কাজী দানিশ আকবর, তপসিয়া: শহর কলকাতার অন্যতম সংখ্যালঘু এলাকা তপসিয়া। সেই এলাকায় পিছিয়ে পড়া সংখ্যালঘুদের িশক্ষায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি হয় মনু মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউশন। পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদ কর্তৃক স্বীকৃত ও সরকারি সাহায্য প্রাপ্ত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একই বিল্ডিংয়ে রয়েছে বাংলা মাধ্যমের হাই মাদ্রাসা আর প্রাথমিকে উর্দু বিভাগ। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ অনুমোদিত উর্দু বিভাগে বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীদের বেশিরভাগই বস্তির বাসিন্দা। শ্রমিক পরিবারের এই সব সন্তানদের পড়াশুনায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এলাকায় বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন মনু মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউশনের শিক্ষক খালিদ হোসেন। বছর সাতেক আগে তপসিয়ার মনু মেমেরিয়াল ইনস্টিটিউশনের প্রাথমিকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেওয়ার পর এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিশুদেরকে ভর্তির জন্য পরিবারের কাছে আর্জি জানান। তাতে ব্যাপক কাজ হয়। এলাকায় শিশুদের মধ্যে স্কুলে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। সেই সঙ্গে স্কুলে বাড়তে থাকে পড়ুয়াদের সংখ্যা। কলকাতা পুরসভার ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে অবস্থিত এই স্কুলের দায়িত্ব নেওয়ার অাগে তিনি ছিলেন পার্ক সার্কাসের বেনিয়াপুকুর ইসলামিয়া স্কুলের শিক্ষক। সেখান থেকে তিনি যখন তপসিয়ার মনু মেমেরিয়াল ইনস্টিটিউশনের উর্দু বিভাগের দায়িত্বে আসেন তখন ছাত্র ছিল মাত্র ৩২১। আর তা বর্তমানে ১২০২ জনে পৌঁছেছে। এই এলাকায় শিক্ষায় নবজাগরণ ঘটানোর অবদান হিসেবে রাজ্য সরকারের তরফে এ বছর তাকে গত ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষারত্ন পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু তার হাতে তুলে দেন শিক্ষারত্ন পুরস্কারের স্মারক।
এক অভিনব পন্থায় খালিদ হোসেন এলাকার এই স্কুলে ছাত্র ভর্তির পাহাড়ে নিয়ে গিয়েছেন। এলাকার মানুষের মধ্যে আস্থা যোগাতে নিজের মেয়েকেই এই স্কুলে ভর্তি করে দেন। তাকে দেখেই আরও দুই শিক্ষক মুহাম্মদ জুনায়েদ ও মুহাম্মাদ স্ুলতান একই পথ বেছে নেন। তাতে কাজ হয়। স্কুল এখন গমগম করে পড়ুয়াদের সমাহারে। তবে এই কৃতিত্বের ভাগিদার করেন সহকর্মী শিক্ষক, কর্মী, স্কুল পরিদর্শক অন্তরা ঘোষ বিশ্বাস, স্কুল ম্যানেজিং কমিটির চেয়ারম্যান অাইনজীবী আসিফ আহমেদ সিদ্দিকী, সর্ব শিক্ষা মিশনের অধীনে থাকা স্পেশাল এডুকেটর শম্পা সেন মজুমদার প্রমুখকেও। উল্লেখ্য, এই স্কুলে বেশ কয়েকজন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ছাত্রছাত্রীও পড়াশুনা করে।
খালিদ হোসেন জুওলজিতে এমএসসি করলেও তিনি স্পেশাল এডুকেশনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এর পাশাপাশি তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের কোর্স সম্পন্ন করেছেন।
বাবা সওকাত আলির সুযোগ্য সন্তান খালিদের আফসোস তার মা কামরুন নেসা দেখে যেতে পারলেন না শিশুদের শিক্ষার জন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তার সন্তানের শিক্ষারত্ন লাভ।
এলাকার মানুষজন থেকে শুরু করে স্কুল পরিদর্শক সবাই বলছেন যোগ্য শিক্ষক হিসেবে ও এলাকায় শিশুদের শিক্ষার প্রসারে বিশেষ ভূমিকা নেওয়ার জন্যই তিনি শিক্ষারত্ন পেয়েছেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct