আপনজন ডেস্ক : মালদা জেলার পান্ডুয়াতে ইতিহাস কথা বলে পর্যটকদের সঙ্গে। হারিয়ে যাওয়া যুগের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এখানকার বিভিন্ন স্থাপত্য। যেমন আদিনা মসজিদ, কুতুব শাহি মসজিদ, একলাখি সমাধিসৌধ কিংবা পির দরবেশদের সমাধি। বাংলা স্বাধীন সুলতান শামসউদ্দিন ইলিয়াস শাহ এখানে তাঁর রাজধানী স্থাপন করেছিলেন। ইলিয়াস শাহি বংশের বেশ কয়েকজন সুলতান শাসনকার্য চালাতেন এখান থেকেই। এই শহরের আরেক নাম ছিল ফিরোজাবাদ, যে নাম সম্ভবত বাংলার আরেক সুলতান শামসউদ্দিন ফিরোজ শাহের থেকে এসেছে। টাঁকশালের জন্য খ্যাতি ছিল এই শহরের। পান্ডুয়াতে রয়েছে জালালউদ্দিন তবরিজি এবং নুর কুতুব আলম নামের দুই নাম করা সুফি সাধকের খানকাহ। তাই, শহরটিকে হজরত পান্ডুয়া বলেও ডাকা হয়।
পান্ডুয়াতে নুর কুতুব আলমের সমাধি এবং একলাখি সমাধিসৌধের মাঝখানে রয়েছে কুতুব শাহি মসজিদ। আকারে ছোটো হলেও দেখতে খুবই সুন্দর। একলাখি সৌধের পাশে থাকলেও দু’টি স্থাপত্যের নির্মাণকালের ফারাক যথেষ্ঠ – দেড় শতাব্দীর কাছাকাছি। পঞ্চদশ শতকের প্রথমভাগে একলাখি সৌধ গড়ে উঠেছিল। তখন বাংলায় চলছে স্বাধীন সুলতানি শাসন। আর কুতুব শাহি মসজিদ তৈরি হয়েছে ষোড়শ শতকের শেষ দিকে, ১৫৮২ সালে। বাংলা ততদিনে দোর্দণ্ডপ্রতাপ মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে। সুফি সাধক নুর কুতুব আলমের সম্মানে এই মসজিদ নির্মাণ করিয়েছিলেন তাঁর বংশধর এবং শিষ্য মখদুম শেখ।
এটিকে সোনা মসজিদ নামেও ডাকা হয়। এই মসজিদের বাইরে সোনালি রঙের আস্তরণ ছিল। সূর্যের আলোয় তা সোনার মতো ঝলমল করত। বড়ো সোনা মসজিদ এবং ছোটো সোনা মসজিদেও এরকম সোনালি রং ছিল। কেউ কেউ বলেন, সত্যিকারের সোনায় গিলটি করা ছিল এই মসজিদ।
গৌড়ের বড়ো সোনা মসজিদের সঙ্গে এটির বেশ সাদৃশ্য আছে। তবে কোনো সুলতানের রাজকীয় পৃষ্টপোষকতায় কুতুব শাহি মসজিদ গড়ে ওঠেনি। মুঘল আমলে নির্মিত হলেও এই মসজিদের গড়ন সুলতানি রীতিরই অনুসারী। এটির মূল উপাদান পাথর এবং ইট। দশটি গম্বুজ ছিল এক সময়ে, যা কালের গর্ভে হারিয়ে গিয়েছে। আর ছিল চারটি মিনার। ভিতরে এখনও পাঁচটি মিহরাব দেখা যায়। প্রধান মিহরাবের উত্তরে রয়েছে একটি উঁচু মিম্বার, ঠিক আদিনা মসজিদের মতো। মিম্বারের সামনে একটি আয়তাকার পাথরের মঞ্চ, যাকে স্থানীয় কোনো দরবেশের সমাধি মনে করা হয়।
কোথায় কোথায় যাবেন
কাছেই রয়েছে আরও কিছু দর্শনীয় স্থান। যেমন আদিনা মসজিদ, সাতাশঘড়া, একলাখি সমাধিসৌধ, আদিনা ডিয়ার পার্ক। ঘুরে আসতে পারেন গৌড়েও। সেখানে আছে বড়ো সোনা মসজিদ, দাখিল দরোয়াজা, লোটন মসজিদ, লুকোচুরি দরোয়াজা এবং আরও কয়েকটি ঐতিহাসিক স্থাপত্য।
কীভাবে যাবেন
হাওড়া বা শিয়ালদহ স্টেশন থেকে উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনে চড়ে পৌঁছবেন মালদা টাউন স্টেশনে। মালদা শহর থেকে মোটামুটি কুড়ি কিলোমিটার দূরে পান্ডুয়া। যাওয়ার জন্য ট্যাক্সি, টাঙা এবং বাস পাওয়া যায়। কলকাতার এসপ্ল্যানেড থেকে বাস ধরেও আপনি মালদা যেতে পারেন।
কোথায় থাকবেন
মালদায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগমের আম্রপালি ট্যুরিজম প্রপার্টি। সেখানে কয়েকদিন থেকে নিশ্চিন্তে গৌড়-পান্ডুয়া ঘুরতে পারেন। এছাড়া মালদায় বেশ কিছু বেসরকারি হোটেল এবং রিসর্টও আছে। বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন ৯৭৩২৮৮০১১০ ফোন নম্বরে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct