ফৈয়াজ আহমেদ: এই ‘ডেড সি’র জল এতটাই ঘন যে ওই জলেতে কেউ চাইলে শুয়েও থাকতে পারে। শুধু তা-ই নয়, চাই কি শুয়ে শুয়ে বইও পড়া যায় এখানে। কিংবা ল্যাপটপ নিয়ে গিয়ে ওখানে শুয়ে শুয়ে নেট ব্রাউজও করা যাবে। তবে এর নাম কেন ‘ডেড সি’ হলো?
প্রায় তিন মিলিয়ন বছর পূর্বে বর্তমান জর্দান নদী, মৃত সাগর এবং ওয়াদি আরাবাহ অঞ্চল লোহিত সাগরের জলেতে বারবার প্লাবিত হত। এর ফলে একটি সরু উপসাগরের সৃষ্টি হয়। উপসাগরটি জেজরিল উপত্যকায় একটি সরু সংযোগের মাধ্যমে লোহিত সাগরের সাথে যুক্ত ছিল ।
প্রাকৃতিক তত্ত্ব অনুযায়ী প্রায় ২ মিলিয়ন বছর পূর্বে উপত্যকা এবং ভূমধ্যসাগরের মধ্যবর্তী স্থলভাগ যথেষ্ট উচ্চতা লাভ করে। ফলে মহাসাগরের প্লাবনে এই অঞ্চলে সৃষ্ট উপসাগরটি পরিবেষ্টিত হয়ে হ্রদে পরিণত হয়।
আরও পড়ুন:
নাম ‘ডেড সি’ হলেও এটা কিন্তু মোটেও কোনো ‘সি’ বা সাগর নয়। ‘মৃত সাগর’ নাম হলেও এটা আসলে একটা হ্রদ। তবে মিঠাজল নয়, এর জল ভীষণ লবণাক্ত। সাগরের লবণাক্ত জল এখানকার তুলনায় কিছুই নয়। এখানকার জলের লবণাক্ততা সাগরের জলের তুলনায় সাড়ে আট গুণ বেশি! এত নোনতা জলেতে না বাঁচতে পারে কোনো মাছ, না বাঁচতে পারে সাগরের নিচের অন্য কোনো গাছ।
এই বিশাল হ্রদে তাই কোনো মাছই নেই। নেই জলের নিচের কোনো গাছপালাও। আর সে কারণেই এই হ্রদকে বলা হয় ‘ডেড সি’ বা ‘মৃত সাগর’।
তবে মাছ নেই বলে যে এই হ্রদে কোনো জীবন্ত প্রাণীই নেই, তা কিন্তু নয়। এই হ্রদে বাস করে নানা রকমের ব্যাকটেরিয়া আর ছত্রাক। ব্যস, আর কিচ্ছুটি নেই।
আরও পড়ুন:
এই হ্রদ কিন্তু মোটেও বিষাক্ত নয়। অনেকেই ভাবে, নির্ঘাত এই হ্রদের জল বিষাক্ত। নইলে এতে কোনো মাছ বাঁচে না কেন? আসলে এখানে কোনো প্রাণী নেই, স্রেফ জলের লবণাক্ততার কারণে, অন্য কোনো কারণে নয়।
শুধু তা-ই নয়, এই হ্রদ অঞ্চলটি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। এখানকার আবহাওয়া অনেক রোগ সারিয়ে তোলার জন্য তো ভালোই, এই হ্রদের তীর সূর্যস্নান করার জন্যও যাকে বলে একেবারে মোক্ষম জায়গা। তাই জায়গাটি দিন দিন পর্যটকের কাছেও খুবই প্রিয় হয়ে উঠছে। বিশেষ করে যাঁরা স্বাস্থ্য ভালো করতে ঘুরতে-টুরতে বের হন, তাঁদের জন্য তো এটা যাকে বলে এক টুকরো স্বর্গ। হ্রদটি ইসরায়েল, পশ্চিমতীর ও জর্ডানের সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত।
আরও পড়ুন: