আজাহারউদ্দিন, পুরশুড়া: দিল্লি থেকে একের পর এক হেভিওয়েট বিজেপি নেতারা পশ্চিমবঙ্গে বারে বারে আসছেন। আর আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বাংলা দখলের স্বপ্ন দেখছেন। দিল্লি থেকে এভাবে বাংলায় ঘাঁটি গাড়াকে আগেই তৃণমূল কংগ্রেস কটাক্ষ করেছিল। দলনেত্রী তাদেরকে বহিরাগত তকমা দিয়েছিলেন। এবার সেই বহিরাগতদের নয়া তকমা দিলেন তৃণমূল নেত্রী। সোমবার হুগলির পুরশুড়ার সেকেন্দারপুরে এক জনসভায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, বিজেপি হয়ে গিয়েছে বহিরাগত জ্বালাও পার্টি। বাক্স প্যাঁটরা নিয়ে এসে বলছে হাম বাঙ্গাল কো গুজরাট বানা দেঙ্গে ।
একথা অবশ্য ঠিক, রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন তারা ক্ষমতায় এলে বাংলাকে গুজরাত বানাবেন। তার পাল্টা হিসেবে এদিন মমতা বললেন, ‘গুজরাট কো হাম বাঙ্গাল বানা দেঙ্গে।’
গুজরাতে যে বিজেপি দাঙ্গা করেছে, তার জন্য বহু মানুষের প্রাণ গেছে। সেকথা স্মরণ করিয়ে দেন জনতাকে। মমতা বিজেপি যে দাঙ্গাবারেজ দল তা প্রমাণ করতে সাম্প্রতিক দিল্লি দাঙ্গার উদাহরণ টেনে আনেন। তিনি বলেন, দেশের সকল মানুষ যখন করোনার জন্য কষ্ট পাচ্ছিল তখন, তারা দিল্লিতে দাঙ্গা করেছে। মমতা যে কোনও ধরনের দাঙ্গা রুখতে বদ্ধ পরিকর তা পরিষ্কার করে জানিয়ে দেন। এর জন্য তিনি কোনওভাবেই বিজেপির কাছে মাথা নোয়াতে চান না। তাই মমতা জোর গলায় বললেন, বিজেপির কাছে মাথা নত করার আগে নিজের গলা নিজেই কেটে ফেলব, তাও ভি আচ্ছা হ্যায়। তাও ভি সাচ্চা হ্যায়।
এই বাংলায় সব শ্রেণির মানুষের জন্য যে নিবেদিত প্রাণ মমতা, এদিন তার সপক্ষে কিছু উন্নয়নের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। মমতা জানান, ওবিসি ও সংখ্যালঘু ছাত্র-ছাত্রীদের ২ কোটি স্কলারশিপ দেওয়া হয়েছে। তফশিলি ভাই-বোনেদেরও প্রায় ৯০ লাখ স্কলারশিপ দেওয়া হয়েছে। আগে একটা কাস্ট সার্টিফিকেট পেতে এক-দু’বছর লেগে যেত। আর দুয়ারে সরকারের মধ্যে দিয়ে ১০ লক্ষ কাস্ট সার্টিফিকেট দিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাদ বাকিরাও পেয়ে যাবে।
আর সাধারন মানুষ যাতে খাদ্য সঙ্কটে না থাকে সে প্রসঙ্গে বললেন, তৃণমূল সরকার আগামী দিনেও বিনামূলে জনগণকে রেশন দেবে। বিজেপির মতো সবার অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে বলে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয় না তৃণমূল। তাই ফ্রিতে রেশন দেওয়া হচ্ছে, ভবিষ্যতেও দেওয়া হবে। কারণ রাজ্যে তৃণমূল ছিল এবং তৃণমূলে থাকবে। আর তারপর বিজেপি হয়ে যাবে ভোঁ-ভাঁ। বিজেপি বাই বাই। দেখা নেই। পালিয়ে যা পালিয়ে যা। আমরা করে বলছি। ফ্রিতে রেশন দিচ্ছি কিনা। দিচ্ছি দেব। কারণ আমরাই ছিলাম, আমরাই থাকব।
তুমি যদি নেতাজি নেতাজি করতে, আমি স্যালুট জানাতাম। তা না করে যা করেছ, বাংলাকে অপমান করেছ, নেতাজি সুভাষকে অপমান করেছ। এর আগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে অপমান করেছ। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছ। যখন কোভিডে সবাই কষ্ট পাচ্ছিল তখন দিল্লিতে দাঙ্গা করেছ।
তৃণমূল সরকার আগামী দিনেও বিনা পয়সায় রেশন পাবে। এটা প্রতিশ্রুতি নয়। বিজেপির মতো নয় যে বলছি সবার অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। তারপরে বিজেপি ভোঁ-ভাঁ। বিজেপি বাই বাই। দেখা নেই। পালিয়ে যা পালিয়ে যা। সেই সঙ্গে স্লোগন তোলেন ‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম, বিদায় যাও বিজেপি, বাম’। ‘হরে কৃষ্ণ হরে হরে, তৃণমূল ঘরে’।
এদিন রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে ভিক্টোরিয়ায় অপমানের কথা তোলেন মমতা। বিজেপির সৌজন্যতা নিয়ে চরম সমালোচনা করেন। এছাড়া তৃণমূল ছেড়ে যাওয়া কিংবা প্রতীক্ষায় থাকা নেতাদের বিদ্ধ করেন কড়া মন্তব্যে। এ প্রসঙ্গে মমতা বলেন, কেউ কেউ লোভী আছে। ভাবছে বিজেপিতে গিয়ে নাম লেখাই। আমি বলছি ভাল করে লেখাও। এরপরে আর তৃণমূলে আসবার চেষ্টা করবে না।
এদিনের সভায় জেরা তৃণমূল নেতৃত্ব সহ যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, পুরও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সাংসদ কল্যাণ ব্যানার্জি, সাংসদ অপরূপা পোদ্দার, পুরশুড়ার বিদায়ক ডা. এম নুরুজ্জামান, হুগলি জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি দলীপ যাদব, জেলা সভাধিপতি আলহাজ সেখ মেহবুব রহমান, ইন্দ্রনীল সেন, সুজাতা মণ্ডল, নজিবুল করিম প্রমুখ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct