আপনজন ডেস্ক: কেন্দ্রীয় সরকারের এমজিএনআরইজিএ-র আওতায় একশো দিনের কাজে রাজ্যের পাওনা আটকে রাখার কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ও আবাস যোজনার টাকা আদায়ের দাবিতে দিল্লিতে ৩ অক্টোবর প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। এ রাজ্য থেকে তৃণমূল সমর্থকদের নিয়ে সেই সমাবেশে যাওয়ার জন্য তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে পূর্ব রেলের কাছে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করতে আর্জি জানানো হয়েছিল। সেই আর্জি খারিজ করে আইআরসিটিসি শুক্রবার জানিয়ে দিল তাদের পক্ষে বিশেষ ট্রেন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তৃণমূলের ট্রেনের আবেদন ছিল শনিবারের জন্য। ফলে, ২৪ ঘণ্টা আগে ট্রেন না পাওয়ায় তৃণমূল কংগ্রেসের তাদের সমর্থকদের নিয়ে দিল্লি যাওয়া সমস্যার মধ্যে নিপতিত হল। আর রেল তৃণমূল কংগ্রেসকে এই ট্রেন না দেওয়ায় রাজনিতক প্রতিহিংসার অভিযোগ তুললেন তৃণমূল কংগ্রেসের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। জানা গেছে, ৩ অক্টেবার দিল্লি সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে আইআরসিটিসি-র গ্রুপ জেনারেল ম্যানেজারের কাছে আবেদন জানানো হয়েছিল। আইআরসিসিটিস সেই আবেদন রেলের কাছে পাঠিয়ে ট্রেনের বন্দোবস্তের কথা বলে। তৃণমূলের আশা ছিল শনিবার ৩০ সেপ্টেম্বর দিল্লির যাওয়ার ট্রেন মিলবে। কারণ, হাওড়া থেকে দিল্লি যেতে প্যান্ট্রি কার সহ ২২টি স্লিপার বগির ট্রেন বুক করার জন্য অগ্রিম হিসেবে ট্রেনের টিকিটের মূল্য ৫০ লক্ষ টাকা ও জামানত বাবদ ১১ লক্ষ টাকা জমা দিয়েছিল। কিন্তু পূর্ব রেলের অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রান্সপোর্ট ম্যানেজার (রুলস) সেখ আল্লারাখা আইআরসিটিসির ইস্টার্ন জোনের জেনারেল ম্যানেজার দীপঙ্কর মান্নাকে জানিয়ে দেন, তারা পরীক্ষা করে দেখেছেন ৩০ সেপ্টেম্বরের জন্য যেমন যেমন বগির উল্লেখ করে হাওড়া থেকে একটি বিশেষ ট্রেন চাওয়া হয়ছে, তা দেওয়া সম্ভব নয়। সেই খবর আইআরসিটিসির ইস্টার্ন জোনের জেনারেল ম্যানেজার দীপঙ্কর মান্না তৃণমূল কংগ্রেসকে জানিয়ে দিয়ে বলেছেন, ট্রেনের ব্যবস্থা না হওয়ার জন্য তাদের টাকা ফেরতের প্রক্রিয়া চলছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন রেল তৃণমূলের দিল্লি সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য বিশেষ ট্রেনের আর্জি বাতিল করার কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই জানান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি রেল ও আইআরসিটিসির দুটো পোস্ট করে বলেন, বিজেপি সরকার নির্লজ্জভাবে আমানত গ্রহণের পরে একটি বিশেষ ট্রেন সরবরাহ করতে অস্বীকার করেছে। পশ্চিমবঙ্গের ন্যায্য পাওনা আদায়ের জন্য প্রতিবাদ করার অধিকারে এই নির্মম বাধা তাদের ভীতির সুস্পষ্ট প্রমাণ।অভিষেক এ বিষয়ে বলেন, পূর্বরেল কর্তৃপক্ষ বিশেষ ট্রেনের জন্য আমাদের আবেদন খারিজ করে দিল। এভাবে বাংলার মানুষের কণ্ঠরোধ করা যাবে না। বাংলার মানুষ যাতে তাঁদের প্রাপ্য পায় তা দেখার অঙ্গীকার করেছি আমরা। এই ধরনের পদক্ষেপ করে আমাদের টলানো যাবে না। ন্যায়ের দাবিতে আমাদের আওয়াজ দিল্লি পর্যন্ত পৌঁছবেই। কোনও পরিস্থিতিতেই আমাদের রোখা যাবে না।অপরদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের এক্স অ্যাকাউন্টে লেখা হয়, নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষের আগমন প্রত্যক্ষ করছে, যারা তাদের ন্যায্য পাওনা দাবি করার জন্য ‘দিল্লী চলো’-এর জন্য প্রাধান্য পেয়েছে। আমাদের একতা ও সংকল্পে ভীত, @BJP4India কেন্দ্রীয় নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিশ্রুত বিশেষ ট্রেন সরবরাহ করতে অস্বীকার করেছে। কিন্তু কোনো কিছুই আমাদের থামাতে পারবে না!উল্লেখ্য, দিল্লি সমাবেশে যোগ দিতে ইতিমধ্যে তৃণমূল সমর্থকরা বিভিন্ন জেলা থেকে জড়ো হয়েছেন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। সেখানে চলছিল দিল্লি যাওয়ার চূড়ান্ত প্রস্তুতি। সেই সময় ট্রেন বাতিলের খবরে সমর্থকদের মধ্যে বিমর্ষ দেখা দিয়েছে। যদিও তাদের আশা, অন্য কোনও উপায়ে তাদের দিল্লি যাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে দল।অবশ্য আগেই রাজধানীতে পৌঁছেছে ৫০ লক্ষেরও বেশি বঞ্চিত মানুষের চিঠি। কর্মসূচি সফল করতে আগেভাগে দিল্লিতে পৌঁছনোর কথা তৃণমূলের শীর্ষ নেতা ও সমর্থকদের। সেই মতো শনিবার সকাল আটটায় ট্রেন ছাড়ার কথা থাকলেও তা বাতিল হওয়ায় দিল্লি চলো অভিযান অনেকটাই ধাক্কা খেল বলে মনে করা হচ্ছে।এ বিষয়ে দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকেই করা হয়েছে। বিজেপি যে তৃণমূলকে ভয় পাচ্ছে এটা তারই প্রমাণ। তবে এ সব করে কোনওভাবেই তৃণমূলকে রোখা যাবে না।উল্লেখ্য, ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে দিল্লির চলোর ডাক দিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে কর্মসূচির কিছু পরিবর্তন করা হয়। এই ধর্নায় তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাজির থাকবেন বলৌ জানিয়েছিলেন। এছাড়া, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিংয়ের কাছে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ, বিধায়ক, জেলা পরিষদের সদস্যদের নিয়ে দেখা করার জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট চাওয়া হলেও তা মেলেনি। তবে বকেয়া আদায়ের জন্য, ৫০ লক্ষ বঞ্চিত মানুষের চিঠি তার দফতরে দেওয়া হবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct