আপনজন ডেস্ক: সাতদিন আগেই সীতারামপুর লছিপুরে দিশা জনকল্যাণ কেন্দ্রের পড়ুয়াসহ ১১৫ জন দুঃস্থ বাচ্চা 'হেল্প ফর সীতারামপুর' গ্রুপ থেকে দারুণ উপহার পেয়ে গেল ৷
আজ বৃহস্পতিবার সীতারামপুরের যৌনপল্লীতে অবস্থিত এই স্কুলে এক অনুষ্ঠানে পাঁচ বছর থেকে চোদ্দ বছর বয়সী প্রত্যেক ছেলেমেয়েকে নামী কোম্পানীর ব্র্যান্ডেড পোষাক এবং জুতো প্রদান করা হয় ৷ আমেরিকার ফেয়ারফ্যাক্স শহরের বাসিন্দা প্রবাসী ভারতীয় অশোক মোতায়েদ এই উপহারের অর্থ দান করেছেন ৷
এই অনুষ্ঠানে ইষ্টার্ণ রেলওয়ে হায়ার সেকেণ্ডারী স্কুলের শিক্ষক বিশ্বনাথ মিত্র বলেন, আমেরিকার প্রবাসী ভারতীয়দের উদ্যোগে গঠিত 'হেল্প ফর সীতারামপুর ' গ্রুপ গত দুমাস ধরে প্রতিদিন একনাগাড়ে দিশার এইসব অবহেলিত এবং দুঃস্থ বাচ্চাদের জন্য শুধু মধ্যাহ্নভোজনের ব্যবস্থা করে আসছেন তাই নয়, তারা চেয়েছেন প্রতিটি ছাত্রছাত্রীদের পুজোর জামাকাপড় ও জুতো যেন সেইরকমই গুণমানে উৎকৃষ্ট হয় যেগুলি আমরা আমাদের সন্তানদের জন্য ক্রয় করি ৷ তাই সাধ্যমত চেষ্টা করেছি বাজারের সেরা মানের জামাজুতো তুলে দিতে ৷
আমেরিকা থেকে উক্ত গ্রুপটির অন্যতম সদস্য প্রদীপ মুখার্জী ফোনে জানালেন, আমরা অবগত হয়েছি, বর্তমান পরিস্থিতির জন্য লছিপুরের এইসব শিশুদের বাড়ির অবস্থা খুবই শোচনীয় ৷ তাই বাচ্চাগুলো যাতে পুজোর আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয়, তাই এই সামান্য প্রয়াস ৷ গ্রুপের অন্যান্য সদস্যাবৃন্দ প্রবাসী ভারতীয় আসানসোল কল্যানপুরের বাসিন্দা দেবব্রত দাশ, পাঁচগেছিয়ার পল উপাধ্যায় কলকাতার সমীর নন্দী, তরুণ রায়েরা আমেরিকায় বসেও বেশ চিন্তায় ছিলেন কীভাবে এইসব অভাবী বাচ্চাদের মনে আনন্দ আনা যায় ৷ বিশ্বনাথবাবু জানালেন, তারা সকলে অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের এজন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন ৷
দিশার কর্মকর্তা রজনী দাশ জানালেন, এই জনকল্যাণ কেন্দ্রে যৌনকর্মীদের সন্তান বাদেও আশেপাশের প্রচুর গরীব শিশু পড়াশুনা করে ৷ এছাড়া সীতারামপুর, কুলটির স্কুলেও পাঠরত এই অঞ্চলের বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রী রোজ এখানে দুপুরের খাবার খেতে আসে ৷ তাদের সকলকেই জামা-জুতো দেওয়া হয়েছে ৷
আজকের অনুষ্ঠানে ইনারা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দিশার সহকারী সচিব দেবু অধিকারী, স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা, প্রসেনজিৎ দাশ, সুজিত ভদ্র, অতনু চক্রবর্তী সহ আরও অনেকে ৷
এইদিন দেখা গেল বাচ্চা এবং তাদের মায়েদের ভিড় উপচে পড়েছে ৷ মেয়েদের জন্য শালোয়ার-কামিজ, ঘাঘড়া আর ছেলেদের জন্য টি-শার্ট এবং প্যান্ট ছিল ৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবিকা ছলছল চোখে বলেন, লকডাউন উঠে গেলেও রোজগার আগের মত আর কিছুই নাই ৷ পুজোয় দুই ছেলেকে নতুন জামা কিনে দেবার ক্ষমতাও ছিল না ৷ কিন্তু ওরা এত সুন্দর পোষাক পেল, পুজোর চারদিন আর চিন্তা থাকবে না ৷ জ্যোৎস্না খাতুন নামে আর এক অভিভাবিকা বলেন, এত ভাল পোষাকের সংগে দামী জুতোও পাওয়া যাবে আশা করিনি ৷
কিরণ, আকাশ, বিকাশ, সুমন, চুমকি, পিঙ্কি, বিন্দিয়ারা সবাই খুশীতে মাতোয়ারা ৷ সকলেরই এক কথা, আজ পর্যন্ত এত সুন্দর ড্রেস বা জুতো কখনো পাইনি৷ অনুষ্ঠানের শেষে সকলকে লাঞ্চের প্যাকেট দেওয়া হয় ৷
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct