রফিকুল হাসান, কলকাতা: সংখ্যা অনুপাতে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজনকে প্রার্থী না করায় শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন রাজ্যের অন্যতম সংখ্যালঘু নেতা তথা সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের রাজ্য সম্পাদক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান। সম্প্রতি বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজ্যের ২৯৪ টি বিধান সভা কেন্দ্রের মধ্যে ২৯১ টি কেন্দ্রের প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এর মধ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্য থেকে প্রার্থী করা হয়েছে ৪৬ জনকে। এক্ষেত্রে সংখ্যালঘু আন্দোলনের অন্যতম নেতা মুহাম্মদ কামরুজ্জামান এই প্রতিবেদককে বলেন, পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখলে ২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস ৮৯ জনকে মুসলিম প্রার্থী করেছিল। কিন্তু ২০১৬ সালে এসে তা কমে দাঁড়ায় ৫৭ জনে। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের ২০২১ সালে সেই সংখ্যা একেবারে তলানিতে ঠেকেছে, মাত্র ৪৬ জন। মুহাম্মদ কামরুজ্জামান আরো জানান, সংখ্যা অনুপাতে তপশিলি জাতি সম্প্রদায়ের মানুষদের মধ্য থেকে ৬৪ জন প্রার্থী হওয়া দরকার ছিল। কিন্তু তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৭৯ জনকে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী করেছেন। পাশাপাশি সংখ্যা অনুপাতে তপশিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের মধ্য থেকে ১৬ জনের প্রার্থী হওয়ার কথা থাকলেও একজন বাড়িয়ে ১৭ জনকে তৃণমূল প্রার্থী করেছেন। এতে আমরা খুশি। কিন্তু সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি কেন দ্বিচারিতা? প্রশ্ন কামরুজ্জামানের। তাঁর কথায়, ৩০ শতাংশ মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য ৮৯ জনকে প্রার্থী করার দরকার থাকলেও সর্বসাকুল্যে মাত্র ৪৬ জনকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। আর এই নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন মুহাম্মদ কামরুজ্জামান। তিনি মনে করেন, রাজনীতিতে মুসলিম সম্প্রদায়ের যতটা প্রতিনিধিত্ব করার কথা ছিল তৃণমূল কংগ্রেস এই সুযোগ না দিয়ে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়কে পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা এর তীব্র ধিক্কার জানাই। রাজ্যের সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ ভোটব্যাংকে তার জবাব দেবেন বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেসকে তার পরামর্শ, যারা দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে আছেন তাদেরকে প্রার্থী না করে বহিরাগত প্রার্থী এনে এবং বিশেষ করে কলাকুশলীদের ভোটে দাঁড় করিয়ে তৃণমূল নেত্রী কি বার্তা দিতে চাইছেন? প্রশ্ন কামরুজ্জামানের। যারা মাঠে ময়দানে লড়াই করছেন তাদেরকে প্রার্থী না করে সেলিব্রিটিদেরকে কেন প্রার্থী করা হচ্ছে? এ প্রশ্নও তোলেন কামরুজ্জামান। তাঁর কথায় বিপদের সময় এদেরকে মানুষের পাশে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে তিনি বসিরহাট লোকসভার সাংসদ নুসরাত জাহানের উপমা তুলে ধরে কামরুজ্জামান মনে করিয়ে দেন। মানুষ যখন আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত, লকডাউনে মানুষ যখন খেতে পারছে না। আর সে সময় তৃণমূলের অভিনেত্রী সাংসদ নুসরাত জাহান টিকটক করতে ব্যস্ত। এ থেকে শিক্ষা নিয়ে তৃণমূল নেত্রীর উচিত ছিল যারা মাঠে ময়দানে দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে লড়াই করছেন তাদেরকে এই বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী করে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখে দেওয়া। কিন্তু তা না করে এমন এক সিদ্ধান্ত তৃণমূল নেত্রী নিয়েছেন যার জবাব মানুষ ভোটের বাক্স দেবেন বলে মন্তব্য করেন সংখ্যালঘু নেতা মুহাম্মদ কামরুজ্জামান।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct