আপনজন ডেস্ক: করোনা সংক্রমণের কারণে দেশজুড়ে লকডাউন হয়েছে। তার জেরে সবচেয়ে বিপদের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। বিভিন্ন রাজ্যে আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকরা বাড়ি ফিরতে না পেরে আটকে পড়ায় চরম খাদ্য সঙ্কটে পড়তে হয়। মূলত পরিযায়ী শ্রমিকদের সুবিধার্থে মঙ্গলবার ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে দেশের সব রাজ্য আর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে ‘এক দেশ, এক রেশন কার্ড’-এর ভিত্তিতে বিনামূল্যে রেশন বিতরণের নির্দেশ দিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। দেশের মধ্যে বর্তমানে ৩৪ রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের মধ্যে দিল্লি, পশ্চিমবঙ্গ ও অসম বাদে গোটা দেশেই ‘এক দেশ, এক রেশন কার্ড’ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। তাই এই রাজ্যগুলিকে অবিলম্বে ‘এক দেশ, এক রেশন কার্ড’-এর ভিত্তিতে বিনামূল্যে রেশন বিতরণের নির্দেশ দেয় বিচারপতি অশোক ভূষণ এবং বিচারপতি এমআর শাহের গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ। এর ফলে, মাত্র একমাসের মধ্যে এই কটি রাজ্য ‘এক দেশ, এক রেশন কার্ড’ ব্যবস্থা চালু করা নিয়ে প্রবল চাপের মুখে পড়ল বলে মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, তিন সমাজকর্মী হর্ষ মান্দার, অঞ্জলি ভরদ্বাজ ও জগদীপ ছোকর পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশার সমাধানে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিলেন আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণের মাধ্যমে। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই এই নির্দেশ। তাদের আর্জিতে বলা হয়েছিল, পরিযায়ী শ্রমিকরা যাতে রেশন ও খাদ্য সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয় তা নিয়ে যেন সুপ্রিম কোর্ট বিশেষ নির্দেশ দেয়। যাতে ‘এক দেশ এক রেশন’ প্রকল্পের ফলে পরিযায়ী শ্রমিক দেশের অন্য যে কোনও রাজ্যে নিজের অংশের রেশন তুলতে পারবেন। ফলে খাদ্যবণ্টন প্রক্রিয়া আরও সহজ হয়ে যাবে। লাভবান হবেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকরা। এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য সরকারগুলিকে নির্দেশ দেয়, যেসব পরিযায়ী শ্রমিকের রেশন কার্ড নেই তাদের জন্য খাদ্য সরবরাহ করতে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করতে। আর কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তারা যেন রাজ্য সরকারগুলির দাবিমতো খাদ্য সরবরাহ করে। সেই সঙ্গে করোনা মহামারির কারণে গরিব মানুষদের জন্য শুকনো খাবার, কমিউনিটি কিচেন চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
রেশন ব্যবস্থা থেকে যাতে পরিযায়ী শ্রমিকরা বঞ্চিত না হয় তার জন্য শীর্ষ আদালত ৩১ জুলাইয়ের মধ্যেই অসংগঠিত ও পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম রেজিস্ট্রেশনের জন্য এনআইসির পরামর্শে একটি জাতীয় পোর্টাল তৈরি করার জন্য কেন্দ্রকে নির্দেশ দিয়েছে।
উল্লেখ্য, বহু রাজ্যে চালু হলেও পশ্চিমবঙ্গে ‘এক দেশ এক রেশন কার্ড’-এর ব্যবস্থা চালু করা হয়নি পশ্চিমবাংলায়। রাজ্য সরকারের যুক্তি ছিল, এতে রাজ্যের উপর বাড়তি চাপ বাড়বে। তবে গত ১১ জুন সুপ্রিম কোর্ট পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল অবিলম্বে ‘এক দেশ, এক রেশন কার্ড’ চালু করার জন্য। যদিও সময় বেঁধে দেয়নি।
এরপর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে রাজ্যে ‘এক দেশ এক রেশন কার্ড’ ব্যবস্থা চালু হযে যাবে। কিন্তু মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ে রাজ্য সরকারের হাতে মাত্র একমাস সময় থাকছে। সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়েই রাজ্যে জোর তৎপরতা শুরু হয়েছিল। তাই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ‘এক দেশ এক রেশন কার্ড’ ব্যবস্থা চালু করার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারকে তেমন কোনও অসুবিধার মধ্যে পড়তে হবে না বলে আধিকারিক সূত্রে দাবি করা হচ্ছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct