আপনজন ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল জযের পর উচ্ছ্বসিত তৃণমূল সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার রাজনৈতিক দিগন্ত বিস্তৃত করার পরিকল্পনা করে চলেছেন। লক্ষ্য ২০২৪-এর লোকসভা ভোট। মমতা নিজে না বললেও দেশজুড়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিকল্প হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম এখন প্রায় বিরোধীদের মুখে মুখে। আর মমতাও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মোকাবিলায় সদা প্রস্তুত। তাই মমতা বাংলার বাইরে তাদের রাজনৈতিক প্রসার বাড়ানোর সুযোগ খুঁজে চলেছে। এই পর্বে, ত্রিপুরা, অসম এবং গোয়ার পর তৃণমূল কংগ্রেস এখন দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক রাজ্য উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে কোমর বেঁধে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিশেষ সূত্রে জানা যাচ্ছে।
উত্তরপ্রদেশ সূত্রে খবর, তৃণমূল কংগ্রেসে এবার যোগ দিতে চলেছেন উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের ব্রাহ্মণ নেতা ললিতেশপতি ত্রিপাঠি। গত সেপ্টেম্বর মাসে ললিতেশ উত্তরপ্রদেশ প্রদেশ কংগ্রেস সহ-সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। এমনকী প্রাথমিক সদস্য পদও ত্যাগ করেছেন। এবার তিনি যোগ দিতে চলেছেন তৃণমূল কংগ্রেসে। ত্রিপুরা, অসম ও গোয়ার মতো উত্তরপ্রদেশে ললিতেশপতি ত্রিপাঠি মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখ করা হতে পারে বলে গেরুয়া বলয়ে জোর চর্চা। এই ব্রাহ্মণ নেতাকে দিয়েই উত্তরপ্রদেশে বিজেপিকে জোর ধাক্কা দিতে চাইছে তৃণমূল। আরও জানা যাচ্ছে, তৃণমূল উত্তরপ্রদশের প্রধান বিরোধী দল অখিলেশের সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে পারে। সেক্ষেত্রে ললিতেশ যেমন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান মুখে হবেন উত্তরপ্রদেশে তেমনি তার বাবা রাজেশপতি ত্রিপাঠিও রাজ্যসভায় পাঠানো হতে পারে।
উত্তরপ্রদেশে এখন জোর জল্পনা, দিদি এবার উত্তরপ্রদেশে বিজেপির বিরুদ্ধে বাংলার মতো রাজনৈতিক প্রতিশোধ নেবেন। উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন খেলা হবে। সেই খেলা শেষের পর তিনি দেশজুড়ে খেলার কথা বারে বারে বিভিন্ন সভায় বলে এসেছেন। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে একে একে অন্যরাজ্যে পাড়ি দিচ্ছে তৃণমূল। ত্রিপুরায় বিজেপিতে ভাঙনের পর অসমের কংগ্রেস নেত্রী সুস্মিতা দেবকে তৃণমূলে এনেছে।কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে েযাগ দিযেছেন গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান কংগ্রেস বিধায়ক লুইজিনহো ফালেইরো। তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন আরও কংগ্রেস বিধায়ক। এবার দিদির চোখ উত্তরপ্রদেশে।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনকে লক্ষ্য করেই উত্তরপ্রদেশে তৃণমূল কংগ্রেসের সংগঠন প্রসারে জোর চেষ্টা অব্যাহত।
এ ব্যাপারে উত্তরপ্রদেশে, দলের রাজ্য সভাপতি নীরজ রাই বলেন, দলের পুরো ফোকাস বর্তমানে সংগঠনের সম্প্রসারণের দিকে। ৩৫টিরও বেশি জেলায় সংগঠনটি প্রস্তুত। ছোট ছোট স্থানীয় সমস্যাগুলি তুলে ধরছি, মমতা সরকারের স্কিম সম্পর্কে বলছি। বাংলায় যেসব প্রকল্প সফল, সে সম্পর্কে মানুষকে বলা হচ্ছে। বিজেপি কেবল ইস্যু থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেয়। আমাদের প্রস্তুতি ২০২২ বিধানসভা নির্বাচনের পর ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন।
ললিতেশের যোগদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নিশ্চিতভাবেই এ ধরনের খবর আছে। অনেক নেতা দলে যোগ দিতে চান। দশেরার পরে যোগদান শুরু হবে। যাইহোক, এই সবগুলি শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে।
অন্যদিকে, উত্তরপ্রদেশ তৃণমূল সূত্রে জানা গেছে, বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে জোট করার প্রস্তুতি নিচ্ছে তৃণমূল। সূত্রের খবর, দুই পক্ষের মধ্যে দুই দফা আলোচনা হয়েছে। সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে জোট করে তৃণমূল উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনের মাঠে নামতে প্রস্তুত। উভয় দলই বিজেপিকে পরাজিত করার কৌশল নিয়ে একসঙ্গে কাজ করছে। তৃণমূল ২০২২ সালের নির্বাচনে বিশেষ কিছু করতে পারবে না, কিন্তু তার উপস্থিতি অনুভব করতে চায় বলে উত্তরপ্রদেশ তৃণমূল নেতারা বলছেন। এছাড়াও, তৃণমূলের বড় লক্ষ্য হল ২০২৪ লোকসভা নির্বাচন, যেখানে মমতা দিদিকে তারা নরেন্দ্র মোদীর সামনে বড় বিকল্প হিসেবে দাঁড় করানো।
কিন্তু কে এই ললিতেশপতি ত্রিপাঠি? ললিতেশপতি ত্রিপাঠীর পরিবার গত ১০০ বছর ধরে কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত। বিশেষ করে গান্ধী পরিবারের খুব কাছাকাছি ছিল। ত্রিপাঠী পরিবার কখনও কংগ্রেসকে ছাড়েনি। ললিতেশের প্রপিতামহ কমলাপতি ত্রিপাঠি মির্জাপুরের মাদিহান থেকে নির্বাচনে লড়তেন। সেখান থেকে বিধায়ক হয়ে একসময় উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। এমনকী কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রীর দায়িত্বও গ্রহণ করেছেন। তারপর ললিতেশের ঠাকুরদা লোকপতি ত্রিপাঠীও মাজওয়ান থেকে রাজনীতি শুরু করেন এবং বিধায়ক হন। ললিতেশের বাবা রাজেশপতি ত্রিপাঠি উত্তরপ্রদেশ বিধান পরিষদের সদস্য। তবে, ললিতেশ নিজেই ২০১২ সালে মাদিহান থেকে বিধায়ক হন। শুধু তাই নয়, ললিতেশ মির্জাপুর লোকসভা ও বিধানসভার নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, কিন্তু জয়ী হননি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct