বর্ষবরণ
শংকর সাহা
_____________
প্রতিবছর থার্টিফাস্ট ডিসেম্বরের রাতটা বনিতা বন্ধুদের সাথেই কাটায়। বন্ধুদের সাথে ঘোরা, দেদার আড্ডা ও রাস্তায় বেরিয়ে হুল্লোড় করে বাড়ি ফেরা। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
বনিতা সুবিরেশ বাবুর একমাত্র মেয়ে। মেয়েকে ডাক্তারি পড়াতে সুদূর হায়দ্রাবাদে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করিয়েছেন তিনি। মেয়ের মধ্যে দিয়ে নিজের স্বপ্নগুলো যেন আজ তিনি পূ্রণ করবেন। বড়দিনের ছুটি পড়তেই হোস্টেল থেকে বাড়িতে আসে ছুটি কাটাতে সে। বাড়ির সকলের আদরের একমাত্র মেয়ে সে। বাড়ির সকলে তাকে ভালোবেসে বনি বলেই ডাকে।
সেদিন সন্ধ্যায় বন্ধুদের সাথে বাইরে বেরিয়ে পরে সে। আজ যে থার্টিফাস্ট ডিসেম্বর। রাতে বাইরের রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়ে আসবে বলে মা ও বাবাকে তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে না করে দেয় সে। আজকে বাইরে বেশ ঠাণ্ডা পরেছে। মনে হচ্ছে এবারে ঠাণ্ডাটা এবার বেশ ঝাঁকিয়ে পড়বে। বাইরে বেশ ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। ঘড়ির কাঁটায় তখন দশটা বেজে ছুঁই ছুঁই। বাইরের দরজায় হঠাৎ কলিং-এর শব্দ। সুবিরেশ বাবু দরজা খুলে দেন। বনিতা সিঁড়ি বেয়ে সোজা নিজের ঘরে চলে যায়।
‘বাইরে বর্ষবরণের আয়োজন কেমন করেছে বনি? ‘
সুবিরেশ বাবুর কথা হয়তো বনির কানে পৌঁছোল না। সে তাড়াতাড়ি শুয়েও পড়ে আজ।
পরের দিন সকাল হতেই বনিতা এসে বলে,
‘বাবা, আমার সাথে একটি জায়গায় যাবে আজ? ‘
‘কোথায় রে বনি.. ‘
‘চলো, গেলেই বুঝবে.. ‘
বাবা ও মেয়ে গাড়ি করে বেরিয়ে পড়ে।কিছু দূর যেতেই সুবিরেশ বাবু লক্ষ্য করেন বনিতা তাকে নিয়ে এসেছে একটি ছোট্ট বস্তিতে।
বস্তির মধ্যে গিয়ে গতকাল রাতে রাস্তার পাশে যেসব অসহায় মানুষগুলো ঠান্ডায় কষ্ট পেতে দেখেছিল সে তাদের সবার হাতে পাঁচশত টাকা ও পুরোনো জামা ও চাদর দেয় বনিতা।
মেয়ের কাণ্ডদেখে সুবিরেশ বাবু হতবাক। নিজের যে আদর্শে তিনি মেয়েকে মানুষ করেছেন আজ বনিতা তারই এক প্রমাণ দিল।
‘জানতো বাবা, গতকাল যখন আমি বন্ধুদের সাথে ফিরছিলাম তখন ঠান্ডায় ওরা খুব কষ্টে এখানে শুয়েছিল।ভীষণ কষ্ট হয়েছিল ওদের দেখে। তাই নিজের কাছে জমানো যেটুকু টাকা ছিল এদের দিয়ে দিলাম। বাবা, এরা যে খুব অসহায়..’
মেয়ের কথাগুলো যেন বড় নাড়া দিল সু্বিরেশ বাবুর মনে। সত্যি আজও কত মানুষ অসহায়ভাবে দিনযাপন করে আর সেখানে এই সমাজ কতভাবেই না টাকার অপচয় করেন।
মেয়ের জন্যে আজ যেন তাহার বড়ই অহংকারবোধ হচ্ছে। বনিতা ডাক্তার হয়ে সত্যিই গরীবের সেবা করুক তিনি তাইই চান। নির্বাকভাবে দাঁড়িয়ে সেই অসহায় মানুষ গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকেন তিনি।
পাশ থেকে বনিতা বাবার গা হাত দিয়ে বলেন,
‘বাবা,এবার বাড়ি চলো? বাড়িতে মা একা রয়েছেন....? ‘
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct