বাংলা আজ কেবলমাত্র বাংলাদেশের ভাষা নয়, এটি বিশ্বের বাংলা ভাষী জনগণের নিকটে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস সৃষ্টি কারী পরিচিত ভাষা। বাঙালি ভাষা আন্দোলনের রক্তাক্ত স্মৃতিবিজড়িত দিন হলো একুশে ফেব্রুয়ারি। ভাষা আন্দোলনের স্বর্ণফসল হলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস যা বিশ্ব ইতিহাসের পাতায় শহীদ দিবস হিসেবে ও পরিগণিত। একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির নবতর উত্থান ও অভ্যুদয়ের দিন তথা বাঙালি সংস্কৃতির হৃদপিন্ড। লিখেছেন এম ওয়াহেদুর রহমান।
বাংলা আজ কেবলমাত্র বাংলাদেশের ভাষা নয়, এটি বিশ্বের বাংলা ভাষী জনগণের নিকটে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস সৃষ্টি কারী পরিচিত ভাষা। বাঙালি ভাষা আন্দোলনের রক্তাক্ত স্মৃতিবিজড়িত দিন হলো একুশে ফেব্রুয়ারি। ভাষা আন্দোলনের স্বর্ণফসল হলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস যা বিশ্ব ইতিহাসের পাতায় শহীদ দিবস হিসেবে ও পরিগণিত। একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির নবতর উত্থান ও অভ্যুদয়ের দিন তথা বাঙালি সংস্কৃতির হৃদপিন্ড। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালিদের ঐক্য - চেতনার অগ্নিস্মারক। রক্তে রঞ্জিত একুশে ফেব্রুয়ারিতেই মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে বাংলার কিছু তরুণ তাদের তাজা প্রাণ অকাতরে আত্মোৎসর্গ করে বাংলার ইতিহাসে লাভ করেছে অমরত্ব। একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির জীবনে জাতীয়তাবোধ জাগরণের দিন।মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ স্বরুপ, এই মাতৃভাষা ও রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা ভাষাকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য জনগণ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বা অধুনা বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ১৯৪৭ সালের নভেম্বর - ডিসেম্বরে ভাষা - বিক্ষোভ শুরু করেন এবং তা ১৯৪৮ সালের মার্চে ক্রমশঃ প্রসার লাভ করে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলন চরম আকার ধারণ করে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাজপথে বিক্ষোভ করলে পুলিশ নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। ফলে আত্মহুতি দিতে হয় ভাষা শহীদ রফিক উদ্দিন আহমেদ, আব্দুল জব্বার, শফিউর রহমান, আব্দুস সালাম, আব্দুল বরকত। বিক্ষুব্ধ জনতা প্রতীবাদে উত্তাল হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের হোস্টেলে জমায়েত হন।বহু নির্যাতন ও বাধা সত্ত্বেও ২২ ফেব্রুয়ারি বিক্ষুব্ধ জনতা রফিক, বরকত সহ অন্যান্য ভাষা শহীদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত্রে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের প্রাঙ্গনে গড়ে তুলেন স্মৃতি স্তম্ভ। কিন্তু তার তৎকালীন সময়ের সরকার ২৬ ফেব্রুয়ারি ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়। ফলে জনতা আরো ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। ফলে বাধ্য হয়ে ১৯৫৪ সালের ৭ মে বাংলা কে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং এর জন্য ১৯৫৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয়।১৯৮৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে ‘ বাংলা ভাষা প্রচলন বিল ‘ পাশ হয় এবং তা কার্যকর হয় ১৯৮৭ সালের ৮ মার্চ থেকে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ১৯৪৭ সালে যখন পাকিস্তান তৈরী হয়েছিল তখন এর দুটি ভৌগোলিকভাবে পৃথক অংশ ছিল, একটি পূর্ব পাকিস্তান ( বর্তমান বাংলাদেশ) এবং পশ্চিম পাকিস্তান ( বর্তমানে পাকিস্তান নামে পরিচিত)। দুটি অংশই সংস্কৃতি এবং ভাষার অর্থে একে অপরের থেকে খুব পৃথক ছিলো।১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সরকার উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র জাতীয় ভাষা হিসেবে ঘোষণা করেছিল যদিও পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলতেন। ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে ১৮৮ টি দেশের সমর্থনের ভিত্তিতে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিপুঞ্জ কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষিত হয় এবং ২০২০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি জাতিপুঞ্জের সদস্য দেশগুলো তে মর্যাদার সঙ্গে মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়।২১ ফেব্রুয়ারি লক্ষ্য পূরণ করতে ঝরেছে রক্ত, খালি হয়েছে বহু মায়ের কোল। তবু ও বাংলার দামাল ছেলেরা তাদের লড়াই ছাড়েন নি। শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে তাঁরা যে জয় নিয়ে এসেছিলেন, তা আজ ও কোনোমতেই ভুল বার নয়। রফিক, জাব্বার, সালাম, বরকত দের যে লড়াই আজও তা বিশ্ব মাঝে সমাদৃত। ভাষার জন্য এমন লড়াই কে প্রতি মহুর্তে কুর্নিশ জানায় গোটা বিশ্ব। বাঙালি ব্যাতিত আর কোন জাতি তার নিজের ভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন কিংবা সংগ্ৰাম করে নি। অকাতরে জীবন বিলিয়ে দেয় নি। অর্থাৎ ভাষা কে কেন্দ্র করে আন্দোলন ও নতুন রাষ্ট্রের সূচনার নজির ইতিহাসে বিরল। ২১ ফেব্রুয়ারি শুধু ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত একটি দিনই নয়, এ হোলো জাতীয় জীবনে গতিশীল চেতনার উন্মেষ ঘটানোর পথ। এই ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতিকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রত্যক্ষ সংগ্ৰামে উজ্জীবিত করেছিল। তাই প্রতিবছরই ২১ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক ও লেখক আব্দুল গাফফার চৌধুরীর রচিত ‘ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি ‘ গানের করুন আওয়াজ আজ ও ভাষা শহীদদের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় প্রতিটি বাংলা ভাষী জনগণকে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct