আপনজন ডেস্ক : নাগার্নো-কারাবাখের দ্বিতীয় বৃহত্তম শুশা শহর আজারবাইজানের কাছে হার মানার কথা স্বীকার করেছে নিযেছে আর্মেনিয়া। আর এই হার স্বীকার করেই যুদ্ধ বন্ধের চুক্তিতে এসেছে আজারবাইজান-আর্মেনিয়া ও রাশিয়া। মঙ্গলবার কারাবাখের যুদ্ধ বন্ধের ডাক দিয়েছেন এই তিন দেশ। আর্মেনীয় প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান চুক্তিতে যাওয়ার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন।
এদিকে বিরোধী পক্ষ যুদ্ধবন্ধের চুক্তিতে আসার কথা স্বীকার করে নেওয়া আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ এই ঘটনাকে 'নিজের দেশের জনগণের গৌরবজনক জয়' বলে ব্যাখ্যা করেছেন। তবে আর্মেনীয় প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান এই চুক্তিকে 'বেদনাদায়ক' হার হিসাবে মেনে নিচ্ছেন।
আজেরি বাহিনী আর্মেনিয়ার কাছ থেকে কারাবাখের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর শুশা দখলের পর এ চুক্তিতে উপনীত হয় তিন দেশ। শুশা কারাবাখের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে যুদ্ধ হলেও চুক্তিতে রাশিয়া যুক্ত হয়েছে মূলত মধ্যস্থতাকারী হিসেবে।
চুক্তির পর আবেগঘন এক ফেসবুক পোস্টে আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানান, সংঘাত বন্ধে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ১টা থেকে চুক্তি কার্যকর হবে। রাশিয়া ও আজারবাইজানের পক্ষ থেকেও চুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে এক অনলাইন বৈঠকে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ বলেছেন, সংঘাত নিরসনে ত্রিপক্ষীয় এই সমঝোতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান বলেছেন, এই সিদ্ধান্তটি ব্যক্তিগতভাবে আমার এবং আমাদের জনগণের জন্য আমার কাছে অবর্ণনীয় ও বেদনাদায়ক। তবে বিদ্যমান সামরিক পরিস্থিতির একটি গভীর গভীরতা বিশ্লেষণ করেই এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে সরকার। বর্তমান পরিস্থিতিতে এটিই সবচেয়ে ভালো সমাধান।
এই চুক্তিকে ঐতিহাসিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ। তিনি বলেন, আজারবাইজানের সামরিক সাফল্যের কারণে আর্মেনিয়া সমঝোতা করতে বাধ্য হয়েছে। এর ফলে কোনও রক্তপাত ছাড়াই আমরা আমাদের এলাকা ফেরত পাবো।
নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলটি আজারবাইজানের ভেতরে অবস্থিত হলেও ইয়েরেভান সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে তা নিয়ন্ত্রণ করছে আর্মেনীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। ১৯৮০-এর দশকের শেষদিকে অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। ১৯৯১ সালে প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মুহূর্তে সংঘর্ষ চূড়ান্ত আকার ধারণ করে। ১৯৯৪ সালে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত এই সংঘর্ষে ৩০ হাজার মানুষ নিহত হয়। পরে ২০১৬ সালের শুরুতেও সংঘাতে জড়ায় দুই পক্ষ।
নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে দুই দেশের গত ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন করে সংঘাত শুরু হয় । রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, এ সংঘাতে এরইমধ্যে অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। উভয়পক্ষেরই দুই হাজারেরও বেশি করে মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
সাবেক সোভিয়েত দেশগুলোর সামরিক জোটের সদস্য আর্মেনিয়া, যার নেতৃত্বে রয়েছে রাশিয়া। আবার আজারবাইজানের ঘনিষ্ঠ মিত্র তুরস্ক।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct