আপনজন ডেস্ক: লাভ জিহাদের বিরুদ্ধে আইন করার কথা জানিয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। মঙ্গলবার এই লাভ জিহাদ নিয়ে এক মামলায় এলাহাবাদ হাইকোর্ট দুই জন প্রাপ্তবয়স্ক তাদের পছন্দসই জীবনসঙ্গী বেছে নিতে পারবেন বলে নির্দশ দেওয়ার ঘণ্টা খানেক পর যোগী আদিত্যনাথ জানিয়ে দিলেন, এক মাসেরও কম সময়ে লাভ জিহাদ রুখতে অর্ডিন্যান্স নিয়ে আসা হবে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার এলাহাবাদ হাইকোর্টে দুই বিচারপতির গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ হিন্দু-মুসলিমের বিয়ে নিয়ে করা এক মামলার রায়ে বলেছে, আমরা প্রিয়াঙ্কা ও সালামত আনসারির বিয়েকে হিন্দু-মুসলিম হিসেবে দেখছি না। দুজন ব্যক্তিগতভাবে স্বাধীনভাবে বেড়ে উঠেছেন। তাদের পছন্দমতো একসঙ্গে শান্তির সঙ্গে বসবাস করছেন গত এক বছর ধরে। তাই কোনো ব্যক্তি বা পরিবার তাদের জীবনে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। এই রায় শোনার পরই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী তড়িঘড়ি লাভ জিহাদের বিরুদ্ধে অর্ডিন্যান্সের বিষয়ে তৎপর হন।
ইতিমধ্যে বিজেপি শাসিত বিভিন্ন রাজ্যে এই ‘লাভ জিহাদ’ বন্ধে আইন আনার প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে এবার তাতে বাধ সাধল আদালত। জানিয়ে দিল দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক নিজেদের জীবনসঙ্গী বাছতেই পারেন। সেখানে ধর্ম দেখা হবে না।
বিহার বিধানসভা ভোটের সময় লাভ জিহাদ নিয়ে সোচ্চার হয়েছিলেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তিনি এবং হরিয়ানা, কর্ণাটকের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা লাভ জিহাদ রুখতে আইন করার কথা বলেছিলেন। এই অবস্থায় লাভ জিহাদের তত্ত্বে আঘাত এল দুই জায়গা থেকে। এলাহাবাদ হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, দুই জন প্রাপ্তবয়স্ক তাদের পছন্দসই জীবনসঙ্গী বেছে নিতে পারবেন। সেখানে ধর্ম দেখা হবে না। দেখা হবে, দুজনেই একসঙ্গে জীবন কাটাতে রাজি কি না। আর কানপুরের পুলিশ গত দুই বছরে হওয়া দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিয়ের ঘটনার তদন্ত করে এবং খতিয়ে দেখে জানাল, এই সব ঘটনার সঙ্গে বিদেশি অর্থের কোনো যোগ নেই, চক্রান্তও হয়নি। যে সব ক্ষেত্রে এই বিয়ে আইন অনুযায়ী হয়নি, সেখানে ব্যবস্থা নিয়েছে তারা।
এদিন বিচারপতি পঙ্কজ নাকভি ও বিচারপতি বিবেক আগরওয়াল তাদের রায়ে বলেন, দুই জন প্রাপ্তবয়স্ক চাইলে একসঙ্গে থাকতে পারেন। আইন অনুসারে পারেন। তারা একই লিঙ্গের হতে পারেন অথবা বিপরীত লিঙ্গের। কোনো ব্যক্তি বা পরিবার তাদের জীবনে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। সরকারও নয়। পরিবারের আপত্তি সত্ত্বেও কুশীনগরের সালামতকে বিয়ে করেছিলেন প্রিয়াঙ্কা খারওয়ার। বিয়ের পরে তার নাম হয় আলিয়া। প্রিয়ঙ্কা বা আলিয়ার বাবা পুলিশে অভিযোগ করেন, তার মেয়েকে অপহরণ করা হয়েছে। তখন এলাহাবাদ হাইকোর্টে মামলা করেন সালামত। এলাহাবাদ হাইকোর্ট তার রায়ে বলে, সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদ অনুসারে দুই প্রাপ্তবয়স্কের নিজের ইচ্ছেয় একসঙ্গে থাকার অধিকার আছে। সেখানে কারো হস্তক্ষেপ সম্ভব নয়।
এ ব্যাপারে প্রিয়ঙ্কার বাবার অভিযোগ ছিল, জোর করে ধর্ম পরিবর্তন করানো হয়েছে তার মেয়ের। বিয়ের জন্য ধর্ম পরিবর্তন করানো যায় না। কিন্তু বিচারপতিরা বলেন, তারা এখানে কে হিন্দু কে মুসলিম তা দেখবেন না। তাঁরা দেখবেন, দুই জনের বিয়ের বয়স হয়েছে কি না। আর তারা স্বেচ্ছায় একসঙ্গে আছেন কি না। বিচারপতিরা জানিয়েছেন, প্রিয়াঙ্কা বা আলিয়া চাইলে বাবা ও পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন এবং তাদের আশা, পরিবারের সঙ্গে শ্রদ্ধাশীল হয়ে উপযুক্ত ব্যবহার করবেন তিনি।
অন্যদিকে কানপুরের পুলিশ জানিয়েছে, গত দুই বছরে সেখানে ভিন্নধর্মে বিয়ের ১৪টি ঘটনা ঘটেছিল। প্রতিটি তারা তদন্ত করে দেখেছে। তিনটি ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক ছিল এবং নিজেদের ইচ্ছেয় বিয়ে করেছে। এগারোটি ক্ষেত্রে আইন ভাঙা হয়েছে। তিনটি ক্ষেত্রে ছেলে নিজের নাম বদলে দিয়েছিল। দেখাতে চেয়েছিল সে মেয়েটির ধর্মের। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বাকি ক্ষেত্রে মেয়ের বিয়ের বয়স হয়নি বলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কানপুরের ইন্সপেক্টর জেনারেল মোহিত আগরওয়াল সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘এখনো পর্যন্ত বিশেষ তদন্তকারী দল চক্রান্তের কোনো হদিশ পায়নি। সংগঠিতভাবে এরকম কাজ করা হয়েছে, এমন কথাও বলা যাচ্ছে না। এর পিছনে বিদেশি অর্থ আছে, তার প্রমাণও মেলেনি।’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct