জাইদুল হক: সাচার কমিটির রিপোর্টে পশ্চিমবঙ্গে সরকারি চাকরিতে মুসলিমদের উপস্থিতি যে কম তা প্রথম নজরে আসে। সাচার রিপোর্টই প্রথম সরকারি রিপোর্ট যার মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গে সরকারি চাকরিতে মুসলিমদের অবস্থান সম্পর্কে জানা যায়। সেই খারাপ পরিস্থিতি দীর্ঘ বাম শাসনের ফল। তাই মুখ পোড়ে বামেদের। তারপর মুসলিমরাও বামেদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। সেই সময় মুসলিমদের এই বঞ্চনার প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে মমতা তাই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিার দল ক্ষমতায় এলে মুসলিমদের সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করবেন। অবশ্য রাজ্যে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর মূলত মুসলিমদের চাকরিতে সংরক্ষণ দেওয়ার উদ্দেশ্যে সরকারি চাকরিতে ওবিসি-এ তালিকাভুক্তদের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণের সুবিধা ঘোষণা করে তৃণমূল সরকার। সেই সঙ্গে রয়েছে ওবিসি-বি তালিকাভুক্তদের জন্য ৭ শতাংশ সংরক্ষণ, যেখানে অবশ্য কিছু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ও রয়েছে। এই ওবিসি সংরক্ষণের বিষয়ে ১০০ পয়েন্ট রোস্টারও প্রকাশ করা হয় রাজ্য সরকারের তরফে। সেখানে বিস্তারিত বলা আছে কিভাবে সংরক্ষন নীতির বাস্তবায়ন হবে।
সেই ঘোষণার পর এই সংরক্ষণ ধীরে ধীরে বাস্তবায়নের কথা বলা হয় এক সরকারি নির্দেশিকায়। কিন্তু নির্দেশিকা মেনে এখন চলতে চাইছে বহু সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। উল্লেখ্য, ওবিসি-এ তালিকাভুক্তরা সবাই মুসলিম সম্প্রদায়ের।
সম্প্রতি ওবিসি-এ তালিকাভুক্তদের জন্য সংরক্ষণ নীতি না মানার অভিযোগ উঠেছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। জানা গেছে, রাজ্য সরকারের অধীনে থাকা বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় গত ৩ ফেব্রুয়ারি প্রফেসর, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ও অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফের নিয়োগের জন্য এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। (বিজ্ঞপ্তি নং: Advertisement No. 03/2020-2021 Dated: 03 February, 2021)
যত বিতর্ক এই বিজ্ঞপ্তিকে ঘিরে। এই বিজ্ঞপিতে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় ৪৯জন শিক্ষক নিয়োগের কথা বলা হলেও তাতে ১০০ পয়েন্ট রোস্টার মেনে ওবিসি-এ বা ওবিসি-বি তালিকাভুক্তদের জন্য কোনও সংরক্ষণ রাখা হয়নি। শুধু মাত্র এসসি/এসটিদের জন্য সংরক্ষণের কথা জানানো হয়েছে।
ওই বিজ্ঞপ্তি সূত্র অনুয়ায়ী, এই সকল শিক্ষক নিয়োগ করা হবে যেসব বিভাগে সেগুলি হল, মরিকিউলার বায়োরজি অ্যান্ড হিউম্যান জেনেটিক্স, ফিজিওলজি, নিউট্রিশন ও পাবলিক হেল্থ, ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন, জিওসপাটিয়াল সায়েন্স, সাইকোলজি ও উইমেন স্টাডিস। এর মধ্যে প্রফেসর পদে যে সাতজন নিয়োগ করার কথা বলা হযেছে তার সবকটিই সাধারণ শ্রেণির। যদিও অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর পদে ১৪টির মধ্যে সাতটি এসসি সংরক্ষিত ও অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পদে এসসি ও এসটি উভয়দের সংরক্ষণের কথা বলা হযেছে। তবে তিনটি পদের ক্ষেত্রে ওবিসিদের ব্রাত্য করে তোলার অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। এমনকি শারীরিক অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য সংরক্ষণও এই তালিকায় স্থান পায়নি। এ নিয়ে ছাত্র সংগঠন ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্টস কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার রাজ্য সম্পাদক আরিয়েন সুলতান এক চিঠি লিখে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালযের উপাচার্য নিমাই চন্দ্র সাহার কাছে এর প্রতিবাদ করে ওবিসিদের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন। ওই চিঠিতে আরও দাবি জানানো হয়েছে, অবিলম্বে যেন সংরক্ষণ নীতি মেনে ওবিসিদের জন্য সুযোগ দিয়ে নতুন করে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।
এ ব্যাপারে আরিয়েন সুলতান ‘আপনজন’কে জানান, ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্টস কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার তরফ থেকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালযের উপাচার্য নিমাই চন্দ্র সাহার কাছে ৫ ফেব্রুয়ারি এ ব্যাপারে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়েছে। আরিয়েন বলেন, উপাচার্য নিমাই চন্দ্র সাহা তাকে মোবাইলে জানিয়েছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ বিভাগের অনুমতি নিয়ে বিভাগ ভিত্তিক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এই বিভাগ ভিত্তিক ১৩ পয়েন্ট রোস্টারের উপর সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশ থাকা সত্ত্বেও কীভাবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হল সেই প্রশ্ন তোলেন আরিয়েন সুলতান।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালযের বিরুদ্ধে ওবিসি সংরক্ষণ নীতি না মানার অভিযোগ নিয়ে অবশ্য বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালযের উপাচার্য নিমাই চন্দ্র সাহার কোনও মতামত পাওয়া যায়নি। তবে, আরিয়েন সুলতান, অবিলম্বে সংশোধিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করলে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হবেন বলে জানান।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct