আপনজন ডেস্ক: ব্যথা রোগের উপসর্গ মাত্র। এটি কোনো রোগ নয়। আমরা যখন শরীরের কোথাও আঘাতপ্রাপ্ত হই বা রোগাক্রান্ত হই, তখন ব্যথা অনুভব হয়। এই সব ব্যথার আবার বিভিন্ন রকমফের হতে পারে। আমরা চলার পথে কোনো চোট বা আঘাত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জায়গাটি ফুলে যায়, গরম হয়ে যায়, ব্যথা অনুভব করি। এ রকম ব্যথাসহ মাংসপেশি ও অস্থির যেকোনো ব্যথাই মূলত মাস্কুলোস্কেলিটাল বা মাংসপেশি ও অস্থি-সংক্রান্ত ব্যথা। স্নায়ু বা নার্ভের ওপর চাপজনিত ব্যথা। আমাদের মেরুদণ্ডের কশেরুকার মধ্যবর্তী জায়গা থেকে স্পাইনাল নার্ভগুলো রুট অনুযায়ী হাত-পা ও শরীরের বিভিন্ন দিকে যায়। কোনো কারণে সেই নার্ভের ওপর চাপ লেগে গেলে ব্যথা অনুভূত হয়। এ-জাতীয় ব্যথাকে নিউরোলজিক্যাল পেইন বা স্নায়ুজনিত ব্যথা বলা হয়। লাম্বোগো সায়টিকা, পিএলআইডি বা ডিক্স প্রলেপস এ ধরনের রোগের মধ্যে অন্যতম। কিছু কিছু রোগ আছে, যেগুলোকে অটো-ইমিউন ডিজিজ বলা হয়, অর্থাৎ আমাদের শরীরে যে অ্যান্টিবডি আছে, তা এই রোগগুলোকে প্রতিরোধ করতে পারে না। যেমন রিউমাটয়েড, অ্যানকাইলেজিং স্পনডাইলাইটিস, স্পনডাইলো-আর্থোপ্যাথি ইত্যাদি। এই সব রোগে হাত ও পায়ের বিভিন্ন জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধি আক্রান্ত হয় এবং ব্যথা করে। অনেক ক্ষেত্রে জয়েন্টগুলো ফুলে যায়। বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে ওঠার সময় বেশি ব্যথা করে। বয়স বাড়ার সঙ্গে যেমন আমাদের চুল পেকে যায়, তেমনি হাড়েরও ক্ষয় হতে থাকে। মেরুদণ্ডের হাড়ের ক্ষয় হলে তাকে স্পনডাইলোসিস বলে। যেমন সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস বা লাম্বার স্পনডাইলোসিস। তেমনি জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধির ক্ষয়ের কারণে যে রোগ হয়, তাকে অস্টিওআর্থ্রাইটিস বলা হয়। হাড় যখন ভঙ্গুর হয়ে যায় বা হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়, তখন এই সমস্যাকে অস্টিওপোরোসিস বলে। এগুলো সবই বয়সজনিত হাড় ক্ষয় রোগ এবং এসব রোগে ব্যথা অনিবার্য। রোগীর শরীরে কোনো একটি জীবাণু সংক্রমণের কারণে ব্যথা হয়। যেমন টিউমার, ক্যানসার, টিবি বা যক্ষ্মা রোগ ইত্যাদি। স্থানান্তরিত ব্যথা বা রেফার্ড পেইন, এ ধরনের ব্যথা খুবই মারাত্মক। এসব রোগে রোগীর সমস্যা এক জায়গায় কিন্তু কিছু উপসর্গ দেখা দেয় অন্য জায়গায়। যেমন একজন ব্যক্তির হাঁটুর নিচের মাংসপেশিতে ব্যথা। সে কারণে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে কিংবা হাঁটতে পারে না। খানিকক্ষণ বিশ্রাম নিলে ব্যথা কমে যায়। এ ক্ষেত্রে রোগী ব্যথার কারণ অনুভব করছে পায়ে, তেমনিভাবে রোগীর সমস্যা ঘাড়ে, কিন্তু ব্যথা অনুভব করছে হাতে। আবার সমস্যা কিডনিতে, কিন্তু রোগী ব্যথা অনুভব করছে কোমরে। এই ব্যথাকে অবহেলা করা যাবে না। কী কারণে শরীরে ব্যথা হচ্ছে, তা নির্ণয় করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যথার সঠিক কারণ জেনে চিকিৎসা শুরু করা উচিত।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct