জয়দেব বেরা: বর্তমান সময়ে আমরা এক ভয়াবহ (কোভিড-১৯) কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি।তাই ছাত্ৰ-ছাত্রীদের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ 2021 সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা যথা সময়ে নিয়ে উঠতে পারেনি।এবং এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে বিদ্যালয় দীর্ঘদিন বন্ধের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ ছাত্ৰ-ছাত্রীদের সুবিধার্থে অন্যান্য সমস্ত বিষয়ের পাশাপাশি দ্বাদশ শ্রেণির সমাজতত্ত্বের সিলেবাসও ৩০%-৩৫% কমিয়ে দিয়েছে।এই দ্বাদশ শ্রেণির সিলেবাস থেকে 2021 সালের উচ্চ মাধ্যমিক এর জন্য যে বিষয় গুলো কে বাতিল করা হয়েছিল, সেই বিষয় গুলিকে 2022 সালের পরীক্ষা থেকেও বাতিল করা হয়েছে। 06/08/2021(No- L/secy/25/2021) তারিখে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের( WBCHSE ) থেকে জানানো হয়েছে যে, 2021 সালে দ্বাদশ শ্রেণির সিলেবাসে যে 30-35% সিলেবাস কমানো হয়েছিল,সেই কমানো বা বাদ দেওয়া সিলেবাসের ওপর ভিত্তি করে এবারের 2022 সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। সেই অনুযায়ী,2021 সলের মতো 2022 সালের উচ্চ মাধ্যমিক সমাজতত্ত্বের ক্ষেত্রে সিলেবাস থেকে যে বিষয় গুলো বাদ পড়েছে বা কমানো হয়েছে সে গুলি হল--- ‘ ভারততাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি(Indological Perspective), ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি(Historical Perspective), কার্য-কাঠামোগত দৃষ্টিভঙ্গি(Structural-
Functional Perspective) , দ্বান্দ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি(Dialectical Perspective) এবং নিম্নবর্গের ইতিহাস চর্চার দৃষ্টিভঙ্গি(Sub-altern Perspective) (প্রথম অধ্যায়-ভারতবর্ষে সমাজতত্ত্ব)।
এই পরিপ্রেক্ষিতের ওপর ভিত্তি করে 2022 সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য সমাজতত্ত্ব(sociology) বিষয়ে আমি কিছু পরামর্শ দিতে চাই ও তাদের প্রস্তুতি নিয়ে কিছু আলোচনা করতে চাই। যাইহোক,উচ্চ মাধ্যমিক সমাজতত্ত্বের ছাত্র ছাত্রীরা কিভাবে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেবে ও কিভাবে লিখলে,কেমন ভাবে লিখলে পরীক্ষার ফল ভালো হবে তা নিয়ে নিম্নে কিছু আলোচনা করিলাম-
প্রথমে বলি,সমাজতত্ত্বে বেশি নম্বর তুলতে হলে টেক্সট বই ও রেফারেন্স বই গুলো খুব ভালো ভাবে খুঁটিয়ে পড়তে হবে।প্রশ্ন-উত্তর গুলো ভালো করে প্র্যাক্টিস করার জন্য সমাজতত্ত্বের Question Bank গুলো ভালো করে প্র্যাক্টিস করতে হবে।তাহলেই MCQ ও SAQ এর প্রশ্নগুলির উত্তর খুব ভালোভাবে দেওয়া যাবে।এছাড়াও নিয়মিত লেখার অভ্যাস করতে হবে এবং বানানের (বাংলা ও ইংরেজি)প্রতি যথেষ্ট যত্নবান হতে হবে।দ্বাদশ শ্রেণি তে সমাজতত্ত্বে মোট চারটি অধ্যায় রয়েছে।তার মধ্যে প্রথম অধ্যায় থেকে মোট প্রশ্ন থাকবে 15 নম্বরের,দ্বিতীয় অধ্যায় থেকে মোট প্রশ্ন থাকবে 15 নম্বরের,তৃতীয় অধ্যায় থেকে মোট প্রশ্ন থাকবে 30 নম্বরের এবং চতুর্থ অধ্যায় থেকে মোট প্রশ্ন থাকবে 20 নম্বরের।এই নিয়ে মোট 80 নম্বর। তার মধ্যে MCQ থাকবে মোট 24 নম্বরের ও SAQ থাকবে মোট 16 নম্বরের এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন থাকবে মোট 40 নম্বরের।তাই সাধারণমানের ছাত্র-ছাত্রী যারা তাদেরকে MCQ ও SAQ এর প্রতি বেশি জোর দিতে হবে। আর তার সাথে সাথে রচনাধর্মী প্রশ্ন-উত্তর গুলি ভালো করে অভ্যাস করতে হবে। এবং যারা খুব ভালো মানের ছাত্র-ছাত্রী তাদেরকে MCQ ও SAQ এর পাশাপাশি রচনাধর্মী প্রশ্নে খুব ভালো করে জোর দিয়ে পড়তে হবে। রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি থাকবে 8 নম্বরের। তার মধ্যে আবার বিভাজন থাকবে 3 ও 5 নম্বরের। প্রশ্নের মান অনুযায়ী ছাত্র-ছাত্রীদেরকে প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে।বেশি বড় উত্তর লেখা যাবে না।প্রশ্নের মান অনুযায়ী উত্তর গুলি লিখতে হবে। তা নাহলে সময়ের অপচয় হবে। এছাড়াও 2015 থেকে 2020 সালের বিগত বছরের প্রশ্ন-উত্তর গুলি ভালো করে পড়তে হবে। সর্বদা পূর্ণ বাক্যে উত্তর দিতে হবে। যেমন-
প্রশ্ন:- কত সালে বেথুন সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর:- ১৮৫১সালে বেথুন সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
এর পাশাপাশি বলা যায়, রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তরে কোনো সংজ্ঞা লেখার সময় সমাজতাত্ত্বিকদের দেওয়া সংজ্ঞা অবশ্যই লিখতে হবে। তাহলে ভালো নম্বর পাওয়া যাবে। কোনো বিষয়ে সাল থাকলে সাল উল্লেখ করতে হবে। সমাজতাত্ত্বিকদের নামের বানান অবশ্যই ঠিক করে লিখতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রশ্ন গুলি ভালো করে বুঝতে হবে তারপর উত্তর দিতে হবে। MCQ , SAQ এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তরের পাশাপাশি ‘ক’ স্তম্ভ ও ‘খ’ স্তম্ভের মধ্যে মিল দেখাও এবং ‘কোনটি ভিন্ন চিহ্নিত করো’- এই ধরণের প্রশ্নগুলির প্রতিও ভালো করে নজর রাখতে হবে এবং বুঝে উত্তর দিতে হবে। প্রথম অধ্যায় (ভারতবর্ষে সমাজতত্ত্ব) থেকে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি গুলিকে এইবার বাদ দেওয়া হয়েছে তাই ‘ভারতে সমাজতত্ত্বের উৎপত্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিকাশ’ সহ অন্যান্য প্রশ্ন-উত্তর গুলি ভালো করে পড়তে হবে এবং দ্বিতীয় অধ্যায় (ভারতীয় সমাজ:কাঠামো ও প্রক্রিয়া) থেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রাম সমাজ ও যজমানি ব্যবস্থা এবং সামাজিক পরিবর্তনের প্রক্রিয়া গুলিকে(ব্রাহ্মণ্যকরণ সংস্কৃতায়ন,পাশ্চাত্ত্যীকরণ, আধুনিকীকরণ, ধর্মনিরপেক্ষীকরণ,বিশ্বায়ন, উদারীকরণ প্রভৃতি ) ভালো করে পড়তে হবে। তৃতীয় অধ্যায়ের (সমাজ কাঠামোর পরিবর্তনসমূহ)থেকে পরিবার, জাতি,ধর্ম এবং শিক্ষা প্রভৃতি বিষয়গুলিকে ভালো করে পড়তে হবে।এই বিষয় গুলো থেকে যে চিন্তাবিদ ও তাত্ত্বিকদের প্রশ্ন আসবে সেখানে কোনো বানানো কথা লেখা যাবে না, সেখানে তাত্ত্বিকরা যেটি বলেছেন,সেই বিষয় গুলিকে ভালো করে উপস্থাপিত করতে হবে। এবং চতুর্থ অধ্যায়(সমকালীন সামাজিক বিষয়াদি/সমস্যাদি)থেকে বিভিন্ন যে সামাজিক সমস্যা গুলো(জনসংখ্যাগত সমস্যা, দারিদ্র, বেকারত্ব, নিরক্ষরতা,সাম্প্রদায়িকতা, আঞ্চলিকতাবাদ, ধর্ম নিরপেক্ষতা,সন্ত্রাসবাদ, দুর্নীতি,এবং নারী জাতির সমস্যা প্রভৃতি) এবং পরিবেশ আন্দোলন ও গণমাধ্যম এর বিষয় গুলি রয়েছে সেগুলিকে ভালো করে পড়তে হবে। রচনাধর্মী প্রশ্ন লেখার সময় যে বিষয়গুলি উপস্থাপিত করতে হবে তা হল- ভূমিকা, সংজ্ঞা, মূল বিষয়, তাত্ত্বিকদের অভিমত (যদি থাকে),বৈশিষ্ট্য, প্রকারভেদ (যদি থাকে),উদাহরণ এবং উপসংহার সমূহ প্রভৃতি।রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি যতটা পারবে একটু পয়েন্ট আউট করে লেখার চেষ্টা করবে। এবং এগুলির পাশাপাশি হাতের লেখা যেন ভালো হয় তার প্রতি নজর রাখতে হবে। এবং ভালো করে চারদিকে মার্জিন টেনে দাগ নম্বর দিয়ে বিভাগ উল্লেখ করে উত্তর লিখতে হবে।
যাইহোক, আমি উচ্চমাধ্যমিক ছাত্র-ছাত্রীদের সাফল্য কামনা করি।এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ এর সিদ্ধান্তকেও সাধুবাদ জানাই। আমার এই পরামর্শগুলি ছাত্র-ছাত্রীদের কাজে লাগলে আমার পরিশ্রম সার্থক হবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct