ইউরোপের দেশ সুইডেনের বিভিন্ন শহরে বিশেষ করে নরকপিং, লিংকোপিং, রিঙ্কেবি, মালর্মো, ওরেব্রো ও রাজধানী স্টকহোমে সপ্তাহান্তে সংঘর্ষ ও সহিংসতা শুরু হয়। রাসমুস পালুদান একজন ডেনিস-সুইডিশ চরমপন্থী যার নেতৃত্বে সুইডেনের অতি-ডান, অভিবাসী-বিরোধী, ইসলামবিরোধী গ্রুপ স্ট্রাম কুরস বা হার্ডলাইন সংগঠনের পরিকল্পনা অনুযায়ী রমজান মাসে পবিত্র কুরআনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। আগামীতে কুরআন পোড়ানোর ঘটনা আরো ঘটানোর ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। এটি সুইডেনের মতো সার্বভৌম দেশের নাগরিক আইন এবং রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধের পরিপন্থী। সে সম্পর্কে অকপট বিশ্লেষণ করেছেন খালিদ হোসেন। দ্বিতীয় কিস্তি।
আশ্চর্যের বিষয় হল যে, বাকস্বাধীনতা, মানবতা, সভ্যতা, মূল্যবোধের কথা মুখে বলা হলেও অন্য ধর্মের সংস্কৃতি বা ধর্মীয় প্রতীকগুলোকে অবমূল্যায়ন করা বা তাদের উপহাসের শিকার করা রীতিমতো ফ্যাশনে পরিণত করা হয়েছে। অতীতে স্বাধীন মতপ্রকাশের এ ব্যাখ্যাটি ৩০ সেপ্টেম্বর-২০০৫ ডেনিশ পত্রিকা ‘জিলান্ডস পোস্টেন’-এ নবী মুহাম্মদ সা:-এর ১২টি ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছিল। ১০ জানুয়ারি-২০০৬-এ নরওয়েজিয়ান পত্রিকা ম্যাগাজিনেট, জার্মান সংবাদপত্র ডাই ওয়েল্ট, ফরাসি সংবাদপত্র ফ্রান্স সোয়ার এবং ইউরোপের অন্যান্য সংবাদপত্র ছবিগুলো পুনঃপ্রকাশ করে। তাদের প্রকাশনা মুসলমানদের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠের অনুভূতিতে আহত করেছিল এবং মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন রাজনৈতিক স্তরে ব্যাপক নিন্দার সম্মুখীন হয়েছিল। মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ উসকে দেয়ার আরেকটি ধরন ছিল উপাসনালয়ে আক্রমণ, যেমন- ২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ডে ক্রাইস্টচার্চ মসজিদ সন্ত্রাসী হামলা, ব্রেন্টন হ্যারিসন ট্যারান্ট, একজন অস্ট্রেলিয়ান সন্ত্রাসী সে দু’টি মসজিদে ৫১ জনেরও বেশি মুসলমানকে হত্যা করে। এ ধরনের বিদ্বেষমূলক কর্ম শান্তি, সহাবস্থান ও সভ্য বিশ্বের মূল্যবোধ প্রকাশ করে না। বরং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অজুহাতে তারা মুসলমানদের অন্ধকার যুগে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে (প্রাগুক্ত)। প্যারিসে ‘চার্লি হেবডো’ ম্যাগাজিনে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সা:-কে অবমাননা করে কার্টুন ছাপে। এটি ২০০ কোটি মুসলমানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।
একটি সঙ্ঘবদ্ধ গোষ্ঠী ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইসলাম, নবী মুহাম্মদ সা:-কে অবমাননা ও কুরআন পোড়ানোর মতো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। আসলে ধর্মগ্রন্থ পুড়িয়ে ধর্মের অগ্রযাত্রা রোধ করা যায় না। এটি নিচু মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। এতে সমাজ ও রাষ্ট্রে অস্থিরতা সৃষ্টি হয় এবং এটি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকে অসম্ভব করে তোলে। ২০১৭ সাল থেকে ডেনমার্কে কুরআনকে অপবিত্র করা বৈধ। হার্ডলাইন পার্টির (ড্যানিশ : স্ট্রাম কুর্স) একটি নিয়মিত ঘটনা হলো কুরআন পোড়ানো। ২০০৫ সালের মাঝামাঝিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক গুয়ান্তানামো বে বন্দিশিবিরে মুসলিম বন্দীদের সামনে কুরআনের ইচ্ছাকৃত অবমাননা করার অভিযোগ, কিউবায় ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয় এবং দাঙ্গার দিকে পরিচালিত করে। একটি মার্কিন সামরিক তদন্ত কমিশন মার্কিন কর্মীদের দ্বারা কুরআনি অপবিত্রতার চারটি ঘটনা নিশ্চিত করেছে (যার মধ্যে দু’টিকে ‘অনিচ্ছাকৃত’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে) এবং মুসলিম বন্দীদের দ্বারা তাদের ধর্মীয় গ্রন্থ অপবিত্র করানোর ১৫টি ঘটনা উদঘাটিত হয়েছে। সিবিসি নিউজের মতে, ‘বিবৃতিতে কেন আটক ব্যক্তিরা তাদের নিজস্ব পবিত্র গ্রন্থের অপব্যবহার করতে পারে, সে সম্পর্কে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি।’ গুয়ান্তানামো বে ঘাঁটি, আরো মুসলিম অস্থিরতার জন্ম দিয়েছে। ২০১০ সালে ডোভ ওয়ার্ল্ড আউটরিচ সেন্টারের খ্রিষ্টান যাজক টেরি জোনস ফ্লোরিডার গেইনসভিলে একটি গির্জায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার বার্ষিকীতে একটি কুরআন পোড়ানোর পরিকল্পনা ঘোষণা করার পর আন্তর্জাতিক নিন্দার কারণ হয়ে ওঠেন। তিনি পরে পরিকল্পনা বাতিল করেন; তবে ২০ মার্চ, ২০১১-এ তিনি কুরআন পোড়ানোর তদারকি করেন। জবাবে আফগানিস্তানে মুসলমানরা প্রতিবাদ জানায় এবং সংঘর্ষে ১২ জন নিহত হয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct