সাদ্দাম হোসেন, জলপাইগুড়ি, আপনজন: পূজোর মুখে ফের বন্ধ হয়ে গেল ডুয়ার্সের আরেকটি চা বাগান। এবার জলপাইগুড়ি জেলার বানারহাট ব্লকের চামুর্চি চা বাগান ছেড়ে পালালো মালিক কর্তৃপক্ষ। এনিয়ে ২৪ ঘন্টার মধ্যে বন্ধ হয়ে গেলো তিনটি চা বাগান। সকালবেলা বানারহাটের চামুর্চি এবং কাঠালগুড়ি চা বাগানে কাজে যোগ দিতে গিয়ে শ্রমিকরা দেখতে পান মালিক পক্ষ নেই। এমনকি কারখানা বন্ধ এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই প্রচুর শ্রমিক ফ্যাক্টরির সামনে ভীড় করেন। তবে দুপুর ১২ টা নাগাদ আচমকা শ্রমিক দের চাপের মুখে নাটকীয়ভাবে বাগান ম্যানেজার বাগানে চলে আসেন বলে শ্রমিকদের দাবী এমনকি স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু হয় কাঠালগুড়ি চা বাগানে। তবে চামুর্চি বাগান কর্তৃপক্ষের আর দেখা মেলেনি। তবে বাগানের শ্রমিকরা প্রথমে কারখানা গেটের সামনে বিক্ষোভ দেখান, তারপর ইন্ডো-ভুটান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভে সামিল হন। তাদের ২০ শতাংশ বোনাস ও বাগান খোলার দাবীতে। পূজোর মুখে হঠাৎ করে চা বাগান বন্ধ হওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়ল চাবাগানের হাজার হাজার শ্রমিক। দুর্গাপূজায় যখন উৎসবের মেজাজে ডুয়ার্সবাসী তখন মধ্যে বিষাদের সুর ডুয়ার্সের চা বলয়ে। এমনিতেই বেশ কিছুদিন যাবৎ পুজোর বোনাস নিয়ে বাগান শ্রমিক এবং মালিক কর্তৃপক্ষের মধ্যে বিভিন্ন বাগানে অসন্তোষ চলছিল। তারপর পূজোর মুখে এভাবে অযাচিতভাবে বাগান বন্ধ হওয়ার রীতিমতো ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন শ্রমিকরা। পূজোর দিনগুলোতে পরিবারের সদস্যদের নতুন জামাকাপড় আর আনন্দ উপভোগ করার জন্য বোনাস বিশেষ ভুমিকা রাখে। কিন্তু এবার বিষাদের ছাপ স্পষ্ট হয়ে গেলো শ্রমিকদের মুখে। বাগান শ্রমিক এবং চা শ্রমিক সংগঠন গুলির দাবী ছিল ২০ শতাংশ বোনাসের। কিন্তু মালিক কর্তৃপক্ষ তা মানতে নারাজ ছিল। যার কারণে গেট মিটিং বিক্ষোভ চলছিল বিভিন্ন বাগানে। শুক্রবার বন্ধ হয়ে যায় জলপাইগুড়ি জেলার মাল মহকুমার দু’টি চা বাগান আর শনিবার সকালে বন্ধ হয়ে গেল ধূপগুড়ি মহকুমার বানারহাট ব্লকের একটি চা বাগান। চামুর্চি চা বাগানের স্থায়ী শ্রমিক সংখ্যা ছিল ১০৭৪ জন। তারা প্রত্যেকেরই উপার্জনের একমাত্র রাস্তা ছিলো চাবাগান। পুরো বিষয়টা নিয়ে মালিকপক্ষের উদ্দেশ্যে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন এবং প্রশাসনের কর্তা ও শাসকদলকে বিঁধেছেন জলপাইগুড়ির সাংসদ জয়ন্ত কুমার রায়। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন কিছু চাবাগান মালিক আছেন যারা শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা বিশেষ করে বোনাস না দেওয়ার জন্য নানারকম কৌশল করেন। এমনিতেই শ্রমিকরা গরীব মানুষ, বছরে এই ক’টা দিন আসে পূজার। সবাই একটু আশা করে তাদের সন্তানসন্ততিদের বা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একটু আনন্দ করার। বোনাস প্রথাটা আমাদের এখানে ব্রিটিশ আমল থেকেই প্রচলিত, অথচ এখানকার অসাধু বাগান মালিকরা শ্রমিকদের কথা না ভেবে নিজেদের পকেট ভরানোর জন্য পূজোর আগে বাগান বন্ধ করে পালাচ্ছে। প্রশাসনের কর্তারা বিশেষ করে শাসকদলের মদতেই এসব হচ্ছে। কালকে খবর পেলাম দু’টো বাগান বন্ধ হয়েছে আজকে খবর পেলাম আরও চারটে বাগান বন্ধ হয়েছে। দেখবেন যখন সিজন শুরু হবে তখন আরও বাগান চালু হয়েছে। একই মালিকের একই চাবাগানের এরকম অবস্থা কেনো? পাশাপাশি অন্য চা-বাগান গুলো যখন বোনাস দিচ্ছে, শ্রমিকদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে তারা তো বন্ধ করেনি। তাহলে তারা বন্ধ করছেনা এনারা বন্ধ করছে কেনো? সেখানে কি কাজ হয়না নাকি চা তারা বিক্রি করেনা। কালকেই গিয়েছিলাম তোতাপাড়া চা বাগানে, সেখানে বেশ কয়েকবছর ধরে তারা পিএফ এর পয়সা জমা করছে কিন্তু এখন পর্যন্ত শ্রমিকদের কাছ থেকে শ্রমিকদের টাকাটা জমা করা হচ্ছেনা। আমি ইতিমধ্যেই পিএফ এর যে কমিশনার তার সাথে কথা বলেছি এবং উপরেও জানাচ্ছি ব্যাপারটা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct