আখতারুল ইসলাম, মুর্শিদাবাদ, আপনজন: দীর্ঘ দশ বছর পর অনুষ্ঠিত হল মাদ্রাসার নিয়োগ পরীক্ষা। তাতেও একগাদা ভূলে ভরা প্রশ্নপত্র। এই নিয়ে নতুন বিতর্কে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন। উল্লেখ্য যে সপ্তম এস.এল.এস.টির ১৭২৯ টি শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য গত বছর মে মাসে অনলাইনে আবেদন পত্র জমা নেওয়া শুরু করে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন। তখন থেকেই পরীক্ষার্থীদের মাঝে অসন্তোষ দানা বাধে কারণ NCTE’র গাইডলাইন কে উপেক্ষা করে প্রথমবারের জন্যে ভারতবর্ষে কোনো টেট পরীক্ষায় নেগেটিভ মার্কিং রাখার সিদ্ধান্ত নেয় মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন। তারপর দীর্ঘদিন অনগ্রসর শ্রেণীর সংরক্ষণ সম্পর্কিত মামলার জন্যে স্থগিত করে রাখা হয় পরীক্ষার পক্রিয়া। অতঃপর চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ১৭ তারিখে হঠাৎ কমিশনের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে দশ দিনের মাথায় পরীক্ষার দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়। যদিও সেইদিন ছিল পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ বিভাগের বিশেষ পরীক্ষা। ফলে বিতর্কও কম হয়নি। সরব হন বিদ্বজন মহল থেকে রাজ্য স্তরের বিভিন্ন সংগঠন। ওই একই দিনে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের পক্ষ থেকে রাখা হয় আরবি বিভাগের দুটি পরীক্ষা প্রথম পর্বে প্রাইমারি স্তরের (I-V) এবং দ্বিতীয় পর্বে আপার প্রাইমারি স্তরের (V-VII) পরীক্ষা। পরীক্ষার্থীদের একাংশ পরীক্ষা বয়কট করে বলেও জানা যায়। এরই মাঝে নতুন করে আবার বিতর্কে জড়াল মাদ্রাসা কমিশন। কারণ দুটি স্তরের পরীক্ষাতেই প্রায় একগাদা প্রশ্ন সিলেবাস বহির্ভূত বলে জানা যাচ্ছে। আপার প্রাইমারির ক্ষেত্রে মোট ভূল প্রশ্নের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ২৭ থেকে ২৮টি তে বলে জানাচ্ছেন পরীক্ষার্থীরা। এই ক্ষেত্রে আরবি প্রশ্ন পত্রের বাংলা ও ইংরেজি ভাষা বিভাগের প্রশ্নের ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হয়নি কমিশনের দেওয়া সিলেবাস। এই ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে শিশু মনস্তত্ত্ব থেকে একটিও প্রশ্ন করা হয়নি। এমন কি গল্প এবং কবিতা থেকে পৃথক পৃথক অংশ তুলে বোধপরীক্ষণ মূলক প্রশ্নের ক্ষেত্রেও সিলেবাস অনুসরণ করা হয়নি। দেখা যাচ্ছে যে এই বিভাগের প্রায় ২৮ টি প্রশ্ন নেওয়া হয়েছে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের পক্ষ থেকে দেওয়া নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ের সিলেবাস থেকে। এতে রীতিমত ধন্দে পড়ে যান পরীক্ষার্থীরা। এটিকে কমিশন ও প্রশ্ন সেটারের চরম পদস্খলন বলেই মনে করছেন বিদ্বজন মহল। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ কামাল হোসেন এই সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এক বিবৃতিতে চরম সমালোচনা করেন। তিনি বিষয়টিকে কমিশনের চরম উদাসিনতা বলে দাবি করেছেন। পরীক্ষার পরদিন থেকেই পরীক্ষার্থীদের একটা বৃহত্তর অংশ গণহারে ই-মেল করতে থাকেন কমিশনের অফিসে। এতে সদুত্তর না পেয়ে পরীক্ষার একদিন গড়াতে না গড়াতেই তড়িঘড়ি কমিশনের অফিসে গিয়ে ৪০০ থেকে ৫০০’র মত পরীক্ষার্থীর সাক্ষর সম্বলিত একটি ডেপুটেশনের মাধ্যমে সমস্ত বিষয়টি জানিয়ে আসেন পরীক্ষার্থীদের একাংশ। উক্ত ডেপুটেশনের মাধ্যমেই তারা দ্রুত এ বিষয়ে কমিশনের অবস্থান জানতে চাই এবং উক্ত প্রশ্ন গুলির জন্যে বরাদ্দ নম্বর সকল পরীক্ষার্থীদের দেওয়ার জন্যে আবেদন জানানো হয়। এ বিষয়ে উল্লেখ করা যায় যে এই ধরনের বিতর্ক মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের জন্যে নতুন নয়। ইতঃপূর্বে ২০২২ সালের শেষের দিকে কমিশন জড়িয়ে ছিল ভূল প্রশ্নের বিতর্কে। সেবার ২০২০ সালের ৩ মার্চ মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন ১২১টি পদে প্রধানশিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়। যে পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয় ২০২১ সালের ১১ অগস্ট। ভূল প্রশ্নের জেরে মামলা গড়াই কোর্ট পর্যন্ত। ২০২২ সালের জুলাই মাসে মিজানুর রহমান নামের এক পরীক্ষার্থীর করা মামলার শুনানিতে কলকাতা হাই কোর্ট নির্দেশ দেয়, ভুল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সমস্ত পরীক্ষার্থীকে বাড়তি নম্বর দেওয়ার। চলতি বিতর্কেও এমনই দাবি জানাচ্ছেন পরীক্ষার্থীদের একটা বৃহত্তর অংশ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct