সঞ্জীব মল্লিক, বাঁকুড়া:
বাংলার লোকসঙ্গীত ও সংস্কৃতিতে টুসু গান ও টুসু উৎসবের বিশেষ স্থান থাকলেও বর্তমান সময়ে ভাঁটা পড়েছে। তারপরও এখনো গ্রামবাংলায় কান পাতলে শোনা যায় টুসু গান। শোনা গেল বাঁকুড়া জেলার শুশনি ডাঙ্গা গ্রামে। যেখানে আট থেকে আশি সকলেই টুসু উৎসবে অংশগ্রহণ করেছেন ।
টুসু উৎসব এক প্রকার লোকউৎসব। এটি প্রচলিত বিশ্বাস ও শস্যকাটার আনন্দোৎসবের এক সমন্বিত রূপ। টুসু উৎসব শুরু হয় অগ্রহায়ণ মাসের শেষ দিনে, আর শেষ হয় পৌষ-সংক্রান্তি বা মকর-সংক্রান্তির পুণ্যলগ্নে। টুসু লৌকিক দেবী এবং তাঁকে কুমারী বালিকা হিসেবে কল্পনা করা হয়। কুমারী মেয়েরাই এই টুসুপুজার প্রধান ব্রতী ও উদ্যোগী। মাটির মূর্তি বা রঙিন কাগজের চৌদল দেবীর প্রতীকরূপে স্থাপন করা হয়। পূজার উদ্যোগী বালিকা ও তরুণীরা প্রচলিত আচারবিধি অনুযায়ী পূজার যাবতীয় কর্ম সম্পন্ন করে। টুসু অবৈদিক, অস্মার্ত, অপৌরাণিক এবং অব্রাহ্মণ্য এক উৎসব।
টুসু অনুষ্ঠান উপলক্ষে মেয়েরা টুসু সঙ্গীত পরিবেশন করে, যা এ উৎসবের বিশেষ অঙ্গ ও মূল আকর্ষণ। টুসু গান আকারে ছোট হয় এবং গ্রাম্য নারীরা সেগুলি তাৎক্ষণিকভাবে মুখে মুখে রচনা করে। গানগুলি পল্লিবাসীর লোকায়ত সুখ-দুঃখ, আশা-আকাঙ্ক্ষা ও প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসার এক অনন্য প্রকাশ। প্রসাদ হিসেবে বাড়িতে ব্যবহৃত মুলো শাক ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়ে থাকে । উৎসবান্তে প্রতিমা বিসর্জন খুবই বৈচিত্র্যময় ও বেদনাদায়ক হয়। এ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে গ্রাম্য মেলাও বসে।
আরও পড়ুন:
টুসু শব্দটির উদ্ভব সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে। ধানের তুষ থেকে ‘টুসু’ শব্দের উৎপত্তি বলে অনেকে মনে করেন। পশ্চিমবঙ্গে প্রচলিত পৌষালি উৎসব ‘তুষতুষালি ব্রতকথা’র মধ্যে এ মতের সমর্থন পাওয়া যায়। টুসু দ্রাবিড় অস্ট্রিক ভাষাবর্গের কোল, মুন্ডা, ওরাওঁ, সাঁওতাল, ভূমিজ, ভুঁইয়া, কুর্মি, মাহাতো প্রভৃতি সম্প্রদায়ের উপাস্য দেবী বলে সাধারণ জনমত প্রচলিত।
শুশনিডাঙ্গা গ্রামের পারুল মাখর নামে এক মহিলা বলেন , আমি মা জেঠিমা কে ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি ওনারা টুসু পুজো করতো তাদের কাছ থেকেই আমরা শিখেছি তখন থেকেই আমরা টুসু পুজো করে আসছি তবে এখন টুসু পুজোতে ভাটা পড়লেও আমাদের গ্রামে এখনও টুসু পুজো হয়ে থাকে ।