আপনজন ডেস্ক: এ বছরের উচ্চমাধ্যমিকের ফল প্রকাশিত হল বৃহস্পতিবার। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি মহুয়া দাস উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম দশ জনের যে তালিকা প্রকাশ করেছেন তাতে সর্বোচ্চ নম্বরের ভিত্তিতে প্রথমে রয়েছে কান্দির রাজা মণীন্দ্র চন্দ্র উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী রুমানা সুলতানা। সংসদ সভাপতি মহুয়া দাস সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, এবারের উচ্চমাধ্যমিকে এককভাবে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে মুর্শিদাবাদের এক মুসলিম মেয়ে রুমানা সুলতানা।
ছেলেদের টপকে উচ্চ মাধ্যমিকে শীর্ষে থাকা বিজ্ঞান বিভাগের পড়ুয়া রুমানা ৫০০ নম্বরের মধ্যে পেয়েছে ৪৯৯। তবে, এবার যেহেতু উচ্চ মাধ্যমিকের ফল মূল্যায়নের ভিত্তিতে প্রকাশ করা হয়েছে তাই রুমানাকে প্রথম বলে ঘোষণা না করে সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্ত হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। বাঁকুড়া বঙ্গ বিদ্যালয়ের সখী কুণ্ডু নামে এক ছাত্রী দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৮।
এদিন সাংবাদিকদের কাছে প্রেরিত উচ্চ মাধ্যমিকে শিক্ষা সংসদের ডেপুটি সেক্রেটারি (এক্সামিনেশন) ইয়াসির আরাফাতের সই সম্বলিত উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম দশজনের যে তালিকা দেওয়া হয়েছে তাতে প্রথম স্থানে এককভাবে লেখা হয়েছে রুমানার সুলতানার নাম। দ্বিতীয় স্থানে সাতজনের নাম রয়েছে। তৃতীয় স্থানে রয়েছে একজন। চতুর্থ স্থানে রয়েছে তিনজন, পঞ্চম স্থানে রয়েছে তিনজন, ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে সাতজন, সপ্তম স্থানে রয়েছে আটজন, অষ্টম স্থানে রয়েছে ১৯ জন, নবম স্থানে রয়েছে ১৯জন ও দশ স্থানে রয়েছে ১৮জন। সবমিলিয়ে প্রথম দশে স্থান পেয়েছে ৮৬জন। এই ৮৬জনের মধ্যে সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা চারজন।
এবার প্রথম দশে যে ৮৬জন স্থান পেয়েছে তার মধ্যে শুধু বাঁকুড়া বঙ্গ বিদ্যালয়ের ২৩ জন ছাত্রছাত্রী স্থান করে নিয়েছে। এছাড়া বারাসত মহাত্মা গান্ধি মেমোরিয়াল হাই স্কুলের দশ জন প্রথম দশে স্থান করে নিয়েছে।
বারাসত মহাত্মা গান্ধি মেমোরিয়াল হাই স্কুলের ছাত্র সোহেল মল্লিক দ্বিতীয় হয়েছে। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৮। এই স্কুলের ছাত্র স্বর্ণাভ দাস চতুর্থ স্থান অধিকার করেছে। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৬। বারাসত মহাত্মা গান্ধি মেমোরিয়াল হাই স্কুলের আরও চারজন ছাত্র ষষ্ঠ স্থান অধিকার করেছে যাদের প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৪। এই চারজন হল সাহিনুর রহমান , চয়ন প্রামাণিক , বর্ণদীপ বিশ্বাস ও সাগ্নিক রায়।
উত্তর ২৪ পরগনার শাসন থানা এলাকার গোলাবাড়ি পল্লিমঙ্গল হাইস্কুলের ছাত্র মুহাম্মদ তৌসিফ রহমান সপ্তম স্থান অধিকার করেছে। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৩। শাসন থানা এলাকার পুতুরিয়া গ্রামে তার বাড়ি।
বারাসত মহাত্মা গান্ধি মেমোরিয়াল হাই স্কুলের ছাত্র সত্যজিৎ রায় অষ্টম স্থান অধিকার করেছে। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৯২। এছাড়া ওই স্কুলের দুজন ছাত্র দশ স্থান অধিকার করেছে তারা হল, সৌভিক সুতার দাস, তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৯০। আর পার্থিব বিশ্বাস, তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৯০।
বাঁকুড়া বঙ্গ বিদ্যালয়ের ২৩ জন ছাত্র এবার প্রথম দশের তালিকায় স্থান পেয়েছে। তার মধ্যে সখী কুণ্ডু নামে এক ছাত্রী দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে।
কান্দির রাজা মণীন্দ্রচন্দ্র উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী রুমানা ২০১৯ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পঞ্চম স্থান দখল করেছিল। রুমানার বাবা রবিউল আলম ভরতপুর গয়েশাবাদ অচলা বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক। মা সুলতানা পারভিন ইংরেজির শিক্ষিকা। প্রথম স্থানাধিকারী হিসেবে তার নাম ঘোষণা না করে সর্বোচ নম্বর প্রাপক হিসেব অভিহিত করা হলেও শীর্ষে স্থান করে নেওয়ায় খুশি রুমানা। তার ইচ্ছা ভবিষ্যতে ডাক্তার হওয়া।
রুমানার পরিবারের শিক্ষায় একটা বিশেষ ঐতিহ্য আছে। তার ঠাকুরদাদা মুহাম্মদ সৈয়দ ১৯৬২ সালে সাম্মানিক স্তরে কান্দি কলেঝে দর্শনে দ্বিতীয় হয়েছিলেন। পেশাগতভাবে তিনি ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। তাই তার ঠাকুরমা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, রুমানা তার স্বামীর যোগ্য উত্তরাধিকারণী।
মুর্শিদাবাদের মেয়ে এবারের উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম স্থান অধিকার করায় উচ্ছ্বাস চেপে রাখতে পারেননি বহরমপুরের সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরী। ফেসবুকে অধীর লেখেন, ‘মুর্শিদাবাদের তথা বাংলার আমাদের ঘরের কন্যা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম হল, আমাদের বুকটা গর্বে ভরে গেল, নাম রুমানা সুলতানা। শিক্ষা যে শিখবে তার সম্পত্তি, রুমানা আমাদের শিক্ষা দিল। সবাই পড়ো সবাই এগিয়ে চলো। আজ বাংলার নতুন সুলতানা রাজ্যকে কাঁপিয়ে দিল, অনেক অনেক শুভেচ্ছা।’
উল্লেখ্য, এ বছর উচ্চ মাধ্যমিকে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৮ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন। পাশের হার ৯৭.৬৯ শতাংশ। ছেলেদের ৯৭.৭০ শতাংশ। মেয়েদের প্রায় সমান। জেলায় পাশের হার ৯০ শতাংশ। সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে পাশের হার ৯৭.৪৯ শতাংশ। তফশিলিদের ক্ষেত্রে পাশের হার ৯৭ শতাংশ। কলা বিভাগে উত্তীর্ণ ৯৭.৩৯ শতাংশ। বিজ্ঞান বিভাগে উত্তীর্ণ ৯২.২৮ শতাংশ। এবছর উচ্চ মাধ্যমিকে এ প্লাস পেয়েছেন ৪৯,৩৭০ জন। ৭০ থেকে ৭৯ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন পেয়েছেন ৯৫,৭৫৮ জন। ৬০ থেকে ৫৯ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন ১ লাখ ৬৫ হাজার ১৮৬ জন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct