নির্বাচনের দু’মাস আগে সরকারের অন্তর্বর্তী বাজেট নিয়ে কৃষকরা যে খুব একটা আশায় ছিল তা নয়। কিন্তু কৃষি সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে এই বাজেটের প্রতি কৃষকদের কিছু ন্যূনতম প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন সেই সামান্য আশায় জল ঢেলে দিয়েছেন। বাজেটে তিনি তাঁর বক্তৃতায় কয়েকবার কৃষকের কথা উল্লেখ করলেও কোনও স্বস্তির আশ্বাস দেননি। টাকা তো দেওয়া হয়ইনি, কৃষি খাতে বরাদ্দের সত্যতাও দেশের সামনে তুলে ধরা হয়নি। উল্টে কৃষি ও বড় প্রকল্পের বরাদ্দ কমানো হয়েছে। লিখেছেন যোগেন্দ্র যাদব।
নির্বাচনের দু’মাস আগে সরকারের অন্তর্বর্তী বাজেট নিয়ে কৃষকরা যে খুব একটা আশায় ছিল তা নয়। কিন্তু কৃষি সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে এই বাজেটের প্রতি কৃষকদের কিছু ন্যূনতম প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন সেই সামান্য আশায় জল ঢেলে দিয়েছেন। বাজেটে তিনি তাঁর বক্তৃতায় কয়েকবার কৃষকের কথা উল্লেখ করলেও কোনও স্বস্তির আশ্বাস দেননি। টাকা তো দেওয়া হয়ইনি, কৃষি খাতে বরাদ্দের সত্যতাও দেশের সামনে তুলে ধরা হয়নি। উল্টে কৃষি ও বড়ো প্রকল্পের বরাদ্দ কমানো হয়েছে। বাজেটের দু’দিন আগে সংসদে পেশ করা অর্থনৈতিক সমীক্ষার নথি পর্যালোচনায় উঠে এসেছে, এ বছর কৃষি খাতে বৃদ্ধি (গ্রস ভ্যালু অ্যাডেড রেট) হয়েছে মাত্র ১.৮ শতাংশ। যা বিগত বছরগুলিতে কৃষি বৃদ্ধির গড় হারের অর্ধেকও নয় বরং এই বছরের অন্যান্য সব খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির এক চতুর্থাংশের সমান। তাই এই সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কিছুটা অন্তর্বর্তীকালীন সুরাহা দেবে বলে আশা করেছিলেন কৃষক ও কৃষি বিশেষজ্ঞরা। কিষাণ সম্মান নিধির পরিমাণ পাঁচ বছর আগে বার্ষিক ৬০০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল, আজ যার মূল্য ৫০০০ টাকার কম। কথা ছিল সরকার এই মূল্য বার্ষিক ৯০০০ টাকা বাড়িয়ে দেবে। বর্তমানে ভূমিহীন এবং ভাগচাষি কৃষকরা এই প্রকল্পের আওতার বাইরে। তাদের অন্তর্ভুক্ত করার আশা ছিল। অন্ততপক্ষে আশা ছিল যে সরকার এই প্রকল্প থেকে উপকৃত কৃষকের সংখ্যা হ্রাস বন্ধ করবে। দুঃখের বিষয়, এই প্রকল্পের পরিমাণ বা সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ানোর বদলে অর্থমন্ত্রী আসল সত্যটা সংসদে তুলে ধরেননি। তিনি এই স্কিমের সুবিধাভোগীর সংখ্যা দেখিয়েছেন ১১.৮ কোটি, যেখানে সরকারের নিজস্ব পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২৩ সালের নভেম্বরে দেওয়া শেষ কিস্তি মাত্র ৯.০৮ কোটি কৃষকের কাছে পৌঁছেছে। শুধু তাই নয়, তিনি বলেছিলেন যে প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনার সুবিধাভোগী কৃষকের সংখ্যা ৪ কোটি। এদিকে সরকারের নিজস্ব পরিসংখ্যান মোতাবেক সংখ্যাটি মাত্র ৩ কোটি ৪০ লক্ষ।
গত বছরের মতো এ বছরও কৃষকদের দেওয়া সরকারের সবচেয়ে বড়ো প্রতিশ্রুতি ও দাবি নিয়ে নীরবতা পালন করেছেন অর্থমন্ত্রী। ২০১৬ সালের বাজেটের আগে প্রধানমন্ত্রী ৬ বছরে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এই সময়কাল ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সম্পূর্ণ হয়েছিল। সরকার এটিকে টেনে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ঠেলে দিয়েছে। কিন্তু সাত বছর ধরে আয় দ্বিগুণ করার ভাবনা ভেঙে দেওয়ার পরও সরকার এ বিষয়ে সম্পূর্ণ নীরব। গত বছর এবং এবারের বাজেটে এই শব্দগুচ্ছের কোনও উল্লেখ ছিল না, কৃষকের আয় কতটা বাড়ল বা কমলো তার পরিসংখ্যানও সরকার দেয়নি। অর্থনীতিবিদদের হিসেব বলছে, এই সাত বছরে কৃষকদের আয় ততটাও বাড়েনি যতটা আগের সরকারের সাত বছরে বেড়েছে। দেশের সমস্ত কৃষক সংগঠন এমএসপি-কে আইনি মর্যাদা দেওয়ার জন্য গত দু’বছর ধরে অপেক্ষা করছে। দিল্লিতে যখন কিষাণ মোর্চা অবস্থান প্রত্যাহার করল, সরকার কৃষকদের লিখিত আশ্বাস দিয়েছিল যে এই উদ্দেশ্যে একটি কমিটি গঠন করে সমস্ত কৃষকদের এসপি নিশ্চিত করা হবে, কিন্তু আন্দোলন শেষ হওয়ার দু’বছর পরও কমিটি মসৃণভাবে কাজ শুরু করেনি। এদিকে, অর্থমন্ত্রী দাবি করেছেন, কৃষকরা পর্যাপ্ত এসপি পাচ্ছেন, যার অর্থ কমিটির ওপর নজরদারির কোনও ইচ্ছা সরকারের নেই। বাস্তব হলো, এই সরকারের দশ বছরে ২৩টি ফসলের মধ্যে ২১টি-তে এসপি বৃদ্ধির হার ততটাও নয় যতটা আগের ইউপিএ সরকারের দশ বছরে ছিল।
কৃষকদের জন্য ঢাক ঢোল পিটিয়ে বড়ো বড়ো প্রকল্পের প্রগতির রিপোর্টও যে রাখতে পেরেছেন অর্থমন্ত্রী তাও নয়। ২০২০ সালে, সরকার কৃষি পরিকাঠামো তহবিলের নামে ১ লক্ষ কোটি টাকার একটি প্রকল্প ঘোষণা করেছিল, যা পাঁচ বছরে সম্পূর্ণ হওয়ার কথা। এখন, চার বছর পর, ২২,০০০ কোটি টাকা অর্থাৎ তহবিলের এক-চতুর্থাংশেরও কম টাকা এই প্রকল্পে বরাদ্দ করা হয়েছে। একইভাবে, এও মনে হয় এগ্রিকালচার এক্সিলারেটর ফান্ডও স্থগিত হয়ে গেছে। সরকার পাঁচ বছরে ২৫১৬ কোটি টাকা ঘোষণা করেছিল, কিন্তু এখনও পর্যন্ত বরাদ্দ করা হয়েছে মাত্র ১০৬ কোটি টাকা।কিছু দেওয়া তো দূরের কথা, সরকার এই বাজেটে কৃষকদের যা ভাগ, সেটাও কেড়ে নিয়েছে। গত নির্বাচনের আগে কিষাণ সম্মান নিধি ঘোষণার পর দেশের মোট বাজেটে কৃষি বাজেট ছিল ৫.৪৪ শতাংশ। গত ৫ বছরে এই অনুপাত কমছে। গত বছর, মোট বাজেটের ৩.২০% কৃষি ও সংশ্লিষ্ট খাতে প্রস্তাব করা হয়েছিল, কিন্তু সংশোধিত অনুমানের হিসেব অনুসারে, প্রকৃত ব্যয় ছিল মাত্র ৩.১৩%। চলতি বছরের বাজেট প্রাক্কালে তা আরও কমিয়ে ৩.০৮% করা হয়েছে। কমে যাওয়ার পরিমাণ সামান্য সেটা ভাববেন না। উদাহরণস্বরূপ, সার ভর্তুকি গত বছরের ব্যয় ১.৮৮ লক্ষ কোটি টাকা থেকে ১.৬৪ লক্ষ কোটি করে দেওয়া হয়েছে, খাদ্য শস্য ভর্তুকি ২.১২ লক্ষ কোটি থেকে ২.০৫ লক্ষ কোটি টাকা এবং আশা প্রকল্পের খরচ ২২০০ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ১৭৩৮ কোটি টাকা করা হয়েছে। রাজ্যগুলিতে সস্তা ডাল দেওয়ার প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ শূন্যে নামিয়ে আনা হয়েছে। অর্থাৎ গত দশ বছরের মতো এ বছরও কৃষকরা পেয়েছেন কেবল বড়ো বড়ো ভাষণ এবং প্রতারণা। সেই কারণেই আগামী লোকসভা নির্বাচনে’বিজেপিকে হারাতে’দেশজুড়ে কৃষকদের হয়ে আওয়াজ তুলেছে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা।
অনুবাদ: শুভম সেনগুপ্ত
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct