্যের এজি সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, - “সিএফএসল পলিগ্রাফ টেস্ট করেছে । তাঁরা মূলত সিবিআই অফিসার । তাঁদের এক্সপার্টরা এসে এটা করেছে ।” আগামী মঙ্গলবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct