কুতুবউদ্দিন মোল্লা,ক্যানিং,আপনজন: দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ক্যানিং শহরের শেষ ঐতিহ্য লর্ড ক্যানিংয়ের বাড়ি।সংস্কারের অভাবে বাড়িটি ভেঙে পড়ছিল। যদিও ২০১৮ সালে এই ঐতিহ্যবাহী ভবনটি কে ঐতিহ্যশালী ভবনের স্বীকৃতি দেয়
লর্ড ক্যানিংয়ের বাড়ি। ১৫ দিন আগে থেকেই শুরু হয়েছে সংস্কার কাজ। এমনটাই জানিয়েছে ক্যানিং পশ্চিম কেন্দ্রের বিধায়ক পরেশরাম দাস। ১৬৯ বছর আগে সুন্দরবনের খুব কাছেই মাতলা নদীর তীরে অবস্থিত এই বিলাশবহুল বাড়িটি তে দিন কাটিয়েছিলেন এক ব্রিটিশ দম্পতি।ভদ্র মহিলা ছিলেন তৎকালী বিখ্যাত এক চিত্রশিল্পী।তাঁরই শিল্পকলার যাদু আজও শোভা পায় সুদূর ইংল্যান্ড সহ দেশ বিদেশের বিভিন্ন যাদুঘরে।তৎকালীন সময় প্রত্যন্ত এই সুন্দরবন থেকে সুন্দরবনের নদীনালা,প্রাকৃতিক বৈচিত্র সহ গ্রাম বাংলার ছবি এঁকে তাঁর এক বিখ্যাত বান্ধবী কে চিঠি পাঠাতেন।আর সেই বান্ধবী হলেন খোদ রাণি ভিক্টোরিয়া।বিখ্যাত সেই চিত্রশিল্পী ভদ্র মহিলার শ্বশুর ছিলেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী আর তাঁর স্বামী ছিলেন চার্লস ক্যানিং (লর্ড ক্যানিং)।চিত্রশিল্পী ভদ্রমহিলা হলেন শার্লোটের।
তৎকালীন সময়ের তাঁর সেই সাধের ঐতিহ্যবাহী বিলাসবহুল বাড়িটি সংস্কারের অভাবে আজ ধ্বংসের পথে।
উল্লেখ্য এর বেশ কয়েক বছর আগেই ১৮৫৩ সালে সুন্দরবনের দাপুটে নদী বিদ্যাধরী আর মাতলা নদীর সংযোগ স্থলে বন্দর গড়ার কথাও চিন্তাভাবনা করেছিলেন।সেই সময় লর্ড ক্যানিং মাতলা ৫৪ নম্বর লটের ৯০০ একর জমি কিনেছিলেন মাত্র ১১ হাজার টাকায়।তাঁরই উদ্যোগে সাধের বিলাশবহুল বাড়ীটিতে তৈরি হয় পোর্ট অফিস।জরিপের জন্য বিলেত থেকে আনা হয় নামিদামি যন্ত্রপাতি ও বইপত্র। কোন কাজ সেভাবে এগোয়নি। শোকস্তব্ধ লর্ড ক্যানিং ফিরে যান ইংল্যান্ডে। ১৮৬২ সালে তিনিও পরলোক গমন করেন। তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার সুন্দরবনের এই শহরের নামকরণ হয় ক্যানিং। শতাব্দী প্রাচীন সেই ঐতিহ্যবাহী বিলাসবহুল বাড়িটি থেকে হারিয়ে গিয়েছে লর্ড ক্যানিংয়ের সেই সব অতীত স্মৃতি। বাড়িটির সামনে ছিল,কেয়ারি ফুলের বাগান , সিংহদূয়ার আর সবুজ ঘাসের লন খিলান যুক্ত। ১৯৬২ সালে ক্যানিংয়ের জয়দেব ঘোষ দম্পতি মুম্বাইয়ের ‘জে এম দাতিয়াল-আরসি কুপার কোম্পানি’র কাছ থেকে কিনে নেন। ঘোষ দম্পতির ছেলে বরুণ ঘোষ বাড়িটি তেমন ভাবে রক্ষণাবেক্ষন এবং পরিচর্যা করতে সক্ষম হতে পারেননি। জানা যায় এক সময় এই বিলাসবহুল বাড়িটি হোটেল তৈরি করার জন্য কিনতে চেয়ে জয়দেব ঘোষকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী। অবশ্য পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশন ২০০১ এর আইন অনুযায়ী হেরিটেজ বিল্ডিং ঘোষণা করেন ২০১৮ সালে। এই ঐতিহ্যবাহী ভবনটিকে ঐতিহ্যশালী ভবনের স্বীকৃতি দেয়। গত ১ দিন আগে থেকে শুরু হয়েছে বাড়িটির সংস্কারের কাজ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct