নিজস্ব প্রতিবেদক, কলকাতা, আপনজন: ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি লাগু করে নিরীহ মানুষের মৃত্যুমিছিল বন্ধের দাবিতে সোচ্চার হল কলকাতা। ‘ফ্রেন্ডস অফ প্যালেস্টাইন’ ফোরামের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এদিন জুম্মার নামাযের পর টিপু সুলতান মসজিদের কাছ থেকে বিশাল ঐতিহাসিক পদযাত্রা বের হয়। শিশু, নারী, পুরুষ মিলিয়ে বেশ কয়েক হাজার শান্তিকামী মানুষ শামিল হন ও পদযাত্রায় পা মেলান। প্রতিবাদী মিছিল মেয়ো রোডে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে গিয়ে মিলিত হয় এবং সেখানে সমাবেশ হয়। মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠন একযোগে এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভের আয়োজন করে। সমাবেশ থেকে এক প্রতিনিধি দল পার্কস্ট্রিটে অবস্থিত মার্কিন কনসুলেটে গিয়ে গাজায় একতরফা ইজরায়েলি যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে স্মারকলিপি জমা দিয়ে আসেন। এদিনের বিক্ষোভ মিছিলে বক্তব্য রাখেন রাজ্যের মন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খান, মানবাধিকার কর্মী ও বন্দিমুক্তি আন্দোলনের নেতা ছোটন দাস, বিশপ অলোক মুখার্জি, বেলুড় মঠের স্বামী পরমানন্দ গিরি মহারাজ, মজলিসে মুশাওয়ারাত ও মিল্লি ইত্তেহাদ পরিষদের আব্দুল আজীজ, সোহন সিং আতিয়ানা, ইমামে ঈদায়েন ক্কারী ফজলুর রহমান, জামাআতে ইসলামী হিন্দের রাজ্য সভাপতি ডা. মসিহুর রহমান, খিলাফত কমিটির পক্ষে নাসির আহমেদ, শাকীল আহমেদ-সহ বহু বিশিষ্টজন। সঞ্চালনা করেন শাদাব মাসুম।
তাঁরা সকলেই যুদ্ধবিরতি ও মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফেরানোর পক্ষে জোরালো সওয়াল করেন। মন্ত্রী জাভেদ খান বলেন, ইজরায়েলকে জব্দ করতে হলে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ও নামাযে দুয়ার পাশাপাশি ইজরায়েলী পণ্যসামগ্রী বয়কট করতে হবে। নারী, শিশুদের কী অপরাধ, কেন তাদেরকে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে – সে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, আফসোস নরেন্দ্র মোদির ভ্রান্ত বিদেশনীতির কারণে ভারত রাষ্ট্রসংঘে ভোটদানে বিরত থেকেছে। তবুও আমাদের নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব হল আওয়াজ ওঠানো।জামাআতে ইসলামী হিন্দের রাজ্য সভাপতি ডা. মসিহুর রহমান বলেন, বিশ্বের যেখানেই অন্যায় হয়েছে এই কলকাতা সর্বদাই তার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছে। এখানে নেলসন ম্যান্ডেলা এসেছেন, ইয়াসের আরাফাত এসেছেন। এটাই কলকাতার ঐতিহ্য পরম্পরা। ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধাপরাধ করছে, চরম মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে, অকাতরে ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যা চালাচ্ছে। ইমামে ঈদায়েন ক্বারী ফজলুর রহমান বলেন, আল্লাহ ফিলিস্তিনিদের রক্ত, জান ও মালের কুরবানী, তাদের শাহাদাত কবুল করুন। হামাস ইজরায়েলের গর্ব, দর্প সব চূর্ণ করে দিয়েছে। আব্দুল আজীজ বলেন, হামাস সন্ত্রাসী নয়, তারা স্বাধীনতা সংগ্রামী। সোহন সিং বলেন, যুদ্ধের একমাত্র কারণ হল অস্ত্র ব্যবসা। এটাই পশ্চিমাদের পুঁজি। আর মার্কিন সমরাস্ত্র বা আর্মস-লবিকে নিয়ন্ত্রণ করে ইহুদিরা। খিলাফত কমিটির নাসির আহমেদ বলেন, ফিলিস্তিনকে সমর্থন দিতে মুসলিম হওয়ার প্রয়োজন নেই, বিবেকবান মানুষ হলেই যথেষ্ট। তিনি বলেন, ইজরায়েল সুপার পাওয়ার নয়; তারা কাপুরুষ। আর ফিলিস্তিনিরা বেঁচে থাকলে গাজী আর মারা গেলে শহিদ। উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সবাই দোয়া করবেন আল্লাহ যেন ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে কবুল করে নেন এবং সেখানকার মজলুম মানুষদের দাজ্জাল ইজরায়েল, আমেরিকার থেকে হেফাজত করেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct