আপনজন ডেস্ক: কলকাতার গার্ডেনরিচ এলাকায় একটি নির্মীয়মাণ পাঁচতলা ভবন ধসে দুই মহিলাসহ অন্তত ৯জন নিহত হয়েছেন। বহুতল ধসের ১৬ ঘণ্টা পর ধ্বংসস্তূপের নিচে কয়েকজনকে আটকা পড়ে থাকতে দেখা যাওয়ায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন উদ্ধার অভিযানে নিয়োজিত ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা। কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, যেখানে অবৈধভাবে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছিল, সেখানে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধার অভিযান চালানো হয়েছে।এই ভববনের প্রমোটার মোহাম্মদ ওয়াসিমকে গ্রেপ্তার করা হলেও মেয়র বলেন, আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শহরের পশ্চিম প্রান্তে আজান মোল্লা লেনে ভবন ধসে পড়ার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং স্থানীয়দের অবৈধ নির্মাণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।হাকিম বলেন, ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মধ্যরাতের দিকে নির্মাণাধীন পাঁচতলা ভবনটি ধসে পড়ে।এনডিআরএফ, রাজ্য ও কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা দলের কর্মীরাও একযোগে কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন দমকল বাহিনীর এক আধিকারিক। তিনি বলেন, আমরা গ্যাস কাটার এবং অন্যান্য সরঞ্জাম ব্যবহার করছি ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করতে এবং যারা নীচে আটকে পড়েছে তাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য। তিনি বলেন, ধ্বংসস্তূপের ব্যাপক স্তূপের কারণে উদ্ধারকর্মীরা আটকে পড়াদের কাছে পৌঁছাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
তিনি বলেন, আমরা ভবন ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করেছি। এর মধ্যে নজন মারা গেছেন এবং দুজন মহিলা। আহত ১৫ জনের মধ্যে ১১ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং চারজনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া বলেন, আমরা দুর্দশাগ্রস্ত পরিবারগুলির পাশে রয়েছি এবং উদ্ধার কাজ অব্যাহত থাকবে।তিনি লেখেন, কলকাতা পুরসভার গার্ডেনরিচ এলাকায় নির্মীয়মাণ বহুতলের বাড়ি ভেঙে পড়ার ঘটনার খবর শুনে দুঃখ পেয়েছি। আমাদের মেয়র, দমকল সচিব, পুলিশ কমিশনার, পুলিশ, দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা আধিকারিক এবং দল (এনডিআরএফ, কেএমসি এবং কেপি দল সহ) সারা রাত ঘটনাস্থলে রয়েছেন। তিনি বলেন, মৃত ও আহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেবে সরকার। রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘আমি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি এবং আমরা মৃতদের প্রত্যেকের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা এবং আহতদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে দেব।তিনি বলেন, ‘বিরোধীদলীয় নেতারা যারা এ বিষয়ে নানা প্রশ্ন তুলছেন, তাদের জন্য আমি বলব, রাজনীতি করবেন না। আমরা পরে রাজনীতি করতে পারি, কিন্তু এই মুহূর্তে আমাদের আটকে পড়া লোকদের উদ্ধারের দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। আমরা আশা করি, এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না। সব প্রতিষ্ঠানকে একযোগে কাজ করতে হবে।ধ্বংসস্তূপের নীচে আটকে পড়াদের দ্রুত উদ্ধার করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, এটি একটি অবৈধ নির্মাণ। পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।এদিন সকাল ৯টা ১০-এ দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে ঘুরে দেখেন গোটা এলাকা। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন সুজিত বসু, ফিরহাদ হাকিম, মালা রায়রা। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর মমতা বলেন, এটা খুব ঘিঞ্জি এলাকা। মন্ত্রীরা সারা রাত এখানে ছিলেন। প্রোমোটারদের একাংশ বেআইনি ভাবে বাড়ি তৈরি করেন। তার আগে ভাবা দরকার, আশপাশে যাঁরা আছেন, তাঁদের যাতে ক্ষতি না হয়। আমি শুনলাম, প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে এই বহুতলটি তৈরি করা হয়নি। এখন রমজান মাস চলছে। সকলে উপোস করে থাকেন। তা-ও সারা রাত এলাকার মানুষ উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছেন। স্বাস্থ্য দফতর, দমকল, পুলিশ, কাউন্সিলর সারা রাত ধরে কাজ করেছেন।’
মমতা আরও বলেন, ‘এমন দুর্ঘটনায় আমরা মর্মাহত। দু’জন মারা গিয়েছেন। পাঁচ-ছ’জন এখনও আটকে। এক জনের পা আটকে। তবে তিনি বেঁচে আছেন। উদ্ধারকারীদের ভিতরে ঢুকতে সময় লেগেছে। এখন সকলে ঢুকে গেছেন। শোকস্তব্ধ পরিবারের কাছে আমি দুঃখপ্রকাশ করছি। যাঁরা বেআইনি কাজ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে। পরিবারের পাশে সরকার দাঁড়াবে। যাদের বাড়ি ভেঙেছে, তৈরি করে দিতে বলব। এরপর সংকীর্ণ রাস্তা দিয়েই তিনি চলে যান হাসপাতালে। হাসপাতালে আহতদের দেখতে গিয়ে তিনি বলেন, প্রশাসনকে অনুরোধ করব, যারা এই অবৈধ নির্মাণের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে যাতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিজের বাড়িতে পড়ে গিয়ে আহত হওয়ার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এটি প্রথম জনসমক্ষে উপস্থিতি। তার কপালে সেলাইও দেওয়া হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার সকালে ব্যান্ডেজ করা কপাল নিয়ে ভবন ধসের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।তিনি বলেন, অবৈধ নির্মাণ চলার সময় কর্তৃপক্ষের আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।এলাকায় বেআইনি নির্মাণের কথা স্বীকার করে ফিরহাদ হাকিম বলেন, বামফ্রন্টের আমল থেকেই এখানে তো বটেই, আরও কিছু এলাকায় এই প্রবণতা দেখা দিয়েছে। তিনি আরও স্বীকার করেন, এলাকায় নির্মাণগুলি আইন অনুসারে তৈরি করা হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য “পুর কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে ত্রুটি” থাকতে পারে। ফিরহাদ বলেন, কলকাতা পুরসভার অনুমোদিত পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্মাণ হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা স্থানীয় কাউন্সিলরের কাজ নয়, পুরসভার আধিকারিকদের কাজ। এদিকে, মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং প্রশাসনকে অবৈধ নির্মাণের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সরকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে আছে। রাজ্যের দমকল ও জরুরি পরিষেবা মন্ত্রী সুজিত বসু জানিয়েছেন, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধার কাজ চলছে এবং ধ্বংসস্তূপের নীচে আটকে পড়াদের শীঘ্রই বের করে আনা হবে।কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উদ্ধারকাজ খতিয়ে দেখেন।স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ভবনটি ধসে পড়ার আগে সেখান থেকে কংক্রিটের টুকরো পড়ে যায়।ভবনটি ধসে পড়ার সাথে সাথে একটি বিকট শব্দ হয়েছিল এবং ধূলিকণার ঘন মেঘ অঞ্চলটিকে ঘিরে ফেলেছিল। ধ্বংসাবশেষ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আশপাশের ঝুপড়িতে পড়ে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct