বিমেষ প্রতিবেদক, মোথাবাড়ি, আপনজন: এক মুদিখানা দোকানদারের ছেলে মোবারাক হোসেন। তার পিতা মৃত বেলাল হোসেন ও মাতা জামেলা বিবি। তবে সে ছিল উত্তরলক্ষীপুর হাই স্কুলের অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র বরাবরই ক্লাসে প্রথম। সেখান থেকে মাধ্যমিকে বিদ্যালয়ে তৃত্বীয় স্থান অধিকার করে সে। তারপর বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা শুরু হয় মালদা মডেল মাদ্রাসায়। সেখান থেকে উচ্চমাধ্যমিকেও বিদ্যালয়ে তৃত্বীয় স্থান অধিকার করে। তারপর রাজ্যের বিখ্যাত সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আল আমিন মিশনে ডাক্তারি নিট কোচিং নেওয়া হয়। ছোটোবেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার। পরিবারে অভাব হলেও কখনো লেখাপড়ার হাল ছাড়েননি। ধীর গতিতে এগিয়ে গেছেন তার স্বপ্নের গন্তব্যে। তবে স্বপ্ন পূরণ করতে কত বাধা বিপত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থ। তার পরিবারে পিতা মাতা সহ ৮ জন সদস্য। তার বড়ো দাদা আব্দুল কাদিরও ছিলেন মেধাবী কিন্তু পরিবারের বেহাল দশায় মাধ্যমিকের পর পড়াশোনা আর চালিয়ে যেতে পারেননি। তিনি নিজের ভাই মোবারাকের পাশে দাঁড়িয়ে তার স্বপ্ন পূরণ করতে দিনরাত পরিশ্রম ও সহযোগিতা করেছেন। তারপর ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট (নিট) পরিক্ষায় সফল হয়ে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পাই মোবারাক। তখন পরিবারের প্রত্যেকের মুখে ফুটে ওঠে আনন্দের হাসি। এরপরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ পায় মোবারাক। সেখান থেকে ব্যাচেলর অফ মেডিসিন, ব্যাচেলর অফ সার্জারি (MBBS) করার পর কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে প্রসুতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ওঠেন।
তিনি প্রথমত নিজের এলাকা বাঙ্গীটোলা গ্রামীণ হাসপাতালে মেডিক্যাল অফিসার এবং বর্তমানে সুজাপুর গ্রামীণ হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার। মোবারাক হোসেন জানান, আমার জন্ম এক দরিদ্র পরিবারে। ছোটবেলা থেকে পড়াশোনায় আগ্রহ ছিল খুব। বাড়ির কাজকর্মের পাশাপাশি স্কুল করা ও বাড়িতে পড়াশোনা করতাম। তা দেখে বড়ো দাদা ও পরিবারের সবাই বড়ো হওয়ার স্বপ্ন দেখতে উৎসাহ দিত সকলেই। কখনোই প্রাইভেট খরচ নেওয়ার সুযোগ ছিল না। স্কুলের শিক্ষকরাও সবসময় ভালো পরামর্শ আর প্রতি মুহূর্তে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সাহস ও প্রেরণা দিতেন। তিনি আরও বলেন, আমি এক প্রত্যন্ত এলাকা উত্তরলক্ষীপুর অঞ্চলের শুকরদী টোলা গ্রাম থেকে একজন চিকিৎসক হতে পেরেছি, এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। আমার বাবা দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর বেশকিছুদিন আগেই বিদায় নিয়েছেন। তার মহৎ দোয়া ও আশীর্বাদই আমাকে সফলতা এনে দিয়েছে। আমাদের এলাকায় বহু বছর আগে সব মাঠে ঘাটে চাষবাস করে জীবন কাটাত কিন্তু আজ কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছি আমরা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct