সেই কথাগুলো...
শংকর সাহা
সেদিন রাস্তার মোড়ে কিছুটা উদভ্রান্তের মতো দাঁড়িয়ে থাকে তমালিকা। রাস্তার পাশে তেমন কোনো টোটো বা অটোর দেখা নেই। এতো রাতে কি করে সে বাড়ি ফিরবে? একদিকে বাড়ি ফেরার চিন্তা অন্যদিকে অসুস্থ স্বামীর জন্যে ব্লাড ব্যাঙ্কে হন্যে হয়ে ঘুরেও রক্ত না মেলায় চিন্তায় যেন কপালে ভাঁজ পড়েছে তার। মনে মনে ঈশ্বরকে স্মরণ করতে থাকে সে । এমন সময় শুনশান রাস্তার উপার থেকে একটি রিক্সাকে দেখতে পায় তমালিকা। হাত নাড়িয়ে তাকে থামতে বলে।‘আপনি বড়বাজারে যাবেন?’ “ না ম্যাডাম,এতো রাতে” তমালিকার দিকে তাকিয়ে রিক্সাওয়ালা বলে বসে।‘ আমি খুব বিপদে পড়েছি..একটু নিয়ে যাবেন ভাই ?’ তমালিকার কথা ফেলতে পারলনা সেদিন রিক্সাওয়ালাটি। রিক্সায় তাকে চেপে নিয়ে সোজা বড়বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিল সে।” একটু জোরে চালাবে ভাই..তমালিকার ব্যস্ততা দেখে রিকসাওয়ালাটি জিজ্ঞাসা করে, ‘আপনি কি খুব বিপদে পড়েছেন?’ রিক্সাওয়ালার দিকে চেয়ে তমালিকা বলে, “ কাল কারখানায় কাজ করতে গিয়ে হঠাতই আমার স্বামীর আ্যাক্সিডেন্ট হয়। এখন রক্তের প্রয়োজন। কি করবো বুঝতে পারছিনা!”‘ দিদিমণি ওনার রক্তের গ্রুপ কি?” পেছন ফিরে তমালিকাকে জিজ্ঞাসা করে রিক্সাওয়ালাটি।পরেরদিন সকালে..হাসপাতাল থেকে ফোন আসে। রক্তের জোগাড় হয়ে গেছে। ফোন পেয়েই হাসপাতালে ছুটে যায় তমালিকা। স্বামীকে যে বাঁচাতেই হবে। ডাক্তারের সাথে কথা বলে রক্ত দেবার ব্যবস্থা হয়।এখন সে বিপদমুক্ত। ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে ব্লার্ড ব্যাঙ্কের দিকে এগিয়ে যায় সে। জানতে চায় রক্ত কে দিলেন? তমালিকা জানতে পারেন সেই রিক্সাওয়ালাটিই আজ তার স্বামীর প্রাণ বাঁচিয়েছেন। তিনিই রক্ত দিয়েছেন।হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে বাইরে শূন্য আকাশের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তমালিকা। আর মনে পড়ে গতকাল রাত্রের সেই রিক্সাওয়ালার কথাগুলো..
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct