ফৈয়াজ আহমেদ: লাদাখ বা লা-দ্বাগস দেশে এবং দেশের বাহিরে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হলেও এটি ভারতের একটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল। লাদাখের সংস্কৃতিতে তিব্বতের সংস্কৃতির প্রভাব দেখা যায় কঠোরভাবে তাই লাদাখকে ক্ষুদ্র তিব্বত বলা হয়ে থাকে। এই অঞ্চলের উত্তরে কুনলুন পর্বতশ্রেণী এবং দক্ষিণে হিমালয় দ্বারা বেষ্টিত। লাদাখ ১৯৪৭ সাল থেকে ভারত, পাকিস্তান এবং চীনের মধ্যে বিরোধের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কালক্রমে লাদাখ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন দেশের মধ্যে কয়েক ধাপে বিরোধিতা হয়েছে এবং লড়াই হয়েছে একাধিকবার। ভারত-পাকিস্তান এবং চীনের ঝামেলার আগে থেকেই তিব্বত স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল। লাদাখের অধিবাসীরা মূলত ইন্দো-আর্য এবং তিব্বতী বংশোদ্ভুত। ভারতের এই লাদাখ অঞ্চল জনবিরল এলাকাগুলির মধ্যে অন্যতম। ঐতিহাসিককাল ধরে বালটিস্তান উপত্যকা, সিন্ধু নদ উপত্যকা, জাংস্কার, লাহুল ও স্পিটি , রুদোক ও গুজ সহ আকসাই চিন এবং নুব্রা উপত্যকা লাদাখের অংশ ছিল। বর্তমানের লাদাখ শুধুমাত্র লেহ জেলা ও কার্গিল জেলা নিয়ে গঠিত।
লাদাখের দক্ষিণে হিমাচল প্রদেশ রাজ্য, ভারতীয় কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীর এবং পশ্চিমে পাকিস্তান-শাসিত গিলগিত-বালকিস্তান এবং জিনজিয়াংয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণটি সীমাবদ্ধ সুদূর উত্তরে কারাকোরাম পাস। তথ্যমতে এখন পর্যন্ত ইতিহাস থেকে জানা যায় সপ্তদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে তিব্বতের সাথে ভুটানের দ্বন্দ্ব শুরু হলে লাদাখ ভুটানের পক্ষ নিয়েছিল। যেকারণে তিব্বত লাদাখ আক্রমণ করলে ১৬৭৯ থেকে ১৬৮৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিব্বত-লাদাখ-মুঘল যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। যুদ্ধে কাশ্মীর লাদাখকে সহায়তার বিনিময়ে লেহ শহরে মসজিদ নির্মাণ ও লাদাখের রাজা দেলদান নামগ্যালকে ইসলাম ধর্মগ্রহণের শর্ত রাখে। ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দে লাদাখে ইউরোপীয়দের আনাগোনা শুরু হয়েছিল। তারপর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বাধা বিপত্তি আসে এই লাদাখের উপরে। সবকিছু পেড়িয়ে শেষে ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারত স্বাধীন হয়, তারপরই কাশ্মীরের ডোগরা শাসক হরি সিং অন্তর্ভুক্তি চুক্তিতে সই করে কাশ্মীর রাজ্যকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করেন। কিন্তু তখনই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী লাদাখ ও কাশ্মীরের অন্যান্য অংশ দখল করে নেয়। আর তারপর সংঘটিত হয় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ যার মাধ্যমে লাদাখকে পাকিস্তানি দখলমুক্ত করা হয়।
১৮৭০ সালের দিকে লাদাখের বণ্যপ্রাণী নিয়ে গবেষণায় এ অঞ্চলে এক বিশাল অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল। গবেষণায় জানা যায় এ অঞ্চলের পাহাড়ি ঝিরিসংলগ্ন ভূমি, জলাভূমি, হ্রদ ও আবাদি জমি ছাড়া অন্য কোথাও গাছপালা খুব একটা দেখা যায় না। তবে এখন পর্যন্ত ১২৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ লিপি বদ্ধ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, লাদাখের সাথে মধ্য এবং এশিয়ার বন্যপ্রাণীদের মধ্যে অদ্ভুত মিল পাওয়া যায়। বিশেষ করে তিব্বতী মালভূমির বণ্যপ্রাণীদের মধ্যে। তবে কয়েক প্রজাতির পাখি এখানে দেখা যায় যেগুলো আবার তিব্বতী মালভূমি বা মধ্য এশিয়ার কোনখানেই দেখা যায় না। লাদাখ অন্যান্য অঞ্চল থেকে তুলমামূলক রুক্ষ অঞ্চল হলেও লাদাখে বসবাসকারী পাখি প্রজাতির সংখ্যা অনেক বেশি,এ পর্যন্ত মোট ২২৫ প্রজাতির পাখির দেখা পাওয়া গেছে। লাদাখ যাওয়ার তিনটি রাস্তা আছে । প্রথমটি শ্রীনগর থেকে কার্গিল হয়ে লাদাখ। মাঝে কার্গিলে রাত্রিবাস- সময় লাগে দুদিন। দ্বিতীয়টি মানালী থেকে সারচু হয়ে লাদাখ। আর শেষেরটি হল দিল্লি থেকে বিমানপথে লে হয়ে লাদাখ । সাধারণত এয়ার ইন্ডিয়া, গো-এয়ার , জেট এয়ারওয়েজের বিমান দিল্লি থেকে লে বিমানবন্দর যায়। অনিশ্চিত আবহওয়ার জন্য উড়ানগুলি সাধারণত সকালবেলাই হয়ে থাকে। ভারতের অন্যতম প্রধান স্টেটসম্যান কুশক বাকুলা রিমপোচের নামানুসারে নির্মিত লে বিমানবন্দর হল পৃথিবীর সবচেয়ে উচু ও সুন্দর বিমানবন্দর। সামরিক কারনে লে বিমানবন্দরের ছবি নেওয়া বারন , ভ্রমন করার সময় এটা অবশ্যই মনে রাখবেন।
তথ্যসুত্র: অন্তর্জাল(ইন্টারনেট)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct