সমাজ ও পরিবেশে প্রয়োগের অপেক্ষায় দূষক প্লাস্টিকের বহু বিকল্প
সজল মজুমদার
বর্তমান পৃথিবীতে সামগ্রিকভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে দূষিত বর্জ্য পদার্থের পরিমাণও চরমভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জীবনযাত্রার প্রতিটি মুহূর্তে আমরা প্লাস্টিক নির্মিত বিভিন্ন দ্রব্যাদি ব্যবহারে একেবারে যেন অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। প্লাস্টিক দূষণে জর্জরিত সমাজ এবং পরিবেশকে তাই বলে কি মুক্ত করা যাবে না! প্লাস্টিক নির্মিত বস্তুকে আমাদের বাহন করবার পরিবর্তে বর্জন করতে বদ্ধপরিকর আমাদের হতেই হবে। প্লাস্টিকের পরিবর্ত হিসেবে বহু বিকল্প আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সেগুলোর কার্যকারিতা এবং উপযোগিতা বিকল্প হিসেবে আমাদের দৈনন্দিন চাহিদা সহজেই মেটাতে পারে। সামগ্রিক দূষণ রোধে প্লাস্টিকের নানান বিকল্প তৈরি এবং ব্যবহারের প্রতি এখন থেকেই আমাদের আগ্রহ দেখাতে হবে। প্লাস্টিক নির্মিত ক্যারিব্যাগের বদলে জৈব ভঙ্গুর ক্যারিব্যাগের বহুল উৎপাদনের দিকে অবশ্যই নজর দেওয়া দরকার। পচনশীল এই ধরনের ক্যারীব্যাগ পরিবেশবান্ধব এবং সহজেই মাটিতে বিয়োজিত হয়ে পচে সার হয়ে যায়। মাটি দুষণও ঘটায় না। তাই আগামীতে বায়ো - ডিগ্রেডেবল ক্যারি ব্যাগ প্লান্ট দেশের নানান জায়গায় স্থাপন করা আবশ্যক হয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য বাজারে খুবই পাতলা কাপড়ের ক্যারিব্যাগ সুলভে এবং সস্তায় পাওয়া যায়,সেগুলোর বহুল প্রচলন হচ্ছে না কেনো!!?এই বিষয়ে একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। অন্যদিকে সম্প্রতি একটি সংবাদপত্রে প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে বাঁশ থেকে তৈরি “ পরিবেশ বান্ধব প্লাস্টিক” উৎপাদনের খবর সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছিল। IIT গুয়াহাটির একদল গবেষক বাশ থেকে নিজস্ব পদ্ধতিতে গবেষণা চালিয়ে এই ধরনের প্লাস্টিক তৈরি করেছেন। পচনশীল ক্যারিব্যাগের মতোই এই ধরনের প্লাস্টিক মাটি দূষণের বদলে মাটির সাথে মিশে গিয়ে মাটির উর্বরতা বাড়াতে সাহায্য করে। খুব শীঘ্রই বাশ থেকে তৈরি প্লাস্টিক বাণিজ্যিকভাবে হয়তো বাজারে আসলেও আসতে পারে। আবার শুকনো নারিকেলের ছিবড়ে রিসাইক্লিং এর মাধ্যমে প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদিও শুকনো নারিকেল থেকে তৈরি করা যেতেই পারে। অন্যদিকে কৃষিজাত উপজাত দ্রব্য যেমন লেমন গ্রাস, আখের ছিবড়ে, সাদা তুলোর অবশিষ্ট অংশ থেকেও প্লাস্টিক মুক্ত বিভিন্ন বস্তু যেমন আর্টবুক, গ্রিটিংস কার্ড, সৌখিন ব্যাগ,ইত্যাদি তৈরি করা যেতে পারে। এদিকে, প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে পাট জাত দ্রব্যাদিও দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কারণ পাট থেকে নির্মিত দ্রব্যাদি পচনশীল, পুন: নবীকরণযোগ্য, পুণ: ব্যবহারযোগ্য এবং সর্বোপরি দূষণমুক্ত। আবার বিভিন্ন আকারের বস্তুর প্যাকেজিং এর ক্ষেত্রে কার্ডবোর্ড প্লাস্টিকের উপযুক্ত বিকল্প হতে পারে। এটিও পুনঃব্যবহারযোগ্য ও পুনঃ নবীকরণযোগ্য। তথাপি ন্যূনতম উৎপাদন ব্যয় যুক্ত। পাশাপাশি কর্ক এবং ওক নামক এক ধরনের গাছ থেকে পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন সামগ্রী যেমন ওয়ালেট, যোগা মার্ট ইত্যাদি নানান ধরনের জিনিস তৈরি হয়ে থাকে। আবার বিভিন্ন বড় বড় রেস্তোরাঁ এবং দোকানে ইদানিং সময়ে প্লাস্টিকের মোড়ক বা অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের এর বদলে মোমের মোড়ক ব্যবহৃত হচ্ছে। যা একেবারে পরিবেশ বান্ধব। কারণ মোমের মোড়ক ল্যান্ড ফিলের ফলে সহজে মাটিতে বিয়োজিত হয়ে যায়। যদিও এটি এখনো যথেচ্ছ ভাবে চালু হয় নি। সবশেষে প্লাস্টিকের অন্যতম বিকল্প হিসেবে গঠনগত দিক থেকে বিভিন্ন ধরনের গাছের কাঠ বায়োপ্লাস্টিক হিসেবে ব্যবহার করা যেতেই পারে। কাঠ জৈব ভঙ্গুর। কাঠের আশ থেকেও দৈনন্দিন ব্যবহার্য নানা ধরনের জিনিস তৈরি করা যেতেই পারে। এতকিছু বিকল্প থাকা সত্বেও আমরা জেনে বুঝে এখনো দূষক প্লাস্টিক ব্যবহার করে চলেছি। চিন্তাভাবনার স্তর থেকে প্রয়োগের স্তরের মধ্যে এতটা পার্থক্য কেনো!!! স্বতঃস্ফূর্ত সদিচ্ছা এবং প্রকৃত সচেতনতার আজকে অতি প্রয়োজন। প্লাস্টিক চিরাচরিত ভাবে বন্ধের ক্ষেত্রে এসব সহনশীল সমাধানের মাধ্যমেই সকলকে এগিয়ে আসা বর্তমানে অতীব প্রয়োজন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct