বৈষম্যের ঘনঘটায় এক চিলতে রৌদ্দুর...
কেতকী মির্জা
অফিসের বড় বাবুর মুখটা বড্ড বেশিই মলিন দেখায়। কিন্তু খুব সহজ সরল এককথায় দারুণ ভালো মনের মানুষ তিনি। মুখে সবসময় অমলিন হাসি লেগেই থাকে। নিম্ন স্তরের কর্মী থেকে শুরু করে সবার সাথে খুব ভালো ব্যাবহার করেন। নিজের কর্ম দক্ষতায় এক টার পর একটা পদোন্নতি। এতটুকু অহংকার নেই। খুব কাজ পাগল মানুষ। অফিসের সকলেই বড়বাবুকে প্রচন্ড ভক্তিশ্রদ্ধা করে। কিন্তু এই সুন্দর শান্ত স্বভাব মানুষটার মুখটা দেখেই মনে হয় কোথায় যেন একটা অব্যক্ত ব্যথা বহন করেন জসীমউদ্দীন বাবু। চুলে চিরুনি দিতে গিয়ে আব্বুর জন্য মনে মনে খুব কষ্ট হয় তনুর। নিজের হাতে স্নান করানো থেকে শুরু করে খাওয়ানো চুল বাঁধা সব কিছুই বাপি করে দিত। মা মারা যাওয়ার পর থেকেই যদিও মায়ের কথা খুব একটা মনে পড়ে না। মায়ের জন্য মন কেমনের সুযোগই দিত না। বলতো আমি তোমার আব্বু আবার আমিই মা।খুব কষ্ট হয় সারাজীবন মেয়ের কথা ভেবে একা কাটিয়ে দিল। তনু MBA কমপ্লিট করে ভালো চাকরি তে জয়েন্ট করেছে সবেমাত্র। বাবার তাড়া পড়েছে মেয়েকে সংসারি করার। ডেঁটে বাবার মুখের উপর বলে দিয়েছে তনু বিয়ে টিয়ে আমার দ্বারা হবে না। তোমাকে একা ফেলে আমি ড্যাডাং ড্যাডাং শ্বশুরবাড়ি চলে যাবো সেটি হচ্ছে না মশাই। মামণি এরকম বলে না,আমি আজ আছি কাল নেই তোমাকে একটা সৎপাত্রের হাতে তুলে সংসারি করতে পারলে তবেই আমার শান্তি। আর দুবছর পর রিটায়ার্ড হয়ে যাবো তারপর দেশে বিদেশে ঘুরে বেড়াবো আমাকে নিয়ে কোন টেনশন করার দরকার নেই। তবুও আমি তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারবো না আব্বু। বিয়ের কথা ভাবলেই চোখ জলে ভরে যায় তনুর। আজ একটু মন্দিরে যাবো বৌমা। ভাত ডাল মাছের ঝাল করে দিলাম, তুমি একটু শুক্তো রান্না করে নিও। এই বলে লাবণী বৌমার উত্তরের অপেক্ষায় মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। তাই যদি মনের ইচ্ছা ছিলো সকাল সকাল সমস্ত কাজ গুছিয়ে নিতে পারতেন। আমি কখন করবো। থাক না আজ নাই বা গেলেন পূজো দিতে আর এক দিন না হয় যাবেন হঠাৎ হঠাৎ যত্তসব পাগলামি। ৌমার কথায় মুখটা ম্লান হয়ে যায় লাবনীর মনে মনে বিড় বিড় করে ঠাকুর নিজের মতো করে তোমাকে দর্শন করার অধিকার ও আমার নেই! এ কোন পাপের শাস্তি আমার বলতে পার ?সারাজীবন তো দুঃখ কষ্ট ভোগ করে এলাম এবার আমায় একটু শান্তি দাও করুণাময়। তুহিন যখন আট বছরের ছেলে তখন ওর বাবা বাইক অ্যাকসিডেন্ট এ মারা যায়। কত ঝড় ঝাপটা সহ্য করে ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করতে চেয়ে ছিলাম। কিন্তু মানুষ বলতে যা বোঝায় সেটা করতে পারিনি ও একটা স্বাবার্থপর বৌএর গোলাম তৈরী হয়েছে। কি আর করবে ? করার মত কিছু ক্ষমতা নাই,সবই কপালের উপর ছেড়ে দিয়ে লাবণী দেবী বাড়ির কাজ কর্মে মন দিলেন। জসীম আজ ভীষণ খুশি ওর অফিসের কলিগ তাহির একটা ভালো পাত্রের সন্ধান দিয়েছে। যেমন করেই হোক মেয়েকে রাজি করাতেই হবে। সকাল সকাল বাড়ি এসে মেয়ের আসার অপেক্ষা করতে লাগলেন। বাপ মেয়ের সংসার কাজের মেয়ে রান্না বান্না করে রাখে। মেয়ে বাপে খেয়ে যে যার মতো কাজে বেড়িয়ে যায় আব্বু আজ তুমি আমার আগে পৌঁছে গেছো কি ব্যাপার ? হ্যান্ডব্যাগ টা হাত থেকে শোফার উপড় নামিয়ে রাখে তনুজা। আগে হাত মুখ ধুয়ে নাও চা খেতে খেতে গল্প করা যাবে। দেখো আব্বু, আমি তোমাকে একা রেখে বিয়ে করতে পারবো না। আগেও বলেছি এখনও বলছি। তুমি তাহলে আমার কথা শুনবে না ? এরকম একটা ভালো সমন্ধ হাত ছাড়া হয়ে যাবে। সবসময় ভালো সমন্ধ পাওয়া যায় না! বলতে বলতে গলা ধরে এলো জসীমউদ্দীনের। আচ্ছা আব্বু এক কাজ করলে হয় না! আগে তোমার বিয়ে দিয়ে একটা মা নিয়ে আসি তারপর না হয় আমতা আমতা করে বলল তনু। তুমিই বলো বাড়িতে মা না থাকলে এতো ঝক্কি বিয়েতে কে সামলাবে বল ? এ সব কি আজে বাজে বকছিস তনু। আমি তোর বাবা আর প্রতিটি বাবা মায়ের কর্তব্য তাদের সন্তানদের লেখা পড়া শিখিয়ে উপযুক্ত সময়ে সংসারি করা। আচ্ছা ঠিক আছে আমি মানলাম। কিন্তু আমারও তোমার জন্য কত কষ্ট হয়। তুমি যে আমার জন্য কতটা ত্যাগ স্বীকার করেছো সেটা আমি অনুভব করি। কত কত রাত তুমি আমায় ঘুম পাড়িয়ে নিজে জেগে কাটিয়েছো আমি সবই অবগত। তুমি বারান্দায় অন্ধকারে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে। ঘুম ভেঙে চুপি চুপি দরজার আড়ালে থেকে আমি সব দেখতাম। আবার বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম। আমারও খুব কষ্ট হতো আব্বু বিশ্বাস করো। তনুর দুচোখ বেয়ে শ্রাবণের ধারার মতো বৃষ্টি গড়িয়ে পড়ছে। আরে কাঁদিস না মামণি তোর কান্না আমি কিছুতেই সহ্য করতে পারি না জানিস তো। তাহলে তুমি আমার প্রস্তাবে না করোনা বলে দুইহাতে বাবার গলা জরিয়ে ধরে। পাগলী কোথাকার এও কি সম্ভব ? তুই কি চাস তোর বাবাকে নিয়ে লোকে হাসাহাসি করুক। কেউ হাসাহাসি করবে না আব্বু। করলেও আমি পরোয়া করিনা। যখন আমরা দিনের পর দিন, রাতের পর কেঁদে কষ্ট করে কাটিয়েছিলাম তখন কেউ ছিলো পাশে। একটা কথা জেনে রাখ আমার কথায় রাজি থাকলে, তবেই আমাকে বিয়ের বলতে আসবে তার আগে নয়। এ কি ভীষণ পরীক্ষায় আমাকে ফেললি মামণি ? বেশ তোর কথায় মানছি কিন্তু এই বুড়ো বয়সে আমার পাত্রী কোথায় পাবি ? সেটা তুমি আমার উপর ছেড়ে দাও বৎস্য। তোমার মেয়ে পারেনা এমন কোন কাজই নেই পৃথিবীতে বুঝলে! অনেকদিন পর যেন ঘরে হাসির বন্যা বয়ে গেল।
আজ সকাল সকাল সমস্ত কাজ সেরে ফেলেছে লাবণী। স্নান করে পূজোর থালি হাতে নিয়ে মন্দিরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। গলির মুখ থেকে বেরিয়ে যেই না বড়রাস্তায় পা দিয়েছে মাথার মধ্যে কেমন চক্কর দিয়ে উল্টে পড়ে গেল রাস্তার উপর। হৈ হৈ করে করে লোকজন জড়ো হয়ে গেল। গাড়ি থেকে নেমে বিষয় টা জানার জন্য ভিড় ঠেলে তনুজা দেখল এক বয়স্ক ভদ্রমহিলা পড়ে গিয়ে কোন রকমে উঠে বসেছেন। দেখি মাসিমা কোথায় চোট পেয়েছেন কিনা! চশমাটা কোনওরকমে চোখে পড়ে লাবণী দেবী বলেন না মা আমি ঠিক আছি কোথাও লাগেনি। আপনি কি মন্দিরে যাচ্ছি লেন চলুন পৌঁছে দিয়ে আসি,বলে নিজে গাড়ি করে মন্দিরে নিয়ে এলো। মেয়েটির উপর কেমন যেন একটা টান অনুভব করলো লাবণী। মামণির কি নাম ? কোথায় থাক ? আমার নাম তনুজা, বাবার নাম জসীমউদ্দীন। থাকি পার্কসার্কাসে। বাবার নাম টা শুনে একবার চমকে উঠলেন লাবণী। আচ্ছা মাসিমা আপনাকে কি বাড়িতে পৌঁছে দেবো ? না মা আমি ঠিক আছি কোন অসুবিধা নেই আমি একাই যেতে পারবো। তুমি খুব ভালো মেয়ে। ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন। আচ্ছা আপনি একবার ডক্টর দেখিয়ে প্রেসার টেসার চেক করিয়ে নেবেন কিন্তু। আবার না কোন বিপদে পড়েন। চোখ দিয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে দু গাল বেয়ে। কাঁদবেন মাসীমণি এই নিন আমার কার্ড প্রোয়োজনে ফোন করবেন মেয়ের মতো করে, কোন সঙ্কোচ বোধ না করে। আমি খুশি হবো খুব আমারও মা নেই জানেন। লাবণীর বুকের ভেতর মোচর দিয়ে উঠল আহা এতটুকু মেয়ে তোমার মা নেই! ঠিক আছে আজ থেকে তুমি আমার মেয়ে। আর্শীবাদ করি অনেক বড় হও তুমি। তনুর চলে যাওয়ার দিকে অপলকে তাকিয়ে রইলো লাবণী এই চলন যেন অনেক দিনের চেনা। অনেক কিছু বহন করে নিয়ে গেল। তাহলে কি তনুর বাবা সেই জসীমউদ্দীন। চোখের সামনে কলেজের সেই সদা হাস্যচ্ছোল ছেলেটির মুখ ভেসে উঠল। এককালে বরাহনগর থানার দুঁদে ওসির একমাত্র কন্যা যার প্রেমে হাবুডুবু খেত ? এই ভীতু ছেলেটিকে বশে আনতে কম বেগ পেতে হয় নি। লাবণী সঙ্গে প্রেম করা মানে সৌভাগ্যের ব্যাপার বলেই জানতো কলেজের ছেলেরা। ব্যাতিক্রম ছিল শুধু জসীম। সেই জন্যেই লাবণীর গোঁ বেড়ে গিয়েছিল! কলেজ স্ট্রিটে বই কিনতে গিয়ে দেখা,তারপর কফি হাউসে একসঙ্গে বসে কফি খেতে খেতে প্রেমপর্ব শুরু। স্মৃতির ঝাঁপি থেকে এক এক করে সব বেরিয়ে এলো গড়ের মাঠে, গঙ্গার ধারে বসে চিনা বাদাম খেতে খেতে খুনসুটি করা। বন্ধুদের সঙ্গে দল করে সিনেমা দেখতে যাওয়া। আরো কত কি! সে সব সোনালী দিনের কথা ভাবতে কত মধুময় লাগছে। আহা আবার যদি ফিরে পাওয়া যেত সে সব দিন! একটা বড় দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো লাবণীর। সেই মেয়ে আজকে কেমন নিস্তেজ হয়ে গেছে। কেমন যেন একটু লাগছে শরীর টা, জ্বর জ্বর ভাব কিছু খেতে ভালো লাগছে না। অল্প কিছু মুখে দিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিল। মেয়েটি বলেছিল ফোন করতে দুদিন হয়ে গেল হয়তো আমার কথা ভাবতে পারে আমার নম্বর তো ও জানে না। এই ভেবে তনুর নাম্বারে ফোন লাগালো লাবণী। হ্যালো কে বলছেন আপনি, কন্ঠস্বর শুনে বুক কেঁপে গেল লাবণীর। কত দিনের চেনা গলা, একটু সামলে নিয়ে বলল তনুজা নেই ? তনু মা তো এখন ঘুমাচ্ছে। আপনার নাম বলুন তনু মা উঠলে কল করতে বলবো। আমার নাম লাবণী মুখার্জি! ফোনের ওপারে অস্ফুট স্বরে ভেসে এলো লাবণী মুখার্জি ? হ্যাঁ আমিই সেই তুমি যাকে একসময় লাবু বলে ডাকতে। সত্যি বলছো ? কেমন আছো তুমি ? ভালো আছো তো বেশ! কতদিন তোমাকে দেখিনি সেই কত বছর হয়ে গেল। ভালোই আছি এক প্রকার এর বেশি আর কি বলবো! চাপা দীর্ঘশ্বাস লাবণীর। তনু কে তুমি কেমন করে চিনলে ? দুদিন আগে ভগবানের দূত হয়ে ও আমার কাছে এসেছিল, নিজের নাম বাবার নাম সব বলে গেল আমায়। আমি ওকে দেখেই বুঝতে পেরেছি ও তোমারই মেয়ে। লাবণীকে থামিয়ে দিয়ে জসীম বলে উঠলো হ্যাঁ তনু বলেছিল বটে ঘটনা টা। আমি ভাবতে পারিনি তিনি আমার লাবু ছিলেন। ঠিক আছে তনু কে বলে দিও ওর মাসিমণি ফোন করেছিল, ভালোবাসা থেকো তোমরা এই বলে লাবণী ফোন কেটে দিল।
রিসিভার হাতে নিয়ে ভাবতে থাকে জসীম এই তো সেদিনের কথা যেন, দুপুর বেলায় হাজির বয়েজ হোস্টেলের ক্যাম্পাসে, চিন্তাক্লিষ্ট মুখ বলল বাবা সব জেনে গেছে। আমার খুব তাড়াতাড়ি অন্য কোথাও বিয়ের আয়োজন করবে মাকে তেমন করেই বলতে শুনেছি বাবাকে। তুমি একটা কিছু করতে প্লিজ! আমি তোমাকে ছাড়া বাচঁবো না। ঘটনা শুনে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলাম। বেকার ছেলে আমি চাকরি বাকরি নেই এই মুহূর্তে কি বা করতে পারি বল ? চাকরি করলেও তোমার সঙ্গে আমার বিয়ে দেবেন না বাড়ির লোক, তুমি মুসলিম আমি ব্রাহ্মণ কন্যা কোন দিন সমাজ মেনে নেবে না। তার থেকে আমারা অনেক দুরে পালিয়ে যায় চলো। কি ভাবে যাবো আমার যে কিছু অর্থ সংস্থান নেই। সে কথা তোমাকে ভাবতে হবে না সব ব্যাবস্থা আমি করে নেব। শুধু তুমি আমাকে নিয়ে চল দরকার হলে আমি তোমার ধর্মে দীক্ষিত হবো। আয়েশা আমিনা জুলেখা যে কোন নাম তুমি রাখতে পারো। না লাবণী ধর্মের বাধা আমি মানি না তুমি তোমার ধর্মেই থাকবে তুমি যে আমাকে এতো ভালোবাসো এর মর্যাদা আমি রাখতে পারবো তো! বলে কপালে একটা দীর্ঘ চুম্বন একেঁদিলাম। ও চোখের জল মুছে নিয়ে বলেছিল কাল খুব সকালে শিয়ালদা স্টেশনে দুজনে মিলিত হবো। সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে গেল লাবণীর কোন খোঁজ খবর নেই। কিন্তু হলো ওর বাবা কি জানতে পেরে ঘরে আটকে রেখেছে ? মারধোর করেনি তো ওকে বিভিন্ন চিন্তা কুরে কুরে খাচ্ছে যেন। অসহায় ক্লান্ত লাগছে খুব কি করি না করি বুঝে উঠতে পারছি না। এমন সময় ওর বান্ধবী মণিকা এসে বলল লাবণীর বাবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে নার্সিংহোম এ ভর্তি আছে। অবস্থা খুবই আশংকাজনক লাবণীর মা পাঠালো তুমি যেন ওর জীবণ থেকে সরে যাও, না হলে মেয়ে কে নিয়ে উনি আত্মঘাতী হবেন। বলে মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো মণিকা। আমার মাথায় যেন বজ্রপাত হলো তবুও শক্ত হয়ে বললাম, লাবণী কে বলে দিও ও যেন ওর বাবা মায়ের কথা শুনেই চলে, আমার কথা ভাবতে হবে না আমি ঠিক আছি। বলে স্টেশন থেকে বেরিয়ে এলাম। লাবণী কে আজ ডাক্তার দেখিয়ে নিয়ে এলো তনু। জ্বর হয়েছে কেউ ডাক্তার দেখাবার নেই।ফোনে শুনে নিজেই এলো। আস্তে আস্তে লাবণীর অনেক কাছে চলে এসেছে তনু। ওর বাড়িতে এতো দুরবস্থা সব জেনে খুব মায়া হয়। বলে আমাদের বাড়িতে চলে এসো মাসিমা অনেক আদর করে রাখবো তোমায়। হেসে বলে পাগল মেয়ে লোকে কি বলবে ? কোন সম্পর্কের জোড়ে তোমাদের বাড়ি থাকবো ? জড়িয়ে ধরে তনু যদি বলি আমার মায়ের আসনে! আমার তো মা নেই,আর আব্বুরও একজন সঙ্গী পাবেন। এ কি সাংঘাতিক কথা শুনছে, মাথা বন বন করে ঘুরতে লাগলো লাবণীর। সম্বিত ফিরে পেয়ে বলেন তুমি সমাজ মানো না ? এই বয়সে তুমি আমাকে! এতটুকু পুঁচকে মেয়ে কি বোঝো তুমি আমাদের সমাজের। আপনি সমাজের কথা বলছেন ? যখন কষ্ট পান যখন মনের ভিতর গুমরে গুমরে মরেন তখন কোথায় থাকে সমাজ। প্রতিবেশী সমাজ,সবার উপরে আগে মানুষ নিজে। আগে নিজেকে ভালোবাসুন নিজের কথা ভাবুন,তারপর অন্যকিছু। আর বয়সের কথা বলছেন ? অবসরের সময়ই তো মানুষের সঙ্গীর দরকার। নিজের বুকে হাত দিয়ে বলুন তো আপনার একাকিত্ব বোধ নেই। চলুন আমার সঙ্গে সমস্ত বেড়াজাল ভেঙে। জাতি গত বৈষম্যের দিন শেষ হোক শুরু হোক নতুন করে পথ চলা। আপনার ঠাকুর ঘর বানিয়ে দেব আমি আপনি পূজো করবেন। আব্বু নামাজ ঘরে নামাজ পড়বেন। আমাদের বাড়িতে নেমে আসবে পরম সুখ শান্তির ছায়া। সারা সমাজ দেখবে সবাই পেতে চাইবে এ শান্তির কোমল বাতাস। তনুকে বুকে জড়িয়ে লাবণী এক অনাবিল স্বর্গীয় সুখ উপভোগ করতে লাগলো। আধাঁর কেটে গিয়ে; ভোরের আজানের পরে, সূর্য আবারও রাঙিয়ে দিল পূবের আকাশ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct