নাজিম আক্তার, হরিশ্চন্দ্রপুর, আপনজন: মালদায় বন্যা ত্রাণের ৫৮ কোটি টাকা লুটের অভিযোগে হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তে আসছে ক্যাগ। ক্যাগ তদন্তে আসার আগেই বন্যাত্রাণ দুর্নীতিতে যুক্ততৃণমূল নেতা ও সরকারি আধিকারিকদের গ্ৰেফতারের দাবিতে এবার পথে নামল কংগ্রেস। হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে শুক্রবার সকাল ১১ টা নাগাদ মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর-২ নং ব্লকের মশালদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের কোরিয়ালি বাজারে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখালেন প্রায় পাঁচ শতাধিক কংগ্রেসের নেতা কর্মী। জানা গেছে,বন্যাত্রাণের ৫৮ কোটি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগে তদন্তভার দেওয়া হয়েছে ক্যাগ-কে। ২০১৭ সালে মালদহে বন্যাত্রাণের টাকা আত্মসাৎ হয়ে যাওয়ার অভিযোগে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন হরিশ্চন্দ্রপুরের প্রাক্তন বিধায়ক মোস্তাক আলম,কংগ্রেসের জেলা পরিষদের সদস্য আনেসুর রহমান ও হরিশ্চন্দ্রপুর-২ নং ব্লকের কংগ্রেসের সভাপতি আবুল কাসেম এবং বাম নেতা সেখ খলিল।সেই মামলায় ক্যাগকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট।মঙ্গলবার ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ,ওই টাকা কোথায় গেল,কী ভাবে খরচ হল,তার তদন্ত করে দেখবে ক্যাগ।৮ সপ্তাহের মধ্যে ওই বিষয়ে রিপোর্ট জমা দিতে হবে হাইকোর্টে। অভিযোগ,২০১৭ সালে বন্যায় মালদহের ১২ টি ব্লকের ১০২টি অঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল রাজ্য সরকার।সেই টাকা ক্ষতিগ্রস্তদের না দিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে পরবর্তীকালে। অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্তদের কাছেই ওই আর্থিক অনুদান পৌঁছয়নি বলে অভিযোগ।এই ইস্যুতেই কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন বাম কংগ্রেস।২০১৭ সালের বন্যায় মালদা জেলার মধ্যে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় হরিশ্চন্দ্রপুর-২ নং ব্লক।রাজ্য সরকার মালদা জেলায় ১২ টি ব্লকের ১০২ টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ঘরবাড়ি তৈরি করে দেওয়ার জন্য। হরিশ্চন্দ্রপুর-১ নং ব্লকে তিন দফায় ১৩ কোটি ও হরিশ্চন্দ্রপুর-২ নং ব্লকে ২০ কোটি টাকা দেয় রাজ্য সরকার।এই টাকা ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের আগে বিলি করা হয়।সেই তালিকা তৈরি করেন তৃণমুলের পঞ্চায়েত প্রধান ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিরা। সরকারিভাবে নির্দেশ ছিল সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্তদের ৭০ হাজার টাকা ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১৭ হাজার,১২ হাজার,১০ হাজার ও ৩৩ শো করে টাকা দেওয়ার কথা ছিল।পরে দেখা যায়,সেই টাকা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান,পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ এবং জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষরা নিজেদের আত্মীয় পরিজনদের মধ্যে বিলিয়ে দিয়েছেন। মঙ্গলবার ওই মামলায় আদালত নির্দেশ দিয়েছেন,ক্যাগ ওই অভিযোগের অনুসন্ধান করবে। প্রয়োজন হলে ক্যাগ যে কোনও সরকারি আধিকারিককে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে এবং এমনকি সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রও চাইতে পারে।আট সপ্তাহের মধ্যে তাদের হাইকোর্টে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।কোনও গলদ থাকলে আদালত সিবিআই তদন্তেরও নির্দেশ দিতে পারে বলে বেঞ্চ জানিয়েছে।মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে ১২ জুন। এই হরিশ্চন্দ্রপুরের বন্যার টাকা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন স্তরে অভিযোগ উঠেছে।বাম, কংগ্রেস প্রত্যেকেই সরব হয়েছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। প্রভাবশালী নেতা থেকে আধিকারিকদের পকেটে সেই টাকা গেছে বলে অভিযোগ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct