আপনজন ডেস্ক: ‘স্যর সৈয়দ ডে’ উপলক্ষে গত মঙ্গলবার লখনউ-র গোমতি নগরের ইন্দিরা গান্ধী প্রতিষ্ঠানে এক অনুষ্ঠানে আল-আমীন মিশনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক এম. নুরুল ইসলামকে ২০২৩-এর ড. কালবে সাদিক পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়। অনুষ্ঠানটির আয়োজক ছিল আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি ওল্ড বয়েজ অ্যাসোসিয়েশন, লখনউ। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শাবিহুল হাসনেন, সম্মানীয় অতিথি ছিলেন আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী, বিশিষ্ট কবি ও সঙ্গীতজ্ঞ জনি ফস্টার। পুরস্কার গ্রহণের পর এম. নুরুল ইসলাম আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, প্রায় দেড়শো বছর আগে একটা ভাবনাকে সঙ্গী করে যে কাজ শুরু হয়েছিল, সেটা শুধুমাত্র লখনউ নয়, উত্তর প্রদেশ নয়, এমনকি ভারতও নয়, সেই ভাবনার প্রভাব সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। আপনারাই সেই ভাবনার ফলশ্রুতি। সেইরকম পঞ্চাশ বছর আগে পশ্চিমবঙ্গের এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা ভাবনার প্রভাবে ঐ রাজ্যের সমাজে একটা পরিবর্তন ঘটে চলেছে। মুসলমান সমাজের একটা বড় অংশ আজ শিক্ষিত হয়ে দেশগঠনের কাজে সামিল হতে পেরেছে।তিনি আরো বলেন, রামকৃষ্ণ মিশনের আদলে আমরা একটি আবাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি করেছি। ৭ জন ছাত্র থেকে আজ প্রায় ৬০ হাজার জনের বৃহৎ পরিবার। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে ২৫ শতাংশ ছেলেমেয়ে জাকাতের অর্থে পড়াশোনা করেছে তারা আজ জাকাত দাতাই পরিনত হয়েছে। ৪০ শতাংশ ছেলেমেয়ে অর্ধেক খরচে পড়েছে ও ৩৫ শতাংশ নিজেদের অর্থে পড়াশোনা করেছে। তাঁর ভাষণে নুরুল ইসলাম আশাপ্রকাশ করেন যে এখন যেমন সারা পৃথিবী জুড়ে ‘স্যর সৈয়দ ডে’ উদযাপিত হচ্ছে, আরো ২০ কিংবা ৩০ বছর পর আল-আমীন প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে প্রাক্তনীরা দুনিয়ার বিভিন্ন স্থানে “আল-আমীন ডে’ উদযাপন করবে।
নুরুল ইসলাম বলেন, উনবিংশ শতকে ভারতের একটা বৃহত্তর অংশ যখন অশিক্ষার অন্ধকারে ডুবে ছিল, সেই অংশ আলো দেখানোর কাজটি স্যর সৈয়দ করেছিলেন শিক্ষার মাধ্যমে। তেমনই বাংলায় পিছিয়ে পড়া সংখ্যালঘু সমাজকে শিক্ষার আঙিনায় নিয়ে আসতে আল-আমীন চিরাগের কাজ করছে। তিনি বলেছেন, মানুষ একা, একা ভালো থাকতে পারে না। আশপাশের প্রতিবেশীদেরও ভালো থাকতে সাহায্য করতে হবে। তাঁর মতে, তাহলে মানুষের ভালো থাকাটা সার্থক হবে। এই প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, শুধু দুনিয়াতে ভালো থাকা নয়, ইমানকে মজবুত করে আমরা কাজ করি তাহলে আমাদের আখেরাতও ভালো হবে। নুরুল ইসলাম বলেন, স্যর সৈয়দ ডে একদিন উদযাপন করলে হবে না। তাঁর ভাবনাচিন্তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমাদের আরো কাজ করে যেতে হবে।অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শাবিহুল হাসনেন তার ভাষণে স্যর সৈয়দের জীবনের নানান উল্লেখজনক দিক তুলে ধরে বলেন, ১৮৬৩ সালে কলকাতায় এসে স্যর সৈয়দ মুসলমান সমাজকে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত হতে বলেন, নাহলে তারা পিছিয়ে পড়বে বলে মতপ্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেন, স্যর সৈয়দের সময় যে কঠিন পরিস্থিতি ছিল, সেটা এখন নেই। ফলে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজে এখন আরো উদ্যমের সঙ্গে কাজ করতে হবে। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক শাকিল কিদোয়াই, সহ সভাপতি এম. গুফরান, সম্পাদক এস. এম শোয়েব, আল-আমীন ট্রাস্টের সদস্য ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাসিব আলম সহ অন্যান্য বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ। উল্লেখ্য, ড. কালবে সাদিক ছিলেন বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার। আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য তিনি ‘পদ্মভূষণ’ সম্মানেও ভূষিত হন। তিনি তহিদুল মুসলিমিন ট্রাস্ট, ইউনিটি কলেজ সহ বহু শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। লখনউতে তাঁর জন্ম ১৯৩৯ সালে। মৃত্যু এই শহরেই, ২০২০ সালের ২৪শে নভেম্বর।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct