সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: ষষ্ঠীর সন্ধ্যে থেকেই জনস্রোতে ভাসতে শুরু করল কলকাতা মহানগরী। মহালয়া থেকেই জনতার ঢেউ আছড়ে পরে মণ্ডপগুলিতে। ষষ্ঠীর দুপুর থেকেই শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাব, দমদম পার্ক, বাগুইহাটি সহ উত্তর কলকাতার আহিরীটোলা, কুমারটুলি পার্ক থেকে দক্ষিণ কলকাতার একডালিয়া এভারগ্রিন, ম্যাডক্স স্কোয়ারে সর্বত্র ধীরে ধীরে ভিড় জমতে শুরু করে। সন্ধ্যে পেরোতেই সেই ভিড় সুনামির রূপ নিতে থাকে। দুপুর দুটোর পর থেকেই ভিআইপি রোডে শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের পুজা মণ্ডপের ভিড়কে কেন্দ্র করে তৎপর হয়ে ওঠে বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ। কারণ তখনই হাজার হাজার মানুষ ধীরে ধীরে জড়ো হচ্ছে সেখানে। সন্ধ্যা গড়াতেই খান্না সংলগ্ন নলিনী সরকার স্ট্রিট থেকে শুরু করে কাশি বোস লেনের সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির মন্ডপে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হতে শুরু করে। বেশ কয়েক বছর আগে পর্যন্ত সন্ধ্যের আগে মণ্ডপে মণ্ডপে মানুষের ভিড় দেখা যেত না। কিন্তু গত বছর থেকে সেই চরিত্র বদলেছে। দুপুর ১২ টার পর থেকেই মানুষজন বেরিয়ে পড়ছেন রাস্তায়। আর বেশি সংখ্যক মানুষের সমাগম ঘটছে বিকেল পাঁচটা থেকে। ফলে যে পুলিশ ভিড় সামলাতে আগে বিকেল থেকে রাস্তায় নামতো, তাদেরকে দুপুর বারোটা থেকেই তৎপর হতে হচ্ছে। লালবাজার পুলিশ কন্ট্রোল রুম ২৪ ঘণ্টায় তৎপর থাকে পুজোর কদিন। সেখানে উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসাররা উপস্থিত থাকেন। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে লাগানো ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ দেখে যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ ও রাস্তায় থাকা পুলিশ কর্মীদের নির্দেশ পাঠানো হয় সেখান থেকে। সন্ধ্যে থেকে সেই তৎপরতা আরো বাড়ে, চলে রাতভর। তবে এ বছর বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হতেই জনজোয়ার দেখে রাত গড়ালে এই জনশ্রোত যে সুনামির রূপ নেবে তাতে নিশ্চিত হয়ে যায় কলকাতা পুলিশ। এখনো সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী তিথি বাকি। কিন্তু এক বছর অপেক্ষা করে থাকা আমজনতা একটি দিনও মিস করতে নারাজ। তাই মহালয়ার আগের দিন থেকে রাস্তায় যে জনতার ঢল নেমেছে, তিথি যত এগিয়েছে প্রতিদিন সেই জনতার রেকর্ড নিজেরাই ভেঙেছেন উৎসবমুখী মানুষজন। চতুর্থী থেকেই যান নিয়ন্ত্রণে তৎপর হয়েছিল কলকাতা পুলিশ। ষষ্ঠীর দুপুর থেকেই সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, বিটি রোড, গড়িয়াহাট, হাতিবাগান, শ্যামবাজার, ধর্মতলা, নিউ আলিপুর, যাদবপুর, ইএম বাইপাস সহ সর্বত্র প্রতিটি ট্রাফিক গার্ডের পুলিশ কর্মীদের রাস্তায় নামানো হয়। এমনকি থানার অফিসারদের ও যান নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়। উদ্দেশ্য একটাই জনতার সুনামিকে নিয়ন্ত্রণে এনে যানবাহনের গতি বজায় রাখা।
দুর্গাপুজোর ক’ দিন পুলিশ প্রশাসনের কাছে এ এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। তবে কলকাতা পুলিশের ১৪ ০০০ ফোর্সের সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সহ ক্লাব কমিটির ও পূজা উদ্যোক্তাদের সদস্যরা। কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ‘হেল্পিং ডেস্ক ‘খোলা হয়েছে। শুধু তাই নয় মেশিন পারসন স্কোয়াড থেকে একাধিক গাড়ি ঘুরছে মন্ডপে মন্ডপে। যাতে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হঠাৎ কেউ নিখোঁজ হয়ে গেলে তাকে নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছানো সম্ভব হয়। এর মধ্যে আবার ভিড়ে যাতে কোন অশোভন বা অঘটন না ঘটে, মণ্ডপের ভিড়ে যাতে কোন অপরাধ না হয় ,তার জন্য লালবাজারে গোয়েন্দা বিভাগ থেকে দক্ষ পুরুষ ও মহিলা পুলিশ কর্মীদের নিয়ে বানানো হয়েছে সাদা পোশাকের একাধিক টিম। বড় বড় পুজো মণ্ডপগুলিতে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি চালানোর পাশাপাশি শহরের সর্বত্র এই পাঁচ দিন পুলিশকে স্বতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করতে হয়। ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় বিভিন্ন ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ছবি দেখে লালবাজারে অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসারদের দাবি ষষ্ঠীর রাত বিগত কয়েকদিনের সব ভিড়ের রেকর্ডকে ভেঙে দেবে। পুজোর মধ্যেই অশনি সংকেত শুনিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। নবমী থেকে শুরু হবে নিম্নচাপের বৃষ্টি। তাই এক বছর অপেক্ষা করে থাকা আম জনতা সময় নষ্ট করতে নারাজ। প্রতিদিন প্রতি রাতে প্রতিটি মন্ডপে হাজির হয়ে তাই ঝড় তুলছে ভিড় ভাঙার রানের রেকর্ড- এ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct