আপনজন ডেস্ক: করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক টিকা অক্সফোর্ড বাজারে আনার ভরপুর কোশেশ চালিয়ে যাচ্ছে। সারা বিশ্ব তাকিয়ে আছে সেই ভ্যাকসিনের দিকে। কিন্তু তারই মধ্যে আশার আলো দেখালেন জার্মানির মুসলিম দম্পতি। জামান সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, জার্মান প্রতিষ্ঠান বায়োএনটেক ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান ফাইজারের যৌথ উদ্যোগে তৈরি করোনা ভাইরাসের টিকা তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে ৯০ শতাংশ কার্যকারিতা দেখিয়েছে। এই বায়োএনটেকের প্রতিষ্ঠাতা তুরস্ক বংশোদ্ভূত এক দম্পতি।
জার্মান শহর মাইনৎসে ১২ বছর আগে ২০০৮ সালে বায়োএনটেকের পথচলা শুরু হয়। এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ উগুর শাহিন ও তার স্ত্রী ইমিউনোলজিস্ট ওজলেম টুরেসি। তারা দু’জনই তুরস্ক বংশোদ্ভূত জার্মান নাগরিক। এ দম্পতির তৈরি বায়োএনটেকে এখন কর্মরত প্রায়১৫০০কর্মী। ৫৫ বছর বয়সি শাহিনের জন্ম তুরস্কে। বাবা-মা’র সাথে একসময় জার্মানিতে চলে আসেন তিনি। মেডিসিন ও গণিত নিয়ে পড়ালেখা করেন কোলোন বিশ্ববিদ্যালয়ে।
শাহিন কোলোন ও হামবুর্গে দীর্ঘ দিন ধরে চিকিৎসক হিসেবে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে যান। এরপর জারল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। ১৯৯২ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত একজন চিকিৎসক ও গবেষক হিসেবে সেখানে কাজ করেন। মলিকিউলার মেডিসিন ও ইমিউনোলজি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ব্যাপারে তিনি সবসময় আগ্রহী ছিলেন আর এ কারণেই ২০০৮ সালে বায়োএনটেক প্রতিষ্ঠা করেন। ক্যান্সারের ওষুধ আবিষ্কারের জন্য এখানে মনোনিবেশ করেন তিনি।
এই দম্পতির ওজলেম টুরেসি৫৩ বছর বয়সি। জন্ম জার্মানিতে। কিন্তু তার বাবা-মা তুর্কি। হামবুর্গে পড়ালেখা করে, সেখানেই চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছিলেন তিনি। ইমিউনোলজিস্ট টুরেসি ক্যান্সার রোগীদের থেরাপি দিয়ে থাকেন।২০০০ সালের জানুয়ারিতে শাহিন করোনা ভাইরাস সম্পর্কে প্রথম জানতে পারেন। তখনই তার আশঙ্কা হয় এটি মহামারী রূপ নেবে এবং ওই সময়ই ভ্যাকসিন প্রস্তুতের সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
করোনা প্রতিরোধে ভূমিকা প্রসঙ্গে বায়োএনটেকের প্রধান নির্বাহী উগুর শাহিন জানিয়েছেন, এই টিকার প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্তত এক বছর স্থায়ী হবে। যৌথ বিবৃতিতে ফাইজারের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, ‘‘টিকার তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার প্রাথমিক ফলে আমরা প্রমাণ পেয়েছি এটি কোভিড-১৯ প্রতিরোধ করতে পারে।’’
এই করোনা ভ্যাকসিনের ট্রায়ালও সম্পন্ন হয়েছে। যাদের আগে কখনো করোনা সংক্রমণ হয়নি, এমন মানুষের ওপর চালানো পরীক্ষায় দেখা যায় টিকা দেয়ার পর শরীরে করোনাভাইরাস প্রবেশ করলেও তাদের কোভিড-১৯ হয়নি। জুলাইয়ের শেষ থেকে শুরু হওয়া তৃতীয় পর্যায়ের এ ট্রায়ালে ৪৩ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ অংশ নিয়েছেন। মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এফডি-এর অনুমতির জন্য আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠান দুটি।
ফাইজার ও বায়োএনটেক যুক্তরাষ্ট্রে টিকা সরবরাহে এরই মধ্যে ১৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থের চুক্তি সই করেছে। চুক্তি সই হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, ক্যানাডা, জাপানের সাথেও। ২০২০ সালেই প্রতিষ্ঠান দুটি পাঁচ কোটি ডোজ টিকা উৎপাদন করবে। ২০২১ সালে আরো ১৩০ কোটি ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ফিজার।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct