আস মুহাম্মদ কাইফ, রায়পুর: উত্তরাখণ্ডে এবার গ্রাম থেকে উঠে আসা তিন মুসলিম তরুণী জুডিশিয়াল সিভিল সার্ভিসে নজরকাড়া ফল করল। ২২ ডিসেম্বর উত্তরাখণ্ডের জুডিশিয়াল সিভিল সার্ভিসের ডে ফল প্রকাশ হয়েছে তাতে স্থান করে নিয়ে একই সঙ্গে ওই তিনজনই বিচারক পদে আসীন এই তিনটি মেয়েই গ্রামাঞ্চল থেকে এসেছিল। এই মেয়েদের মধ্যে দু'জন হলেন রুরকির নিকটবর্তী শাহপুর এবং বৌদি গ্রামে, তৃতীয় মেয়ে হরিদ্বারের সরাই গ্রামের হলেও তিনজনের জেলা হরিদ্বার। আরেকটি বিষয় হল তিনটি গ্রামেই উচ্চ বিদ্যালয় স্তরের স্কুলও নেই। এর মধ্যে একটি মেয়ের নাম আয়েশা ফারহীন। আর দ্বিতীয়টির নাম গুলিস্তান আনজুম, তৃতীয় যে মেয়েটিও বিচারক হচ্ছেন তার নাম জাহানআরা আনসারী। তবে, উত্তরাখণ্ড জুডিশিয়াল সার্ভিসের ফলের ভিত্তিতে যে চারজন মুসলিম বিচারক হচ্ছেন তার মধ্যে তিনজনই মেয়ে। এর আগে, ১৮ জন মুসলিম তরুণী উত্তরপ্রদেশের জুডিশিয়াল সার্ভিস এবং ৫ জন রাজস্থান জুডিশিয়াল সার্ভিসে স্থান করে নিয়ে বিচারক হয়েছেন।
গুলিস্তান আনজুম বুড়ি গ্রামের সমাজসেবক হুসেন আহমেদ মালিকের কনিষ্ঠ কন্যা। গুলিস্তান বিচারক হওয়ায় পরিবারে খুশির হাওয়া। হুসেন আহমেদ এ ব্যাপারে বলেন, তার মেয়ের সাফল্য পরিবারের জন্য গর্বের। গুলিস্তান বলেন, তার বাবার স্বপ্ন ছিল ইন্টারের পর থেকেই বিচারক হওয়ার। সেই থেকে আমরা বাবার স্বপ্ন পূরণ এবং সমাজে নিপীড়িতদের পক্ষে ন্যায়বিচারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি ডিএভি থেকে ২০১৬ সালে স্বর্ণপদক দিয়ে এলএলবি করেছিলেন। এর পরে তিনি ক্লিমেটাউনে অবসরপ্রাপ্ত বিচারক ভি কে মহেশ্বরীতে কোচিং করেছিলেন। ২০১৭ সালে প্রথম প্রয়াসে ইন্টারভিউয়ের যাক পেলে চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পাননি। তবে, এবার তার সাফল্য মিলল। গুলিস্তানের ভাই আসাদ হরিদ্বারে জিএসটি বিভাগে অফিসার পদে কর্মরত।আর বোন জিনাত এমএতে স্বর্ণপদক। তিনি রুরকিতে একটি স্কুল পরিচালনা করেন।
জাহানআরা আনসারীর এক ভাইয়ের ট্রাভেল এজেন্টর ব্যবসা। অন্য ভাইয়ে ঠিকাদারির কাজ করেন। তারা লাক্সারের লাক্সারিতে থাকতেন,। এখন তিনি জওলাপুরের সরাইয়ে থাকেন। জাহানারা লাক্সার থেকে প্রথম হাই স্কুল করেছিলেন। তারপরে জওলাপুর থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং দেরাদুন থেকে এলএলবি। এর পরে তিনি এখানে সাংবাদিকতায় ডিপ্লোমা করেছেন। প্রথমে তিনি সাংবাদিকতায় ক্যারিয়ার গড়তে চেয়েছিলেন। জাহানারার বাবা শাহাদাত হুসেনও চাষ করেন। এটি একটি কাকতালীয় ঘটনা যে তিনটি মেয়ের বাবা একজন কৃষক এবং তার বাবা-মা কেউই খুব শিক্ষিত নন এবং মা এমনকি স্কুলেও যাননি। শাহাদাত বলেন, আমরা খুব ভাল করেই জানি যে কেবল শিক্ষাই আমাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে। দেরাদুনে শাহজাহান আনসারী নামে একজন পুলিশ অফিসার রয়েছেন, তার কথা শুনে তিনি ভাবতেন তার মেয়েটিও যেন তার মতো হতে পারে। সেই স্বপ্ন সফল করেছেন জাহানআরা।
আয়েশা ফারহিন রুরকি থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে শাহপুর নামে এই গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা কেবল পঞ্চম পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন এবং মা কখনও স্কুলে যাননি। এখানে চার একর জমি এবং চারটি শিশু রয়েছে। গ্রামে পঞ্চম পেরিয়ে কোনও স্কুল নেই। পরিবারে আটজন আইনজীবী রয়েছেন তবে আইন পড়াশোনা করা আয়েশা প্রথম মেয়ে। জুডিশিয়াল সার্ভিসে নবম স্থান অর্জন করেছেন আয়েশা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct