ফৈয়াজ আহমেদঃ ওড়িশায় বঙ্গোপসাগরের উপকূলে ভয়ঙ্কর সুন্দর এক পর্যটন কেন্দ্র হচ্ছে ‘ভিতরকণিকা’৷ বৈতরণী, ব্রাহ্মণী ও ধামরা নদীর মোহনায় ম্যানগ্রোভ অরণ্যে ঘেরা এই ভিতরকণিকা ন্যাশনাল পার্ক ও ওয়াইল্ড লাইফ স্যানচুয়ারি৷
ভিতরকণিকা ম্যানগ্রোভ ১৯৫২ সাল পর্যন্ত জমিদারি বন ছিল। এর পর ওড়িশা সরকার জমিদারি ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে এবং বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণে জমিদারি বনগুলিকে নিয়ে আসে। ১৯৭৫ সালে, ৬৭২ বর্গ কিমি এলাকাকে ভিতরকণিকা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়।
এখানে প্রায় ৬০ ধরনের ছোট-বড় ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের দেখা মেলে৷ দেখা মেলে কুমির, হরিণ, ময়ালসহ বিভিন্ন প্রজাতির সাপ, বুনো শুয়োর, হায়না, বানর ও পরিযায়ী পাখিসহ শতাধিক প্রজাতির পাখি৷ দেখার জন্য কষ্ট করে উঁকি-ঝুঁকি দিতে হবে না আপনাকে৷ শুধু নিঃশব্দে অপেক্ষা করতে হবে৷
শীত, বসন্ত, গ্রীষ্ম, বর্ষা এড়িয়ে একদিন সকালে বৈতরণী নদীর পাড়ে চাঁদবালি থেকে যন্ত্রচালিত নৌকায় চলে যাবেন ‘মিনি আমাজান’ অর্থাৎ ভিতরকণিকার উদ্দেশে। দু’পাশের ‘চলমান দৃশ্য’ দেখতে দেখতে চোখ জুড়িয়ে যাবে আপনার৷ তারপর নৌকা যখন ‘খোলা ক্রিক’ বা খাঁড়ির মধ্যে প্রবেশ করবে তখন ভয়ঙ্কর সুন্দরের মুখোমুখি হবেন আপনি৷
ভিতরকণিকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এক কথায় বললে বলতে হবে অনবদ্য৷ একপাশে সমুদ্র সৈকত অন্যপাশে নদী ও খাঁড়ির জলে ঘেরা ঘন জঙ্গল৷ সেখানে সূর্যের আলো পৌঁছায় না, অথচ জোয়ার-ভাঁটায় তার রূপ বদলে যায়৷ এর পাড়েই অবস্থিত ফরেস্ট অফিস থেকে আপনাকে ভ্রমণের অনুমতি নিতে হবে। সংকীর্ণ জলপথে জঙ্গলের পাশ দিয়ে যখন চলবেন, তখন সহজেই নজরে পড়বে পাড়ে বিশ্রামরত বহু কুমির, জলের ধারে হরিণের সচকিত চাহনি৷ কানে আসবে বিভিন্ন পাখ-পাখালির ডাক৷ আর জঙ্গলের নাম না জানা ফুলের গন্ধে আপনার মন মেতে উঠবেই৷ শান্ত সবুজে মোড়া দ্বীপের ছোট-বড় গাছের ফাঁক দিয়ে নানা দৃশ্য দেখতে দেখতে পৌঁছে যাবেন আপনি জঙ্গলের কেন্দ্র বিন্দু ‘ডাঙ্গমল’ বনবাংলোয়।
এখানে রাত কাটানোর অভিজ্ঞতাই আলাদা৷ অন্ধকার গাঢ় হতেই শুরু হবে জীব-জন্তু, কীট-পতঙ্গের ডাকাডাকি ও তাদের আনাগোনা৷ রাত জাগা পাখির সঙ্গে আপনাকে কিছুটা সময় কাটাতে হবে বনবাংলোর ঘেরা বারান্দায়৷ মাঝে মাঝেই এমন সব রোমাঞ্চকর মুহূর্তের সাক্ষী হবেন আপনি, যা স্মৃতিপটে দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকবে আপনার৷
ফেরার পথে কণিকা রাজ বাড়ি, শিয়ারিয়া গ্রাম খোলা আকাশের নীচে কালো পাথরের ‘খরা খাই’ দেবী মূর্তি দেখে নিতে পারবেন৷ জেনে রাখা ভালো যে, আজও এখানে কোনও ঘরের দরজাতে কপাট নেই৷ সত্যিই কণিকা রাজ্য বৈচিত্রময় এবং তার ভিতর ভয়ঙ্কর সৌন্দর্যে ভরা রয়েছে৷
কীভাবে যাবেনঃ
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ভদ্রক স্টেশনে নেমে সড়ক পথে ৫৫ কিলোমিটার দূরে বৈতরণী নদীর পাড়ে চাঁদবালি৷ এখান থেকেই জল পথে ভিতরকণিকায় প্রবেশ করতে হয়৷
কোথায় থাকবেনঃ
চাঁদবালিতে ওটিডিসি’র পান্থনিবাস ও অন্যান্য হোটেল রয়েছে৷ জঙ্গলের মধ্যে আছে একমাত্র সরকারি বনবাংলো৷ তবে এখানে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের অনুমোদিত সংস্থার মাধ্যমে প্যাকেজে ঘুরে নেওয়া ভালো৷ নিশ্চিন্ত এবং নিরাপদ তা৷
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct