মধুসূদন চ্যাটার্জি, কলকাতা, আপনজন: রাজস্থানের রাজধানী জয়পুরের দারুল উলুম দেওবন্দ জাকিয়া মাদ্রাসায় পড়ার সময় কয়েক বছর আগে মোটা নিতম্বযুক্ত দুম্বা জাতের ভেড়া দেখেছিলেন নাবিবুল আলি খান। তখন তিনি ভেবেছিলেন এই ভেড়া চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করা যেতে পারে। সেই ভাববনা কাজে লাগে করোনার সময়। কেরলের মালাপ্পুরমের একটি মসজিদে ইমামতি হিসাবে কাজ করছিলেন নাবিবুল। কিন্তু যখন কোভিড-১৯ মহামারী দেখা দেওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার আঙ্গারিয়া গ্রামে ফিরে যেতে হয়েছিল। তখন তার জীবিকা নির্বাহ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তখন তার বয়স ছিল ২৬ বছর। তিনি শিক্ষিত কিন্তু বেকার এবং তার প্রত্যন্ত গ্রামে আয়ের কোনও উৎস ছিল না। তার বাবা লোকমান আলী খানের এক বিঘারও কম জমি ছিল যা দিয়ে তাকে স্ত্রী, চার ছেলে এবং তিন কন্যা সহ পরিবারের ভরণপোষণ করতে হয়েছিল। এটি তার পরিবারের কনিষ্ঠ পুত্র যুবকটির জন্য করো বা মরো পরিস্থিতি ছিল। নবিবুল তখন সিদ্ধান্ত নেন, তিনি ১,৫০০ কিলোমিটার দূরে রাজস্থানে যে দুম্বা ভেড়া দেখেছিলেন, তা কিনবেন। দুম্বা জয়পুরে তাদের লালন-পালনকারী মালিকদের প্রচুর মুনাফা এনেছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়ায় ভেড়া পালনের ব্যাপারে নাবিবুলের ‘পাগল’ ধারণা নিয়ে মানুষ হাসাহাসি করে। এর আগে কোনো গ্রামবাসী এমন চেষ্টা করেনি। তার গ্রামের ১,৫০০ জন লোকের বেশিরভাগই দৈনিক মজুরির কাজে নিয়োজিত ছিলেন। কিন্তু নির্বিঘ্নে ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত নেন নাবিবুল। তখন তিনি চার লক্ষ টাকা ধার নেন। এক লক্ষ টাকা তার বড় ভাইয়ের কাছ থেকে, যিনি গবাদি পশু বেচাকেনা করতেন এবং বাকি টাকা প্রতিবেশী ও বন্ধুদের কাছ থেকে। সেই টাকা দিয়ে রাজস্থানের জয়পুর থেকে পাঁচটি দুম্বা কিনেছিলেন। তিন বছর পর তার পাঁচটি ভেড়ার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৮টি এবং নাবিবুলও তার ঋণ পরিশোধ করে দেন।
নাবিবুল সেই আনন্দে সংবাদমাধ্যমকে জানান, আমার ভেড়ার বাজার মূল্য পনের লক্ষ টাকা এবং তারা এখন আমার পরিবারের আয়ের প্রাথমিক উৎস। দুম্বা গরম আধা-শুষ্ক জলবায়ু অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নেয়। এর উচ্চ উর্বরতা, দ্রুত বৃদ্ধি এবং উচ্চ দুধ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। আইসিএআর-সেন্ট্রাল শিপ অ্যান্ড উল রিসার্চ ইন্সটিটিউটের মতে, উদ্যোক্তা বা জীবিত পশু ব্যবসায়ীদের দ্বারা এই প্রাণীগুলি লালন-পালন এবং রাখার মূল উদ্দেশ্য হ’ল ঈদুল আযহা বা বকরিদের সময় প্রচুর পরিমাণে অর্থ উপার্জন করা। কারণ এগুলির দুর্দান্ত নান্দনিক এবং ধর্মীয় মূল্য রয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের ৯০,০০০ থেকে ১,৫০,০০০ টাকা, মহিলাদের ৭০,০০০ টাকা এবং মেষশাবক ১৫,০০০-৩০,০০০ টাকায় বিক্রি হয়। এ প্রসঙ্গে নাবিবুল বলেন, পশু কেনার আগে আমি আমার বৃদ্ধ বাবার সঙ্গে সামান্য মজুরিতে কৃষি শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে বাধ্য হয়েছিলাম। ১০০ দিনের কাজও দুই-তিন বছর ধরে নিষ্ক্রিয় রয়েছে। তখনই আমি দুম্বার কথা ভাবি। নাবিবুল জয়পুর থেকে চারটি মহিলা ্র একজন পুরুষ দুম্বা কিনেছিলেন। তারপর দ্রুত মহিলা ডাম্বাস প্রজনন শুরু করে। নাবিবুল জানান, একজন মা দুম্বা ছয় বছরের মধ্যে দশটি শিশুর জন্ম দিতে পারেন। এক বছর বয়সে এর ওজন এক কুইন্টাল পর্যন্ত। এই তিন বছরে পনেরোটি দুম্বা বিক্রি করেছি, ১৫ লক্ষ টাকা উপার্জন করেছি বলে নাবিবুল জানান। দুম্বা পালন করেই স্বনির্ভর হয়ে উঠেছেন আলেম নাবিবুল।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct