আপনজন ডেস্ক: ২১শে জুলাই কলকাতার ধর্মতলায় তৃণমূল কংগ্রেসের শহীদ দিবস সমাবেশের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সভাস্থল পরিদর্শন তরেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী, অরূপ বিশ্বাস সহ তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা। সেখানে গিয়ে যারা ধর্নার সময় গেয়েছিলেন তাদের গান শুনলেন। ২১ শে জুলাই গানের রিহার্সালে মুখ্যমন্ত্রীর গলায় শোনা গের এবার জয় বাংলা নয় এবার জয় ইন্ডিয়া। এমনকী গিটার বাজালেন নিজে। একশের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখে তিনি মুখ খোলেন মণিপুরের ঘটনা নিয়ে। মণিপুরে সহিংসতা নিয়ে কেন্দ্রের সমালোচনা করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানোর জন্য তিনি অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, গত ৪ মে মণিপুরের একটি ভিডিও দেখে দেশের ‘মা-মেয়েরা’ কাঁদছে। এই নৈরাজ্য বন্ধ করতে হবে। কেন্দ্রের নীতির কারণেই দেশ জ্বলছে। তিনি বলেন, ‘সরকারের চাপে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে ভিডিওটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এরই মধ্যে অনেক মানুষ এই বর্বরতা প্রত্যক্ষ করেছে। আই.এন.ডি.আই.এ এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ এবং এর বিরুদ্ধে লড়াই করবে। এর আগে এক টুইটবার্তায় তিনি এই ঘটনাকে ‘বর্বরতা’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। টুইটারে তিনি লিখেছেন, মণিপুরের ভয়াবহ ভিডিও দেখে আমার হৃদয় ভেঙে গিয়েছে। দুই মহিলার উপর উন্মত্ত জনতার নির্মমতা দেখে মনে তৈরি হয়েছে ক্রোধ। প্রান্তিক শ্রেণির নারীদের উপর যে হিংসা হয়েছে, তা দেখার কষ্ট ও যন্ত্রণা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। বর্বরোচিত এই কাজ সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এই অমানবিক অত্যাচারের প্রতিবাদে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়াতে হবে। টুইটে মমতা বলেন, দুর্বৃত্তদের এই ধরনের অমানবিক কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাতে এবং ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার দিতে আমাদের অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
পরে সংবাদিকদের সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মণিপুরের যে ভিডিও আমাদের সামনে এসেছে, তা এক কথায় ভয়ানয়। সেটা দেখে ভাবছি, এ কোন দেশ? এটা আমাদের লজ্জা। এর নিন্দা করার ভাষা নেই। তাঁর প্রস্তাব, নবগঠিত বিরোধীদের মহাজোট ‘ইন্ডিয়া’র প্রতিনিধিদল অবিলম্বে মণিপুর সফর করুক। তিনি বলেন, যদি অবশ্য ‘ইন্ডিয়া’র সব শরিক তাতে রাজি থাকে। তৃণমূল নেত্রী বলেন, ওই নারকীয় দৃশ্য দেখে আমাদের হৃদয় কাঁদছে। এ কোন দেশ? এই ঘটনা সারা দেশের লজ্জা। দীর্ঘ প্রায় ৮০ দিনেরও বেশি সময় ধরে হিংসার আগুনে জ্বলছে মণিপুর। উত্তর-পূর্বের ওই রাজ্যের ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে এত দিন প্রধানমন্ত্রী মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন। তা নিয়ে কংগ্রেস সহ তাবড় বিরোধী দলগুলি প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করতে ছাড়েনি। বৃহস্পতিবারই প্রথমবার মণিপুর নিয়ে মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রী। সংসদের অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে বাইরে তিনি বলেন, মণিপুরের ঘটনায় দেশ ও জাতির মাথা হেঁট হয়ে গিয়েছে লজ্জায়। যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। বিরোধীদের দাবি ছিল প্রধানমন্ত্রীকে মণিপুরের ঘটনা নিয়ে সংসদে বিবৃতী দিতে হবে। এই ইস্যুতে সংসদের অধিবেশনের প্রথম দিনই বিরোধীরা হইহট্টগোল করেন। ফলে সংসদের দুই কক্ষেই অধিবেশন মুলতুবি হয়ে যায়। আবার এদিনই দেশের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় মণিপুরের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ওই রাজ্যে যা হচ্ছে, তা সাংবিধানিক পরিকাঠামোকে আঘাত দিচ্ছে। গণতন্ত্রের পক্ষে তা খুবই ভয়ঙ্কর। এদিন মমতা ধর্মতলায় শহীদ দিবসের সভাস্থল পরিদর্শনের আগে মণিপুরে মহিলাদের বিবস্ত্র করে হাঁটানো এবং গণধর্ষণের ভাইরাল হওয়া ভিডিও নিয়ে টুইটও করেন। তাতে তিনি লেখেন, ওই হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখে ক্রোধে আমার গা জ্বলছে। এই রাজ্যের মহিলার উপর যে অত্যাচার হয়েছে, তা দেখে দুঃখপ্রকাশ করার করার কোনও ভাষা পাচ্ছি না। বর্বরোচিত এই কাজ সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে, যা মানবতার বোধগম্য নয়। এই অমানবিক অত্য়াচারের প্রতিবাদে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়াতে হবে। এরপর সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী সভাস্থলে যান। শহীদ দিবসের শেষ প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে। তাঁর সঙ্গে তৃণমূলের শীর্ষ নেতারাও হাজির ছিলেন।সভামঞ্চের দায়িত্বে থাকা নেতাদের মমতা প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন। কথা বলেন কলকাতা পুলিশের কর্তাদের সঙ্গেও। পরে তিনি সকলকে শুক্রবার শহীদ সমাবেশে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণও জানান। প্রতি বছরই মমতা নিয়ম করে শহীদ দিবসের আগের দিন সভাস্থল দেখতে আসেন দলীয় সতীর্থদের সঙ্গে নিয়ে। এদিনও তাঁর ব্যতিক্রম হয়নি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct