আপনজন ডেস্ক: আহমেদাবাদের গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে নামাজ পড়ার অভিযোগে বাংলাদেশ, উজবেকিস্তান, আফগানিস্তান-সহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মুসলিম পড়ুয়াদের মারধর করে একদল দুষ্কৃতী। গেরুয়া শাল পরা গুন্ডাদের হামলার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়ে বর্তমানে এসভিপি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।পুলিশ কমিশনার জিএস মালিক জানিয়েছেন, ১৬ মার্চ রাত ১০টা ৫০ মিনিট নাগাদ প্রায় দু’ডজন মানুষ গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে ঢুকে পড়েন এবং অন্য দেশ থেকে আসা পড়ুয়াদের নামাজ পড়ার বিষয়ে আপত্তি তোলেন। পড়ুয়াদের অভিযোগ, আহমেদাবাদ ক্যাম্পাসে কোনও মসজিদ না থাকায় তাঁরা হোস্টেলের ভিতরেই জড়ো হয়েছিলেন রমজান মাসে রাতে তারাবহির নামাজ আদায় করার জন্য। আফগানিস্তান থেকে আসা এক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, এরপর একদল উন্মত্ত জনতা এসে হোস্টেলে তাদের নামাজ পড়ার অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলে স্লোগান দেয়। এমনকি তারা আমাদের কক্ষের ভেতরে হামলা চালায়, ল্যাপটপ, ফোন ভাঙচুর করে এবং বাইক ভাঙচুর করে। আহত পাঁচজনের মধ্যে একজন আফগানিস্তানের, একজন শ্রীলঙ্কার, একজন তুর্কমেনিস্তানের এবং দুজন আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিক। জানা গিয়েছে, হস্টেলের নিরাপত্তারক্ষী হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করা সত্ত্বেও হামলাকারীরা হামলা চালাতে সক্ষম হয়। এক আফগান ছাত্রকে উদ্ধৃত করে একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশ ঘটনাস্থলে এলেও তারা জনতাকে পালিয়ে যেতে দেয়। আমরা এখানে নিরাপদ নই। আমরা গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুরোধ করছি আমাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যেতে।জিএস মালিক জানিয়েছেন, আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং আফ্রিকার দেশগুলি সহ গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৩০০ জন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি রয়েছেন। প্রায় ৭৫ জন আন্তর্জাতিক পড়ুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এ-ব্লক হোস্টেলে থাকেন, যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে। তিনি জানান, ২০-২৫ জন হস্টেল চত্বরে ঢুকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের হস্টেলের মধ্যে নামাজ পড়া নিয়ে আপত্তি জানায়। বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়, মারধর ও পাথর ছোড়া হয়। রাত ১০.৫১ মিনিটে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ফোন করার কয়েক মিনিটের মধ্যেই পুলিশ আসে। পুলিশের একটি ভ্যান ঘটনাস্থলে পৌঁছালে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।মালিক বলেন, বেশ কয়েকটি ভিডিও-ও সামনে এসেছে যেখানে লোকজনকে পাথর ছুঁড়তে দেখা গেছে এবং একটি ঘটনায় এক ব্যক্তিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মীকে চড় মারতে দেখা গেছে।তিনি বলেন, পুলিশ এই ভিডিওগুলির সত্যতা যাচাই করছে।এদের মধ্যে একজন শ্রীলঙ্কা ও আরেকজন তাজিকিস্তানের নাগরিক বলে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।আহমেদাবাদ পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, ২০-২৫ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে এবং দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রায় ৭৫ জন আন্তর্জাতিক পড়ুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এ-ব্লক হস্টেলে থাকেন, যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে। এই মামলার তদন্তের জন্য ক্রাইম ব্রাঞ্চের চারটি এবং ডিসিপির অধীনে স্থানীয় পুলিশের পাঁচটি সহ নয়টি দল গঠন করা হয়েছে।এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করা হবে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, মামলাটি যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) পর্যবেক্ষণ করবেন।গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নীরজা গুপ্তা জানিয়েছেন, গতকাল রাতে এ-ব্লক হস্টেল চত্বরে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। বিষয়টি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং কয়েকজন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী আহত হয়। এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct