নিজস্ব প্রতিবেদক, বসিরহাট, আপনজন: গত এক দশক ধরে যে এলাকা বরাবরই তৃণমূলের দখলে মুখ্যমন্ত্রী যাওয়ার পরেই বিজেপির দখলে চলে গেল সেই এলাকা সহ গোটা পঞ্চায়েত। এলাকায় গিয়ে এলাকার বাসিন্দাদের সমস্যার কথা শুনে রাতারাতি এলাকায় উন্নয়নের ডালি সাজিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তার কয়েক মাস পরেই হল পঞ্চায়েত নির্বাচন। আর সেই পঞ্চায়েত নির্বাচনে সেই এলাকার মানুষ তৃণমূল থেকে মুখ ফিরিয়ে বিজেপির দিকে চলে গেল যা নিয়ে রীতিমতো এলাকায় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। গত কয়েক মাস আগে সুন্দরবন সফরে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুন্দরবন সফরে এসে হাসনাবাদের টাকিতে রাত্রিযাপনের পর ইছামতি নদী ভ্রমণে বেরিয়ে হাসনাবাদের খাঁ পুকুরিয়া এলাকায় গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে গিয়ে সাধারণ মানুষদের সঙ্গে কথা বলে মানুষদের সমস্যার কথা শুনে কয়েক দিনের মধ্যে এলাকায় পাইপ লাইনের মাধ্যমে পৌঁছে গিয়েছিল পরিশুদ্ধ পানীয় জল, এলাকায় তৈরি হয়েছিল কংক্রিটের ঢালাই রাস্তা, রাতারাতি সংস্কার করা হয়েছিল এলাকার প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো এলাকায় উচ্চপদস্থ প্রশাসনিক আধিকারিকরা পৌঁছে রাতারাতি এলাকায় উন্নয়নের ডালি সাজিয়ে তুলেছিলেন। কিন্তু তার কয়েক মাস পরেই ওই এলাকায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পরেই চক্ষু চড়ক গাছ হয়ে যায় তৃণমূল কর্মীদের। ঠিক যে বুথে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গিয়েছিলেন এবং যে বুথে তিনি উন্নয়ন এর কাজ করেছিলেন সেই বুথ এবার চলে গেল বিজেপির দখলে। প্রসঙ্গত এই হাসনাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েত বরাবরই তৃণমূলের দখলেই ছিল। গত ১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচন, ১৯ সালে লোকসভা নির্বাচন, ২১ সালে বিধানসভা নির্বাচন প্রতিটি নির্বাচনে এই হাসনাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতিটি বুথ ছিল তৃণমূলের দখলে। এমনকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে খাঁ পুকুরিয়া এলাকায় গিয়েছিলেন সেই খাঁ পুকুরিয়া এলাকা গত এক দশক ধরে তৃণমূলের দখলেই ছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী যাওয়ার পরেই তৃণমূলের সেই দুর্গ ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। এই হাসনাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েত এখন পুরোপুরি বিজেপির দখলে দ্বিতীয় স্থানে চলে এসেছে বাম- কংগ্রেস- আইএসএফের জোট। আর একেবারে তৃতীয় স্থানে চলে গিয়েছে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী এলাকায় যাওয়ার পরেই কেন এই তৃণমূলের ভরাডুবি? এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, এলাকায় উন্নয়ন হলেও সম্প্রতি দলীয় কর্মীদের ব্যবহারে অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন সাধারণ মানুষেরা। সম্প্রতি যে সমস্ত তৃণমূল কর্মীদের হাতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারা সাধারণ মানুষদের পাশে থাকছেন না, তাদের মদত পুষ্ট এলাকার দুষ্কৃতীরা এলাকায় দুষ্কর্ম আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এলাকায় এলাকায় তোলাবাজি শুরু করেছেন তাদের ঘনিষ্ঠ দুষ্কৃতীরা। ফলে তৃণমূল বিমুখ হয়েছেন বাসিন্দারা। তাদের এই ব্যবহারে যোগ্য জবাব দিতে এলাকার মানুষ তৃণমূল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বিজেপির দিকে ঝুঁকছে। গত একুশে বিধানসভা নির্বাচনের পরপরই এই এলাকার ব্লক সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল হাসনাবাদের প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা আমিরুল গাজীকে। তার নেতৃত্বে হাসনাবাদের বুথ স্তরের যে সমস্ত তৃণমূলের কর্মীরা দায়িত্ব পেয়েছেন তাদের পছন্দ করছে না এলাকার মানুষেরা দাবি এলাকার বাসিন্দাদের। ওই ব্লক সভাপতি দায়িত্ব পাওয়ার হয় পঞ্চায়েত নির্বাচন। আর সেই পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের এই ভরাডুবি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct