নাজমা আহমেদ: স্পষ্ট কথায় বললে, অনেকেই ভাবেন মেয়ে বাচ্চার জন্ম দিয়ে দিলে পলিসিস্টিকের জন্য আর কোনো টেনশন থাকবে না। কেন একটা সামান্য কারণে সদ্য যৌবনে পা রাখা, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখা একটি মেয়ের বিয়ের কথা ভাববেন?
লাইফস্টাইল ও পরিবেশের পরিবর্তনের জন্য শহরের কিশোরী, তরুণীদের মধ্যে এই সিনড্রমে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা হুহু করে বাড়ছে ঠিকই। তা বলে মেয়ের তাড়াতাড়ি বিয়ে দিলে পিসিওএস প্রতিরোধ করা যাবে এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। যুগ বদলেছে। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের কল্যাণে অহেতুক ভয় পাওয়ার কিছু নেই। পলিসিস্টিক ওভারির চিকিৎসায় আমূল পরিবর্তন হয়েছে। পলিসিস্টিকের জন্য তাড়াতাড়ি বিয়ে করে গর্ভধারণ করার দরকার নেই। তবে ৩০ বছরের মধ্যে মা হয়ে যাওয়াই ভালো। তা না হলে অন্যান্য জটিলতা হতে পারে।
শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রম হয়। অনিয়মিত ঋতুস্রাব হলে ডিম্বাণু নিঃসরণ ঠিকমতো হয় না। এটা এমন কিছু সমস্যার বিষয় নয়। তা ছাড়া, পলিসিস্টিক ওভারি হলেই যে অপারেশন করতে হবে- এমন কোনো দরকার নেই।
আরও পড়ুন:
উপসর্গ :
অনিয়মিত পিরিয়ড, পিরিয়ডের সময় পেট ব্যথা, অতিরিক্ত ব্লিডিং হওয়া, চিবুক-ঠোঁটের ওপরের অংশে অবাঞ্ছিত লোম, মোটা হয়ে যাওয়া, ওবেসিটি আক্রান্ত হওয়া, থাইরয়েডের সমস্যা হওয়া।
প্রতিকার :
আরও পড়ুন:
প্রাথমিক পর্যায়ে নিয়মিত শরীরচর্চা আর সুষম খাদ্য খেয়েই পিসিওএস মোকাবিলা করা যায়। এক্সারসাইজ, ডায়েটিং ও জীবনযাপন নিয়ন্ত্রণ করার ছ’মাস পর ফের গাইনোকলজিস্টের কাছে যান। আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করে ডাক্তার যদি দেখেন পিসিওএস-এর সমস্যা কমেছে, ঋতুচক্র স্বাভাবিক হয়েছে তাহলে এই পদ্ধতিই রোগীকে চালিয়ে যেতে হবে। সমস্যা থেকে গেলে কিছু ওরাল মেডিসিন, মূলত পিল দেওয়া হয়। কুমারী মেয়েরাও এইসব পিল দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে পারেন। পিসিওএস-এ আক্রান্ত বিবাহিত মেয়েরাও এই পিল নিতে পারেন। এগুলি গর্ভনিরোধক হিসাবেও কাজ করে। তাই বিয়ের পরও এই ওরাল মেডিসিন দিয়ে দিব্যি চিকিৎসা চলে।
মা হতে চাইলে :
প্রেগন্যান্সি চাইলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওরাল মেডিসিন নেওয়া বন্ধ করতে হবে। এরপর যদি অন্তঃসত্ত্বা হতে কোনো অসুবিধা হয় তাহলে ডাক্তারের কাছে গিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করে নিলেই সমস্যার সমাধান হবে। এই রোগীদের প্রেগন্যান্সির সময় ব্লাড সুগার ও ব্লাড প্রেশার বাড়তে পারে। এছাড়া অন্য সমস্যা হলে সিস্টগুলিকে পাংচার (ড্রিলিং) করে দেওয়া হয়। তাতে সাময়িকভাবে ডিম্বাণু নিঃসৃত হতে পারে। তবে এখন এত আধুনিক ওষুধ বেরিয়েছে যে ড্রিলিং করার দরকার হয় না।
আরও পড়ুন:
সন্তানের জন্মের পর :
সন্তানের জন্মের পর অনেকেই পিসিওএস-এর চিকিৎসা ছেড়ে দেন। তখন অনেক ক্ষেত্রেই ফের পলিসিস্টিক ওভারি ফেরত আসে। অনেকে মোটা হয়ে যান, ব্লাড সুগার লেভেল বর্ডার লাইনে এসে যায়। সে রকম হলে দ্রুত ডাক্তার দেখিয়ে পিসিওএস-এর চিকিৎসা শুরু করতে হবে।